SSC | বাংলা ১ম পত্র

নবম-দশম শ্রেণী | বাংলা ১ম পত্র | নিয়তি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য বাংলা ১ম পত্র বইটি হতে হুমায়ন আহমেদের লেখা নিয়তি গল্পটি থেকে কিছূ প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে আজকের আয়োজন। প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা সম্পূর্ণ পোস্টটি মনোযোগ পড়ুন।

নিয়তি হুমায়ূন আহমেদ [১৯৪৮-২০১২]

অনুশীলনী

প্রশ্ন -১ গৃহপালিত পশুপাখি আমাদের যেসব উপকারে আসে তা লেখ ।

উত্তরঃ আমাদের গৃহে যেসব পশুপাখি বসবাস করে তাদেরকে গৃহপালিত পশুপাখি বলা হয়। এসব পশুপাখির মধ্যে রয়েছে গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, হাস-মুরগি, পায়রা, কুকুর ইত্যাদি। এসব পশুপাখি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা উপকার করে থাকে। গৃহপালিত পশুর মধ্যে গরু অন্যতম। গরু দিয়ে আমরা জমি চাষ করি। গরুর মাংস সুস্বাদু খাবার। গরুর চামড়া দিয়ে নানা ধরনের চামড়াজাতদ্রব্য উৎপন্ন করা হয়।

গরু পালন করে বর্তমান অনেকেই স্বাবলম্বি হয়েছেন। মহিষ দিয়ে জমি চাষসহ গাড়ি টানা হয়। মহিষের মাংসও আমরা খেয়ে থাকি। এর চামড়া দিয়ে বিভিন্ন চামড়াজাত জিনিস তৈরি করা হয়ে থাকে। ছাগল, ভেড়া, হাস-মুরগি, পায়রা আমাদের মাংসের চাহিদা পূরণ করে। তাছাড়া এখন এগুলো পালন করে এমের মহিলারা আত্মনির্ভরশীল। ছাগল ও ভেড়ার চামড়া দিয়ে নানা ধরনের চামড়াজাতদ্রব্য তৈরি করা হয় ৷

কুকুর হলো প্রভুভক্ত একটি প্রাণী। এদের আমরা তেমন যত্ন করি না। এরা নিজের খাবার নিজেই সংগ্রহ করে খায়। তবুও কুকুর আমদের নানা উপকার করে থাকে। কুকুর রাত জেগে আমাদের বাড়ি পাহারা দেয়। চোর যাতে চুরি করতে না পারে সেজন্য সারারাত জেগে জেগে সে প্রভুর বাড়ি পাহারা দেয়।

এমনকি কুকুর প্রভুর বাড়ির ছোট শিশুদের খেলারও সাথী । বাচ্চাদেরকে বিপদের হাত থেকে কুকুর নানাভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই আমাদের উচিত এসব গৃহপালিত পশুপাখির প্রতি যত্নশীল হওয়া। তাদের খাবার, বাসস্থান, রোগ প্রতিরোধের প্রতি আমাদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে, এরাও আমাদের পরিবারেরই সদস্য।

প্রশ্ন-২ গল্পে উল্লেখিত কুকুরটির মতো কোনো কুকুরের কর্মকাণ্ড তোমার জানা থাকলে তার বর্ণনা লেখে শিক্ষককে দেখাও ৷

উত্তরঃ ছোট্ট সংসার নিয়ে আকবর সাজিদ বেশ সুখে আছে। জমি-জমা, ঘর-বাড়ি, জিনিসপত্র নিয়ে বেশ সচ্ছল পরিবার তার। বড়লোক হলেও তার মনটা বেশ দয়ালু। তিনি মানুষকে ভালোবাসার পাশাপাশি পশু-পাখি কীটপতঙ্গকেও মমতা করেন। আকবর সাজিদের পাশের বাড়িটি আমাদের। তার ছেলের সঙ্গে ছোটবেলা থেকেই বন্ধুত্ব। ঐ বাড়িতে একটি কালো কুকুর ছিল কুকুরটির নাম বাড়ি টম।

বাড়ির বাইর তেমন একটা হতো না। বাড়ির লোকজন কুকুরটি খুব ভালোবাসতেন। ধরা যায় কুকুরটি ছিল তাদের বাড়ির একজন সদস্য। একদিন রাতে তাদের বাড়িতে ডাকাত দল আসে। আকবর সাজিদকে মেরে বাড়ির সবকিছু লুটপাট করে নিয়ে যাবে। দরজায় কড়া নাড়তেই কুকুরটি সজাগ। ঘেউ ঘেউ করতে করতে ডাকাত দলের সামনে গিয়ে হাজির।

এদিকে আকবর সাজিদও দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন কুকুরের ডাক শুনে । চা চামার। কোচ চি) কমি) শেখ মোক ডাকাত সর্দার আকবর সাজিদকে লক্ষ্য করে বন্দুক তাক করার সঙ্গে সঙ্গে কুকুরটি লাফ দিয়ে ডাকাত দলের হাত থেকে বন্দুকটি কামড়ে নিয়ে নিলো। এ মুহূর্তে আকবর সাজিদ বুঝতে পারল প্রাণে রক্ষা নেই। তাই তিনি সেখান থেকে পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে যান । ডাকাতরা আকবর সাজিদকে না পেয়ে রাগান্বিত হয়ে কুকুরটিকে বেদম প্রহার করে।

বেদম প্রহারে কুকুরটির বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত হওয়ায় কুকুরটি আর ওঠতে পারে না। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে কুকুরটি। ঠিকমত খেতে পারে না কুকুরটি। শুধু মালিককে দেখে চোখের পানি ফেলে। আকবর সাজিদ কুকুরটির যন্ত্রণা সইতে না পেরে শেষ পর্যন্ত গুলি করে মেরে ফেলেন। যে কুকুরটি আকবর গাজিদকে জীবন রক্ষা করলো সেই তিনিই আবার কুকুরটিকে গুলি করে মেরে ফেলল । একেই বলে নিয়তি।

নিয়তি গল্পের অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ০১ আলী আব্বাসের প্রিয় ঘোড়া দুলকি। এর নাম-ডাক বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই একে নিজের সম্পদে পরিণত করার আগ্রহ অনেকেরই আব্বাস একদা দুলকিকে নিয়ে শিকারে যায় গভীর বনে । এ সুযোগে দস্যুরা তাকে চারদিক দিয়ে ঘিরে ফেলে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সে দৌড়ে আসে দুলকির কাছে। মনিবের জীবন বাঁচাতে দুলকি তাকে নিয়ে জীবনশণ দৌড় শুরু করে। দস্যুরাও তার পেছনে ছুটে। গর্জে ওঠে তাদের বন্দুক। মনিবকে নিয়ে নিরাপদে ফিরে এলেও গুলিবিদ্ধ দুলকি অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে

