ভ্রমণ গাইড

সুন্দরবন ভ্রমণের সকল তথ্য (দর্শনীয় স্থান এবং ভ্রমণ গাইড)

বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা এবং ব্রহ্মপুত্র নদীর আববাহিকায় অবস্থিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় লবণাক্ত বনাঞ্চল হলো এই সুন্দরবন। বাংলাদেশে ও ভারতের ভিতের বিস্তৃত বনটির আয়তন প্রায় ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার এটি বাংলাদেশের অংশে রয়েছে ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার মতো। এই বৃহত্তম ঐতিহাসিক বনটি ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্বে ঐতিহ্যবাহী বনের স্বীকৃত পেয়েছিল। সুন্দরবনে যাওয়ার উপযোগী সময় হলো শীতের মৌসুমে। সুন্দরবনের সবচেয়ে গহীনে পৌঁছার জন্য নৌপথকে বেচে নিতে হয় ।

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান সমুহঃ

জামতলা সৈকত:
সুন্দরবনের ভিতরে কটকার নিকটবর্তী স্থানে অবস্থিত এই জামতলা। এই জামতলায় সৈকতে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার আছে। এই পর্যবেক্ষণ টাওয়ারটি হতে ছন্নছন্ন অঞ্চলে হাজার হাজার হরিণ দেখতে পাবেন আবার কিছু কিছু সময় এখান বাঘমামার (রয়েল বেঙ্গল টাইগার) দেখা পাওয়া যায়। আপনি চাইলে এই জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হতে কচিখালী সমুদ্র সৈকতের দিকে যেতে পারেন।

মান্দারবাড়িয়া সৈকতঃ

বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবনের রূপসী কন্যা নামে খ্যাত মান্দারবাড়িয়া সৈকত। সাতক্ষীরা জেলার হাড়িয়াভাঙ্গা নদীর উপকূলে অবস্থিত মান্দারবাড়িয়ায় বন। বঙ্গোপসাগরে উপকূল জুড়ে দেখার মতো বালুকাময় সৈকত এযেন প্রকৃতির অপার সৃষ্টি যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর হতে ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত এই মান্দারবাড়িয়া সৈকতটি।

হিরণ পয়েন্টঃ

সুন্দরবনের দক্ষিণাঞ্চলে কুঞ্জা নদীর তীরবর্তী স্থানে হিরণ পয়েন্টের অবস্থান।হিরণ পয়েন্টের অন্য আরেকটি নাম হলো নীলকমল যে নামটি ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃত। এই স্থানটিতে মানুষের চলাচল কম হওয়ার কারণে বানর, হরিণ ও বাঘসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণী সরীসৃপ ও পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।

হিরন পয়েন্টের কাঠের তৈরি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে দেখা মিলবে হরিণ, বাঘ, গুইসাপসহ নানা প্রজাতির বন্যপ্রাণীর সাথে।এই হিরন পয়েন্ট থেকে কিছুটা দূরত্বে (প্রায় ৩ কি. মি) একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে যেখান থেকে আপনি সুন্দরবনের কিছু অংশ দেখতে পাবেন ।

দুবলার চরঃ

দুবলার চর সুন্দরবনের একটি দ্বীপ। একটি সুন্দরবনের দক্ষিণ অংশে এবং হিরন পয়েন্টের দক্ষিণ পূর্ব অংশে অবস্থিত। এই দিনটি অধিক হরিণের জন্য সকলের কাছে বেশি পরিচিত। বর্ষার সময়ে এই দ্বীপটিতে জেলেরা ইলিশ মাছ ধরার জন্য এখানে তাবু তৈরি করে ৩-৪ মাসের জন্য থাকে।

হিন্দু ধর্মের লোকেদের জন্য এই দ্বীপটি বিখ্যাত কারণ প্রতি বছর এখানে রসমেলা ও পুণ্যস্নান হয়ে থাকে। এই রস মেলা চলাকালীন এখানকার সূর্য ওঠা দেখে ভক্তরা ফলগুলো সমুদ্রে ভাসিয়ে দিয়ে থাকে। দুবলার চরের এই রসমেলা বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ অংশ গ্রহণ আসে। লালবুক মাছরাঙ্গা পাখি ও মদনাটাক এই চরে ঘুরতে দেখা যায়।