ক. কোন জায়গায় লেখকের শৈশবের অদ্ভূত স্বপ্নময় দিনগুলো কেটেছে?
খ. ‘বাবা এই ভয়ংকর জায়গা থেকে বদলির জন্য চেষ্টা করছেন।’ জায়গাটিকে ভয়ংকর বলার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের দুলকি এবং ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগার-এর মধ্যকার সাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধরো।
ঘ.প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ থাকলেও উদ্দীপকের আলী আব্বাস ও ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের বাবার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

০১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. কোন জায়গায় লেখকের শৈশবের অদ্ভুত স্বপ্নময় দিনগুলো কেটেছে?

উত্তরঃ জগদলে লেখকের শৈশবের অদ্ভুত স্বপ্নময় দিনগুলো কেটেছে।

খ.‘বাবা এই ভয়ংকর জায়গা থেকে বদলির জন্য চেষ্টা করছেন।’ জায়গাটিকে ভয়ংকর বলার কারণ কী?

উত্তরঃ প্রাণঘাতি ম্যালেরিয়ার কবলে পড়ার ভয় থাকায় জায়গাটিকে ভয়ংকর বলা হয়েছে। লেখকের শৈশবে ম্যালেরিয়া ছিল জীবনঘাতি এক রোগের নাম। তখনকার সময়ে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই জগদলে থাকাকালীন এই রোগের প্রতিষেধক হিসেবে লেখকরা প্রতিদিনই নানা ধরনের ঔষধ খাচ্ছিলেন। তা সত্ত্বেও লেখকের
শরীরে ম্যালেরিয়ার লক্ষণ দেখা যাওয়ায় জায়গাটিকে ভয়ংকর বলা হয়েছে।

গ. উদ্দীপকের দুলকি এবং ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগার-এর মধ্যকার সাদৃশ্যের দিকটি তুলে ধরো।

উত্তরঃ আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রভুভক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দিক থেকে উদ্দীপকের দুলকি ও ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগারের মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে। আত্মত্যাগীরা সব সময় পরব্রতে ব্যাপ্ত থাকে। মানুষ ছাড়া বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যেও আত্মত্যাগের মহিমা প্রতিভাত হয়। তারাও নিজ জীবনের বিনিময়ে তার প্রভুকে বাঁচাতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এমনি প্রভুভক্ত দু’টি প্রাণী হলো উদ্দীপকের দুলকি ঘোড়া ও ‘নিয়তি গল্পের কুকুর।

‘নিয়তি’ গল্পের লেখক হুমায়ূন আহমেদের পরিবারের পোষা কুকুর ছিল বেঙ্গল টাইগার। কথকের ছোট ভাইকে বিষধর সাপের আক্রমণ থেকে বাঁচাতে গিয়ে সাপের কামড়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে পরবর্তীতে মৃত্যুবরণ করে কুকুরটি। উদ্দীপকের আলী আব্বাস তার প্রিয় ঘোড়া দুলকিকে নিয়ে গভীর বনে শিকারে যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানে দস্যুরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে।

নিরুপায় হয়ে জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে আলী আব্বাস ছুটে আসে দুলকির কাছে। দুলকি অসীম সাহসিকতায় মনিবকে নিয়ে নিরাপদ স্থানে ছুটে যায়। এতে করে আলী আব্বাসের জীবন রক্ষা পেলেও দস্যুদের গুলিতে আহত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে প্রভুভক্ত ঘোড়া দুলকি।

‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগারের মতোই প্রভুভক্তির কারণে আত্মবিসর্জন দেয় সে। অর্থাৎ উদ্দীপকের দুলকি এবং বেঙ্গল টাইগার উভয়ই প্রভুভক্তি ও আত্মত্যাগের অতুলনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটিই দুলকি ও বেঙ্গল টাইগারের মধ্যকার সাদৃশ্যপূর্ণ দিক।

ঘ. প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ থাকলেও উদ্দীপকের আলী আব্বাস ও ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের বাবার দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন।’- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ উদ্দীপকের আলী আব্বাস ও ‘নিয়তি’ গল্পের কথকের বাবা প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হলেও প্রেক্ষাপটগত স্বাতন্ত্রের কারণে তাঁদের আচরণিক পার্থক্য লক্ষ করা যায় ৷

উদ্দীপকের দুলকি এবং ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগার উভয়েই প্রভুভক্তির অনন্য নিদর্শন। উদ্দীপকের দুলকি দস্যুর গুলিতে মৃত্যুবরণ করলেও গল্পের বেঙ্গল টাইগারের মৃত্যু হয় মনিবের গুলিতেই। উভয়ক্ষেত্রে পোষ্য প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে আলোচ্য চরিত্রদ্বয়ের ভিন্ন আচরণিক পরিচয় পাওয়া যায় ।

উদ্দীপকের আলী আব্বাস তার প্রিয় ঘোড়া দুলকির প্রতি আন্তরিক। মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েও সে প্রিয় ঘোড়াটির কথা ভুলেনি। তার এ ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে মনিবকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যুকে বরণ করে নেয় দুলকি। অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে পরিস্থিতির কারণে প্রিয় পোষা কুকুর বেঙ্গল টাইগারকে হত্যা করতে বাধ্য হন কথকের বাবা।

সাপের বিষে আক্রান্ত হয়ে তিলে তিলে দুঃখময় মৃত্যুর চেয়ে বন্দুকের গুলিতে তাৎক্ষণিক মৃত্যুই কুকুরটির জন্য শ্রেয় বলে মনে করেন তিনি ।উদ্দীপকের আলী আব্বাস তার প্রিয় ঘোড়াটির প্রতি স্নেহশীল হলেও নিজের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে ঘোড়াটিকে নিজের বিপদের সাথী করে নেন।

অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে কথকের বাবা যন্ত্রণাকাতর পোষা কুকুরটিকে গুলি করেন কুকুরটির প্রতি সহানুভূতির কারণেই। গল্পে কথকের বাবার ক্ষেত্রে আবেগকে জয় করে নিয়তিকে মেনে নেয়ার যে প্রয়াস লক্ষিত হয় উদ্দীপকের আলী আব্বাসের আচরণে তা দেখা যায় না। সে দিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।

অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ০২ আলী আব্বাসের প্রিয় ঘোড়া দুলকি। এর নাম ডাক বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই একে নিজের সম্পদে পরিণত করার আগ্রহ অনেকেরই। আব্বাস একদা দুলকিকে নিয়ে শিকারে যায় গভীর বনে। এ সুযোগে দস্যুরা তাকে চারদিকে ঘিরে ফেলে । মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও সে দৌড়ে আসে দুলকির কাছে। মনিবের জীবন বাঁচাতে দুলকি তাকে নিয়ে জীবনপণ দৌড় শুরু করে। দস্যুরাও তার পেছনে ছুটে। গর্জে ওঠে তাদের বন্ধুক । মনিবকে নিয়ে নিরাপদে ফিরে এলেও গুলিবদ্ধ দুলকি অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

ক. ‘তক্ষক’ শব্দের অর্থ কী? [বাকাশিবো- ২০১৯] খ. ‘কুকুরটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল’—ব্যাখ্যা করো। [বাকাশিবো—২০১৯] গ. ‘মনিবের জীবন বাঁচলেও দুলকি এবং বেঙ্গল টাইগারের নিয়তি এক নয়’–তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।
ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে’-মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।
০২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. ‘তক্ষক’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তরঃ ‘তক্ষক’ শব্দের অর্থ এক ধরনের বিষধর সাপ।

খ. ‘কুকুরটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল’—ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ শৈশবে প্রিয় কুকুরটির বেদনাদায়ক মৃত্যু লেখকের মনে গভীরভাবে দাগ কাটে—প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা সে কথাই বোঝানো হয়েছে। লেখকরা জগদলে থাকাকালীন একদিন লেখকের ছোট ভাই শাহিনকে সাপের ছোবল থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তাঁদের প্রিয় পোষা কুকুরটি সাপের কামড় খায়।

সাপের বিষাক্ত বিষক্রিয়ায় কুকুরটির দেহ পচে গলে যাচ্ছিল, দেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। কুকুরটি যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছিল। লেখকের বাবা কুকুরটির দুর্গন্ধ সহ্য করতে না পেরে তাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে গুলি করে হত্যা করে। বেঙ্গল টাইগার নামে এই কুকুরটির এই নিয়তি লেখকের মনে গভীর বেদনার সঞ্চার করে, যা লেখক ভুলতে পারেন নি।

গ. মনিবের জীবন বাঁচলেও দুলকি এবং বেঙ্গল টাইগারের নিয়তি এক নয়’–তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

ঘটনার ধরণ ও পরিণতির সূত্রে মনিবের জীবন বাঁচালেও দুলকি এবং বেঙ্গল টাইগারের নিয়তি এক নয়।পোষা প্রাণীরা কখনো কখনো মানুষের পরম বন্ধু হয়ে ওঠে। মনিবের জীবন বাঁচাতে তাই তারা নিজের জীবন বিপন্ন করতেও প্রস্তুত থাকে। এমনিভাবে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে প্রাণরক্ষা করেছেন উদ্দীপকের দুলকি ও ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগার নামক কুকুরটি।

উদ্দীপকে দেখা যায়, আলী আব্বাস তার প্রিয় ঘোড়া দুলকিকে নিয়ে গভীর বনে শিকারে যায়। দুর্ভাগ্যক্রমে সেখানে দস্যুরা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। নিরূপায় হয়ে জীবন বাঁচানোর শেষ চেষ্টা হিসেবে আলী আব্বাস ছুটে আসে দুলকির কাছে। দুলকি অসীম সাহসিকতায় মালিককে নিয়ে নিরাপদ স্থলে ছুটে যায়। এতে করে আলী আব্বাসের জীবন রক্ষা পেলেও দস্যুদের গুলিতে আহত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে প্রভুভক্ত ঘোড়া দুলকি।

আলোচ্য ‘নিয়তি’ গল্পেও এমন ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। যেখানে লেখকের ছোট ভাই শাহীনের জীবন রক্ষা করতে গিয়ে লেখকের প্রিয় কুকুর বেঙ্গল টাইগার বিষধর সাপের কামড় খায়। সাপের বিষক্রিয়ায় কুকুর দেহ পচে গলে যাচ্ছিল এবং প্রচণ্ড দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছিল কুকুরটি।

লেখকের বাবা কুকুরটির যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে তাকে গুলি করে হত্যা করেন। ঘটনা এবং পরিণতির সূত্রে দেখা যায়, দুলকির জীবন নিয়েছে ‘দস্যুরা, কিন্তু ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগারের জীবন গেছে লেখকের বাবার গুলিতে। তাই ঘটনা একই ধরনের হলেও দুলকি এবং কুকুরটির নিয়তি ভিন্ন ।

ঘ. ‘উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে’-মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো ।

উত্তরঃ‘উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে’- মন্তব্যটি যথার্থ ।নিয়তি’ গল্পের লেখকেরা জগদলের এক রাজবাড়িতে অবস্থানকালীন সে বাড়ির কুকুরটির সঙ্গে তাদের সখ্যতা তৈরি হয়। লেখকের মা কুকুরটিকে প্রতিদিন খাবার দিতেন। প্রতিষ্ঠানে কুকুরটি নিজের জীবন বিপন্ন করে লেখকের ভাইয়ের প্রাণ বাঁচায়। আলোচ্য উদ্দীপকেও পোষা প্রাণীর এমনি আত্মত্যাগ দেখা যায় ।

উদ্দীপকে আলী আব্বাসের প্রতি তার প্রিয় ঘোড়া দুলকির প্রভুভক্তির দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। আলী আব্বাস তার প্রিয় ঘোড়া দুলকিকে নিয়ে গভীর বনে শিকারে যায়। সেখানে দস্যুরা তাকে আক্রমণ করলে মনিবের জীবন বাঁচাতে দুলকি তাকে নিয়ে প্রাণপণ দৌড় দেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা যায়, দুলকি মনিবকে বাঁচাতে পারলেও দস্যুদের গুলির নির্মম আঘাতে অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

‘নিয়তি’ গল্পেও এমন ঘটনার ছায়াপাত ঘটলেও সেখানে এছাড়া আরও নানা বিষয় উঠে এসেছে। ‘নিয়তি’ গল্পে পোষা প্রাণীর প্রতি লেখকের পরিবারের সহানুভূতি এবং মমত্ববোধের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। তাদের পোষা কুকুর বেঙ্গল টাইগার প্রাণ বিপন্ন করে তাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে। পাশাপাশি এ গল্পে জগদলের রাজবাড়িরও সে অঞ্চলের মনোজ্ঞ প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনা রয়েছে।