কটকা বিচ সমুদ্র সৈকতঃ

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর ভিতরে কটকা বীজ সমুদ্র সৈকত হলো অন্যতম। মংলা থেকে এই সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। সুন্দরবনে নিরাপদে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পেতে হলে উনাকে যেতে হবে এই কটকা সমুদ্র সৈকতে । আপনি এখান থেকে নিশ্চিন্তে ও নিরাপদে বাঘ দেখতে পারবেন।

আপনি এখান থেকে আরো দেখতে পাবেন চিত্রা হরিণের দল, বিভিন্ন পাখি ও বনজ সব জীবজন্তু। কটকা সৈকটটিতে বাংলাদেশ বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউস রয়েছে। এই রেস্ট হাউস থেকে আপনি সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ গুলো দেখতে পাবেন এছাড়াও বনজ জীবজন্তু গুলো আপনার চোখে পড়বে।

করমজলঃ

সুন্দরবনের ভিতরে হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে ৩০ হেক্টর জমির উপরে বাংলাদেশ বন বিভাগের তথ্যাবধানে এই করমজল প্রজনন কেন্দ্রটি গড়ে উঠেছে। মংলা সমুদ্র বন্দর হতে করমজলের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার । ইঞ্জিন চালিত নৌকার মাধ্যমে দেড় ঘন্টা সময়ের ব্যবধানে মংলা হতে সুন্দরবনের করমজল পৌঁছানো যায়।

হার বাড়িয়াঃ

মংলা হতে হারবেড়িয়া দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটারের মতো। সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য ঘরবাড়িয়া অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। এখানে আপনি দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ ও ছোট ছোট খাল গুলোতে দেখতে পাবেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙ্গা পাখি। হাড়বাড়িয়ার এই খালগুলোতে দেখতে পাবেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বিপন্ন মাস্ক ফিনফুট বা কালোমুখ প্যারা পাখি।

কিভাবে যাবেন সুন্দরবনঃ

আপনি যদি সুন্দরবন ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক হন তাহলে সরাসরি খুলনা ও মংলা এই দুইটির যেকোনো একটি স্থানের উদ্দেশ্যে রওনা দিন। কারণ এই দুটি জায়গায় সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য বিখ্যাত।

ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সুন্দরবনঃ

আপনি যদি সরাসরি ঢাকা থেকে খুলনা হয়ে সুন্দরবন চান, তাহলে ঢাকার যেকোনো একটি বাস টার্মিনালে (গাবতলী, সায়েদাবাদ, গুলিস্থান) গিয়ে খুলনা গামী বাসের টিকিট করে খুলনা চলে যান। আপনি চাইলে ট্রেনের (সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা) মাধ্যমেও খুলনা যেতে পারবেন। খুলনা থেকে মংলা হয়ে সুন্দরবনের ভিতরে অনেক জাহাজ চলাচল করে। আপনি চাইলে জাহাজের মাধ্যমে সুন্দরবন যেতে পারবেন।

কোথায় থাকবেনঃ

আপনি যদি কোন ট্যুর এজেন্সির সাথে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান সেক্ষেত্রে থাকার ব্যবস্থা তারা নিজেরাই করে দিবে। আর যদি আপনি একা সুন্দরবন ভ্রমণ করেন তাহলে সুন্দরবনের ভিতরে বেশ কিছু রেস্ট হাউস রয়েছে সেগুলোতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

সুন্দরবনের ভিতরে অবস্থিত রেস্ট হাউজ গুলো হলঃ হিরণ পয়েন্টের নীলকমল রেস্ট হাউস, কটকাই বনবিভাগের রেস্ট হাউস । আপনি যদি সুন্দরবনের ভিতরে না থাকতে না চান তাহলে মংলা ও খুলনা শহরে ভালো মনের আবাসিক হোটেল রয়েছে চাইলে আবাসিক হোটেল গুলোতে থাকতে পারবেন।

সিলেট ভ্রমণের সকল তথ্য (দর্শনীয় স্থান এবং ভ্রমণ গাইড)
কুয়াকাটা কোন জেলায় অবস্থিত? (ভ্রমণের সকল তথ্য)

চাকরির নিয়োগ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো দিয়ে ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button