সেকালের চিকিৎসা ব্যবস্থা, লেখকের পারিবারিক ঘটনা এবং মহারাজার রুচি ও কীর্তি রচনার অন্যতম দিক। উদ্দীপকের স্বল্প পরিসরে এসব দিক আলোচিত হয় নি। সেখানে গল্পের একটি দিক মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের বিষয়টিই কেবল উঠে এসেছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ

প্রশ্ন ০৩ আয়ান আট বছরের ছেলে। কিছুদিন হলো আয়ানের মা একটি ছাগল কিনেছে। শখ করে ছাগলটির নাম রাখা হয়েছে সখি । অল্প কিছুদিনের মধ্যে আয়ানের সাথে সখির বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে। আয়ান প্রতিদিন ওকে খেতে দেয়। আয়ান যেখানে বসে খেলা করে সখিও সেখানে গিয়ে বসে থাকে। সময়ের চলমানতায় কোরবানির ঈদ চলে আসে। সখিকে কোরবানি দেয়া হলো। আয়ান ভীষণ কষ্ট পেল এবং বাড়ির সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিল।

ক. ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের নাম কী?
খ. লেখকের জগদলের দিনগুলো আনন্দময় হবার কারণ কী?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘নিয়তি’ গল্পের সাদৃশ্য নিরূপণ করো।
ঘ. “আয়ানের মনোবেদনা আর লেখকের হৃদয় বেদনার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।”- “নিয়তি’ গল্পের আলোকে বিচার করো।

০৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. “নিয়তি’ গল্পের লেখকের নাম কী?

উত্তরঃ ‘নিয়াতি’ গল্পের লেখকের নাম নন্দিত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ।

খ. লেখকের জগদলের দিনগুলো আনন্দময় হবার কারণ কী?

উত্তরঃ জগদলে লেখকের কাটানো দিনগুলো আনন্দময় হবার কারণ সেখানে কোনো স্কুল ছিল না। লেখক জগদলে থাকার সময় সেখানে কোনো স্কুল ছিল না। তাই কিশোর মনে পড়াশোনার ঝামেলা একেবারে ছিল না। এছাড়া লেখক তাঁর বাবার সাথে প্রতিদিন বিকেলে বনের পথে ঘুরতে বের হতেন। চিতা বাঘের ভয়ে এ সময় লেখকের বাবার সাথে গুলি ভ বন্দুক থাকতো। তাছাড়া স্কুল না থাকায় স্কুলের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি এবং পড়াশোনারও যন্ত্রণা না থাকায় লেখকের মুক্তির মহানাদ ছিল।

গ. উদ্দীপকের সাথে “নিয়তি’ গল্পের সাদৃশ্য নিরূপণ করো।

উত্তরঃ পোষা প্রাণীর প্রতি অপরিসীম মমতার দিক হতে উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পটি সাদৃশ্যপূর্ণ। এমন অনেক মানবেতর প্রাণী আছে যারা জীবন দিয়ে হলেও প্রভুর উপকার করে থাকে। আবার কিছু সহানুভূতিশীল মানুষ আছেন যারা এসব উপকারী প্রাণীকে স্নেহ ছায়ায় লালন পালন করে থাকেন। উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের ঘটনাবর্তে তারই দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা দুটির মধ্যে অন্তলীন হয়ে আছে মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও সহানুভূতি।

উদ্দীপকে আট বছরের ছেলে আয়ানের পোষ প্রাণী ছাগলের প্রতি মমত্ববোধ ও সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। মায়ের জয় করা ছাগলের সাথে তার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই গভীর সখ্যতা তৈরি হয়। আয়ান প্রতিদিন ছাগলটিকে খেতে দেয়। কিন্তু সময়ের চলমানতায় কোরবানির ঈদে যখন তার বাড়ির লোকজন ছাগলটিকে কোরবানি দেয় তখন সে ভীষণ কষ্ট পায় এবং বাড়ির সবার সঙ্গে সে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।

পোষা প্রাণীর প্রতি এমনি গভীর মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের লেখকের ছোট ভাই শাহীনকে রক্ষা করার জন্য তাদের পোষা রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামক কুকুরটি কেউটে সাপের কামড় যায়। বিষক্রিয়ার ফলে কুকুরটির দিনে দিনে ক্ষত সৃষ্টি হয় এবং কুকুরটি যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে। লেখকের বাবা কুকুরটির এই যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কুকুরটিকে মুক্তি দিতে গুলি করে মারেন। এই ঘটনায় লেখক ভীষণ কষ্ট পায়। তাই পোষা প্রাণীর প্রতি মমত্ব ও সহানুভূতির দিক হতে উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. “আয়ানের মনোবেদনা আর লেখকের হৃদয় বেদনার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।”- ‘নিয়তি’ গল্পের আলোকে বিচার করো। [বাকাশিবো-২০১

উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ। পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রাণীর অস্তিত্ব জরুরি। কিন্তু মানুষের স্বার্থবাদী আচরণে প্রাণী বৈচিত্র্য আজ হুমুকির সম্মুখীন। আজ মানুষ নিজের অস্তিত্বের জন্যই সারা বিশ্বে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সোচ্চার হচ্ছে। যার কৃৎ কৌশল ‘নিয়তি’ গল্পটি। এ গল্পের অন্তরালে প্রাণীর প্রতি মানুষের মমত্ববোধ, প্রীতি আর সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।

উদ্দীপকে দেখা যায় আট বছরের কিশোর আয়ানের পোষা প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা ও দরদ। যা কোরবানির পশু হিসেবে একটি ছাগল কিনে আনলে কিছুদিনের মধ্যে ছাগলের সাথে আয়ানের গভীর বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়ে যায়। সে ভীষণ কষ্ট পায়, যখন ছাগলটি কোরবানি করা হয়। তার পোষা প্রাণীর জন্য সে এতটাই মর্মাহত যে ছাগলের চলে যাবার সাথে সাথে আয়ান বাড়ির লোকজনের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।

ঠিক এমনি হৃদয়বেদনা লক্ষ্য করা যায় ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের মধ্যে। লেখকের বাসায় একটি পোষা কুকুর ছিল। কুকুরটি ছিল লেখকের শৈশবের খেলার সাথী। কিন্তু তার এত শখের কুকুরটি যখন তাঁর বাবা গুলি করে হত্যা করে তখন লেখক খুবই কষ্ট পান। পোষা কুকুরটির জন্য লেখক নিভৃতে চোখের জলও ফেলেন

‘নিয়তি’ গল্পের লেখক তাঁর পোষা কুকুরটির জন্য খুবই মর্মাহত হয়েছেন। কুকুরকে লেখক নিজ হাতে খাওয়াতেন। যে কুকর ছিল লেখকের খেলার নিত্য সঙ্গী সেই তার নিয়তির জন্য একদিন লেখককে ছেড়ে চলে যাবে তা লেখক কখনো ভাবেন নি। কিন্তু কুকুরটিকে যখন লেখকের বাবা গুলি করে মেরে ফেলেন তখন লেখক পোষা কুকুরটির জন্য ভীষণ কষ্ট পান। তাঁর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ শুরু হয়।

পোষা প্রাণীর প্রতি এমনি গভীর মমত্ববোধ আর ভালোবাসা সৃষ্টি হয় উদ্দীপকের আয়ানের ভেতর। সেও মনে কষ্ট পায় যখন তার পোষা ছাগলটি তার পরিবার কোরবানি করে। সুতরাং বলা যায় যে, পোষা মানবেতর প্রাণীর প্রতি গভীর মমত্ববোধের দিক হতে আয়ানের মনোবেদনা আর লেখকের হৃদয় বেদনার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

প্রশ্ন ৪ শাহজাহান সাজু সাম্প্রতিককালের একজন তরুণ লেখক। তাঁর বাবা ছিলেন সরকারি চাকরিজীবী। সেই সূত্রে তিনি বদলি হয়ে আসেন আদিতমারীতে। এখানেই শাহাজাহান সাজুর শৈশবের দিনগুলো কাটে। আদিতমারীর শিক্ষা, সংস্কৃতি আর প্রাকৃতিক জীবন্ত হয়ে ফুটে ওঠে 1 পরিবেশ ছিল অসাধারণ। এই আদিতমারীতে অবস্থানকালীন শাহজাহান সাজুর জীবন অভিজ্ঞতা, স্মৃতি ও অনুভূতিগুলো তাঁর লেখার

ক. জগদলে ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের কোন সময়ের অদ্ভূত স্বপ্নময় কিছুদিন কেটেছে?
খ. ‘মুক্তি মহানন্দ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীট কোন দিক থেকে ‘নিয়তি’ গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ তা আলোচনা করো।
ঘ. শৈশবের উজ্জ্বল স্মৃতি নানাভাবে জীবনকে প্রভাবিত করে।’—উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।

০৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. জগদলে ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের কোন সময়ের অদ্ভূত স্বপ্নময় কিছুদিন কেটেছে?

উত্তরঃ জগদলে ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের শৈশবের অদ্ভুত স্বপ্নময় কিছুদিন কেটেছে।

খ. ‘মুক্তির মহানন্দ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ শৈশবে জগদলে থাকাকালীন স্কুল আর পড়াশোনার যন্ত্রণা থেকে যে কিছু সময়ের জন্য অব্যাহতি পেয়েছিলেন তাকেই লেখক ‘মুক্তির মহানন্দ’ বলেছেন। লেখকের শৈশবের অদ্ভুত স্বপ্নময় কিছুদিন কেটেছিল জগদলে। জগদলের দিনগুলো আনন্দময় হবার অনেক কারণ ছিল। তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো সেখানে স্কুল ছিল না। তাই নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আর পড়াশোনার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি। এই মুক্তিকেই মুক্তির মহাআনন্দ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন লেখক।

গ. উদ্দীপকটি কোন দিক থেকে ‘নিয়তি’ গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ তা আলোচনা করো ।

উত্তরঃ শৈশব স্মৃতির নানা স্বপ্নময় দিনগুলোর দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। মানবজীবনে শৈশব বিশেষ একটি অধ্যায়। শৈশবের আবেগ, অনুভূতি আর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই অনেক মানুষের জীবনদর্শন তৈরি হয় । ভবিষ্যতে মানুষের মনে জ্বল জ্বল করতে থাকে শৈশবের মিশ্র গঠন, আবেগ ও অনুভূতিগুলো।

সমগ্র জীবনেই শৈশবস্মৃতি অক্ষয় হয়ে থাকে। তাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও বারবার উঁকি দেয় সেসব স্মৃতি; যা উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পে ফুটে উঠেছে। উদ্দীপকের শাহজাহান সাজুর শৈশবের দিনগুলো কাটে আদিতমারীতে। সেখানকার প্রকৃতির স্নেহছায়ায় নিজেকে আবিষ্কার করেন তিনি। হাতেখড়ি হয় লেখালেখির। তাই বাবা বদলি হলেও তিনি থেকে যান সেখানে। পরবর্তীতে আদিতমারীর শৈশবের স্মৃতি, অনুভূতি আর অভিজ্ঞতাগুলোই তাঁর লেখায় শিল্পরূপ লাভ করে।

অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পের কথকের শৈশবের অদ্ভূত স্বপ্নময় কিছুদিন কেটেছিল জগদলে। স্কুল ছিল না বলে জগদলের দিনগুলো ছিল পড়াশোনার যন্ত্রণা থেকে মুক্ত। কিন্তু সে এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছিল বেশি। এ কারণে কথকের বাবা এই ভয়ংকর জায়গা থেকে বদলির চেষ্টা-তদবির করছিলেন।

বিষয়টি জানতে পেরে ব্যথিত হন কথক। কেননা জগদলের মতো সুন্দর জায়গা ও চমৎকার জীবন ছেড়ে যেতে চাচ্ছিলেন না তিনি। তাই বলা যায়, শৈশবস্মৃতির প্রভাবের দিক থেকে উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পটি সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. ‘শৈশবের উজ্জ্বল স্মৃতি নানাভাবে জীবনকে প্রভাবিত করে’—উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো ।

উত্তরঃ শৈশবের উজ্জ্বল স্মৃতি নানাভাবে জীবনকে প্রভাবিত করে’ উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের আলোকে আলোচ্য মন্তব্যটি যৌক্তিক । শৈশব মানুষের জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। জীবন বিকাশের এই অধ্যায়টিকে মানুষ অস্বীকার করতে পারে না। কেননা বেশিরভাগ মানুষের জীবনানুভূতি ও জীবনদর্শন এ পর্বেই তৈরি হয়।

সৃজনশীল ব্যক্তির ক্ষেত্রে শৈশবের স্মৃতি ও অনুভূতিগুলো তাদের সৃষ্টিকর্মে হৃদয়গ্রাহী হয়ে ফুটে ওঠে যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্প । উদ্দীপকে বাংলাদেশের একজন তরুণ চিন্তাশীল লেখক শাহজাহান সাজুর জীবনাভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

চাকরিসূত্রে তাঁর বাবা আদিতমারীতে বদলি হয়ে আসলে সেখানেই তাঁর শৈশবের দিনগুলো কাটে। আদিতমারীর শিক্ষা, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক পরিবেশে তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি হয় বলে এ দিনগুলোর কথা তিনি কখনো ভুলতে পারেন নি। পরবর্তীতে শৈশবের এ দিনগুলোই তাঁর লেখায় জীবন্ত হয়ে ওঠে। ‘নিয়তি’ গল্পের কথকের শৈশবের স্বপ্নময় কিছুদিন জগদলে কেটেছিল। সেখানে লেখকের দিনগুলো একইসঙ্গে ছিল আনন্দময় আবার বেদনায় সিক্ত।

কেননা কথকের ভাইয়ের জীবনরক্ষাকারী বেঙ্গল টাইগারকে যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তিদানের জন্য তাঁর বাবা কুকুরটিকে গুলি করে হত্যা করেন। এই ব্যাপারটি কথকের মনে গভীরে ছাপ ফেলেছিল। তারই হৃদয়গ্রাহী বর্ণনা রয়েছে ‘নিয়তি’ গল্পে ।
উদ্দীপকের শাহজাহান সাজুর মতো ‘নিয়তি’ গল্পের কথকও তার শৈশবের স্মৃতি এবং অনুভূতিগুলোকে তাঁর সৃষ্টিকর্মে তুলে ধরেছেন।

প্রকৃতপক্ষে কোনো মানুষই শৈশবের আনন্দময় দিনগুলো ভুলতে পারে না। কর্মব্যস্ত জীবনে ফেলে আসা দিনগুলোই মানুষকে উজ্জীবিত রাখে, যেমনটি, ‘নিয়তি’ গল্পের কথক ও উদ্দীপকের শাহজাহান সাজুর ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।

প্রশ্ন ৫ একসময় দিনাজপুরের ঘুঘুডাঙা জমিদারের হাতিশালে ছিল হাতি আর ঘোড়াশালে ছিল ঘোড়া। কিন্তু জমিদার ছিল নিষ্ঠুর, অত্যাচারী। আজও সেই কালের সাক্ষী বৃদ্ধরা তার বর্বরতার স্মৃতিতে শিউরে ওঠেন। তবে জমিদারির সেই জৌলুস আজ নেই । পুরোনো বিশাল বাড়িটি পরিত্যক্ত। কোথাও রুচির পরিচয় মেলে না। মনে হয় ইট-সুরকির ঢিবি। কেউ বসবাস তো দূরের কথা পারতপক্ষে ঐদিক কেউ মাড়ায় না। জমিদার প্রজন্ম আজ নিঃস্ব ।

ক. মহারাজার বাড়ির ইলেকট্রিসিটির উৎস কী ছিল?
খ. লেখকের কাছে মহারাজাকে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী বলে মনে হলো কেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের জমিদার বাড়ির পার্থক্য নির্ণয় করো।
ঘ. উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের সমগ্রভাব প্রকাশ পেয়েছে কি? মতামত দাও।

০৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. মহারাজার বাড়ির ইলেকট্রিসিটির উৎস কী ছিল?

উত্তরঃ মহারাজার বাড়ির ইলেকট্রিসিটির উৎস ছিল জেনারেটর।

খ. লেখকের কাছে মহারাজাকে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী বলে মনে হলো কেন?

উত্তরঃ রাজবাড়িতে মহারাজার ক্ষমতার নানা ধরনের প্রমাণ উপস্থিত থাকায় লেখকের কাছে মহারাজাকে অত্যন্ত ক্ষমতাশালী বলে মনে হলো। মহারাজার বসতবাড়িটি ছিল প্রকাণ্ড। সে বাড়িতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল নানা আধুনিক ব্যবস্থা। জঙ্গলের ভেতর বাড়িটি অবস্থিত হলেও বিদ্যুতের ব্যবস্থাপনার জন্য ছিল নিজস্ব জেনারেটর। দাওয়াতের চিঠি ছাপানোর জন্য মিনি সাইজের একটি ছাপাখানাও ছিল। এগুলো দেখেই লেখকের মনে মহারাজা বিশাল ক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা জন্মায় ।

গ. উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের জমিদার বাড়ির পার্থক্য নির্ণয় করো।

উত্তরঃ দিনাজপুরের ঘুঘুডাঙার জমিদার বাড়ি ও জগদলের জমিদারের বাড়ির মধ্যে শৈলী ও রুচিগত পার্থক্য বিদ্যমান।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মাধ্যমেই বাংলাদেশে জমিদারি প্রথা পাকাপোক্তভাবে গেড়ে বসেছিল। এর ফলে জমিদারদের বাড়িতে বাং জৌলুস, নির্মিত হতে থাকে বিশাল বিশাল সব বিলাসবহুল বাড়ি। কিছু জমিদার বাড়ির মধ্যে বিশেষ শৈলী ও রুচির ছাপ পরিলক্ষিত হয়।

বাকিগুলোকে মনে হয় শুধুই ইট-সুরকির ঢিবি। এ বিষয়টির পার্থক্য উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পে দৃশ্যমান। উদ্দীপকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফসল হিসাবে দিনাজপুরের ঘুঘুডাঙার জমিদারির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে একসময় হাতিশালে হাতি ছিল, ঘোড়াশালে ঘোড়া। ছিল বিশাল বসতবাড়ি। কিন্তু বাড়িটির কোথাও রুচির পরিচয় মেলে না। মনে হয় ইট- সুরকির ঢিবি। আজ সে পতিত বাড়িতে কেউ বসবাস করতে চায় না।

এমনকি পারতপক্ষে কেউ সেদিকে পা মাড়ায় না। বরং কেউ গেলেও অর্তত বর্বরতার কথা ভেবে ঘৃণা প্রকাশ করে। অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে উল্লিখিত জগদলের মহারাজার বসতবাড়িটিও পতিত। ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির প্রমাণ হিসেবে সে বাড়িতে এখনো রয়ে গেছে জেনারেটর আর দাওয়াতের চিঠি ছাপানোর মিনি সাইজের ছাপাখানা।

ক্ষমতার পাশাপাশি মহারাজার ছিল মুগ্ধ হবার মতো রুচিবোধ। তাঁর সংগ্রহে ছিল বিচিত্র রকম বই যা ঘুঘুডাঙার জমিদার বাড়িতে দেখা যায় না। এদিক থেকে উদ্দীপকের ঘুঘুডাঙার জমিদার বাড়ির সাথে ‘নিয়তি’ গল্পে উল্লিখিত জমিদার বাড়িটির পার্থক্য প্রতীয়মান হয় ।

ঘ. উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের সমগ্রভাব প্রকাশ পেয়েছে কি? মতামত দাও ৷

উত্তরঃ উদ্দীপকে বর্ণিত দিকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সমগ্রভাবকে প্রকাশ করতে পারে নি । পশুপাখির প্রতি মায়া-মমতা ও সহনশীলতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। কিছু কিছু মানুষ আছেন যারা পোষা প্রাণীকে না খাইয়ে নিজে আহার করেন না। মনিবের প্রতিদান জীবন দিয়ে হলেও প্রাণীরা দিয়ে যায়। যা ‘নিয়তি’ গল্পের পোষা কুকুরের প্রতি মনিবের আচরণে প্রকাশ পেয়েছে।

‘নিয়তি’ গল্পে লেখক তাঁর শৈশবের কিছু অভিজ্ঞতার বর্ণনা তুলে ধরেছেন। জগদল নামক স্থানটিতে তাঁর অসম্ভব সুন্দর কিছু দিন কেটেছিল। সেখানে এক মহারাজার পরিত্যক্ত বসতবাড়িতে তাঁদের থাকার জায়গা হয়। বাড়িটির চারপাশে ছিল জঙ্গল। মহারাজার চমৎকার সেই বাড়ি আর জঙ্গল দেখার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বর্ণিত হয়েছে গল্পে। এখানে থাকাকালে জমিদার বাড়ির পোষা কুকুর বেঙ্গল টাইগারের সাথে সখ্য গড়ে ওঠে লেখক পরিবারের।

ঘটনাচক্রে কুকুরটি বিষধর সাপের সাথে লড়াই করে লেখকের ছোট ভাইয়ের জীবন রক্ষা করে। কিন্তু সাপের বিষক্রিয়ায় নিজে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়। কুকরটিকে তীব্র যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে লেখকের বাবা গুলি করে সেটিকে হত্যা করেন। উদ্দীপকে আমরা দিনাজপুরের এক জমিদারবাড়ির কথা জানতে পারি ।

এককালে সমৃদ্ধ হলেও বর্তমানে বাড়িটির ভগ্নদশা। জনমানবহীন বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ‘নিয়তি’ গল্পে বর্ণিত মহারাজা তাঁর বাড়ি ছেড়ে ইন্ডিয়া চলে গেলে তাঁর বাড়িটিও পরিত্যক্ত হয়। এ দিকটি উদ্দীপক ও গল্প উভয়ের ক্ষেত্রে সাদৃশ্যপূর্ণ।

‘নিয়তি’ গল্পে লেখক অনেকগুলো অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। এর ভেতর কেবল তাঁর রাজবাড়ি সংক্রান্ত বর্ণনাই উদ্দীপকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কিন্তু গল্পে প্রকাশিত শৈশবের আনন্দঘন দিন কাটানোর কথা, ম্যালেরিয়া রোগ সম্পর্কে লেখকের অনুভূতি, প্রভুভক্ত কুকুরের নিয়তির নিষ্ঠুরতার শিকার হওয়া ইত্যাদি দিক উদ্দীপকে অনুপস্থিত।

তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সমগ্রভাবের প্রকাশক নয়। এটি কেবল গল্পে খণ্ডিত একটি ভাবকেই ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।

প্রশ্ন ০৬ জগুদের টাটু নামক একটি ঘোড়া ছিল। হঠাৎ টাটু পাগলাটে আচরণ শুরু করে । জগু এক সন্ধ্যায় টাটুর পিছে চড়ে বসে। টাটু জগুকে নিয়ে ছুটতে শুরু করে। ছুটতে ছুটতে অনেক দূরে এক গোরস্থানে এসে উপনীত হলে ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে যায় জগু ৷ জ্ঞান হারায় সে। অন্ধকার রাত। মৃত ভেবে শিয়ালের দল জগুর দিকে তেড়ে আসতে থাকে। টাটু প্রাণপণে লড়াই করে জগুতে শিয়ালের হাত থেকে রক্ষা করে। পরে তার বাবা দলবল নিয়ে এসে জগুকে অচেতন অবস্থায় দেখে টাটুকে গুলি করে হত্যা করে। সুস্থ হয়ে জগু বাবার কাছে টাটুকে হত্যা করার কারণ জানতে চাইলে- বাবা মুখ ঘুরিয়ে নেন।

ক. মহারাজার পালিত কুকুরটির নাম কী?
খ. মহারাজার পালিত কুকুরটিকে খানদানি বলা হয়েছে কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. “নিষ্ঠুরতা পরিলক্ষিত হলেও উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পে অন্তর্লীন হয়ে আছে প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও সহানুভূতি” বিশ্লেষণ করো।

০৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. মহারাজার পালিত কুকুরটির নাম কী?

উত্তরঃ মহারাজার পালিত কুকুরটির নাম বেঙ্গল টাইগার ।

খ. মহারাজার পালিত কুকুরটিকে খানদানি বলা হয়েছে কেন?

উত্তরঃ অভিজাত সুলভ আচার-আচরণের জন্য মহারাজার পালিত কুকুরটিকে খানদানি বলা হয়েছে। লেখকের বাবা চাকরিসূত্রে জগদলে চলে আসলে মহারাজার পতিত বসতবাড়িতে বসবাস শুরু করেন। লেখকের মা মহারাজার রেখে যাওয়া কুকুর বেঙ্গল টাইগারকে দু’বেলা খাবার দিতেন।

কিন্তু মাটিতে খাবার দিলে কুকুরটি খেতো না। তাকে থালায় করে খাবার দিতে হতো। এছাড়া খাবার দিলেও সে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া শুরু করতো না। মুখে বলতে হতো- খাও, এরপর সে খেতো । তার আচার-আচরণ ছিল অন্যান্য সাধারণ কুকুর থেকে আলাদা। তাই মহারাজার পালিত বেঙ্গল টাইগার নামক কুকুরটিকে খানদানি কুকুর বলা হয়েছে ।

গ. উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পে বিধৃত মনিবের প্রতি পোষা প্রাণীর আনুগত্য এবং আত্মত্যাগের দিকটি ফুটে উঠেছে
গৃহপালিত প্রাণীরা আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। কোনো কোনো প্রাণী বিশেষ করে কুকুর, ঘোড়া অনেকসময় নিজের জীবন দিয়েও মানুষের উপকার করে থাকে । আলোচ্য ‘নিয়তি’ গল্প এবং উদ্দীপকে গৃহপালিত প্রাণীদের মনিবের জন্য আত্মত্যাগের এমন দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে।

উদ্দীপকে জগুদের টাটু নামক ঘোড়াটি হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে। সে অবস্থায় এক সন্ধ্যায় জগু টাটুর পিঠে চড়ে বসে। টাটু জগুকে নিয়ে ছুটতে ছুটতে দূরের এক গোরস্থানে এসে উপনীত হলে জগু ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে গিয়ে জ্ঞান হারায়। মৃত ভেবে শিয়ালের দল জগুর দিকে তেড়ে আসতে থাকলে টাটু জগুকে বাঁচাতে লড়তে থাকে।

পরবর্তীতে জগুর বাবা দলবল নিয়ে এসে তার এ অবস্থার জন্য টাটুকে দায়ী মনে করে গুলি করে মেরে ফেলেন। অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে শাহীনকে রক্ষা করতে গিয়ে বেঙ্গল টাইগার নামক কুকুরটি কেউটে সাপের কামড় খায়। বিষক্রিয়ার ফলে প্রথম দিনে কুকুরটি নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। দ্বিতীয় দিনে কুকুরটির শরীর থেকে চামড়া খসে পড়ে।

আরো দু’দিন পর তার শরীর পচে-গলে যেতে থাকে। যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে বেঙ্গল টাইগার,। লেখকের বাবা কুকুরটির এ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে এ অবস্থা থেকে কুকুরটিকে মুক্তি দিতে গুলি করে মারেন । অর্থাৎ উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পে মনিবের প্রতি পোষা প্রাণীর আনুগত্য এবং আত্মত্যাগের দিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. “নিষ্ঠুরতা পরিলক্ষিত হলেও উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পে অন্তর্লীন হয়ে আছে প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও সহানুভূতি”– বিশ্লেষণ করো ।

উত্তরঃ কিছু মানবেতর প্রাণী তাদের জীবন দিয়ে হলেও প্রভুর উপকার করে। আবার এমন কিছু সহানুভূতিশীল মানুষ আছেন যারা এসব উপকারী প্রাণীকে স্নেহচ্ছায়ায় লালন পালন করেন। উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের ঘটনাবর্তে তারই দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু ঘটনা দুটোর মধ্যে অন্তর্লীন হয়ে আছে- মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও সহানুভূতি ।

উদ্দীপকে জগুর বাবা তার সন্তানের অচেতন অবস্থা দেখে টাটুকে গুলি করে হত্যা করেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে টাটুই জগুর জীবন রক্ষাকারী। সুস্থ হয়ে জগু বাবার কাছে টাটু হত্যা করার কারণ জানতে চাইলে বাবা জবাব না দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছিলেন। অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে বেঙ্গল টাইগার শাহীনকে কেউটের ছোবল থেকে রক্ষা করতে গিয়ে সাপের কামড় খায়। সাপের বিষক্রিয়ায় কুকুরটির যন্ত্রণা লেখকের বাবা সহ্য করতে না পেরে তাকে গুলি করে হত্যা করেন।

উদ্দীপকে জগু ও গল্পের লেখক প্রাণী দুটোকে হত্যার কোনো যৌক্তিক উত্তর পায় নি। জগুর বাবার মুখ ঘুরিয়ে নেয়া আর লেখকের বাবা কোনোকিছু না বলার পেছনে অন্তর্লীন ছিল- অনুতাপ, অনুশোচনা ও সহানুভূতি। কিন্তু মানবেতর প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল মানুষের সংখ্যা খুব নগণ্য। অবলা প্রাণীগুলো অনেকক্ষেত্রে মানুষের নিষ্ঠুরতার শিকার হচ্ছে। অথচ মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত নিষ্ঠুরতা পরিহার করে মানবেতর প্রাণীর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া।

কেননা পৃথিবীর প্রাণীবৈচিত্র্য রক্ষা করতে না পারলে, একদিন মানব সভ্যতাই ধ্বংসের মুখে পড়বে। আলোচ্য উদ্দীপক এবং ‘নিয়তি’ গল্পে পোষা প্রাণীদের আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত তুলে ধরে এসব প্রাণীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা হয়েছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ ।

আরো পড়ুনঃ

প্রশ্ন ০৭ কুকুর গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী ও প্রভুভক্ত প্রাণী। এ ক্ষেত্রে কুকর এক বিরল প্রাণী। মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু কুকুর। হাজার হাজার বছর ধরে তারা মানুষের নিরাপত্তায় পাহারাদারের কাজ করে আসছে। এরা প্রভুর উপকারে সর্বদা নিয়োজিত থাকে। নিজের জীবন দিয়ে হলেও প্রভুর খেদমত করে। কুকুর হলেও এদের প্রতি যত্নশীল হওয়া উচিৎ।

ক. কার আদব-কায়দা খুব ভালো?
খ. ‘কুকুরটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল’ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? তুলে ধরো।
ঘ. ‘কুকুরের মতো গৃহপালিত প্রাণীদের প্রতি আমাদের যত্নশীল হওয়া উচিত’ – উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি মূল্যায়ন করো।

০৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. কার আদব-কায়দা খুব ভালো?

উত্তরঃ বেঙ্গল টাইগার নামের কুকুরটির আদব-কায়দা খুব ভালো ছিল

খ. ‘কুকুরটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল’ ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ শৈশবে পোষা কুকুরটির মর্মান্তিক মৃত্যু লেখকের মনে গভীরভাবে দাগ কাটে- প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা তাই বুঝানো হয়েছে লেখকরা জগদলে থাকাকালীন একদিন লেখকের ছোট ভাই শাহীনকে বিষধর সাপের কামড়ের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য তার প্রিয় পোষা কুকুরটিই সাপের কামড় খায়।

সাপের কামড়ে কুকুরটির দেহ পচে গলে যাচ্ছিল। কুকুরের যন্ত্রণা সহ্য করতে না ে লেখকের বাবা কুকুরটিকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে গুলি করে হত্যা করেন। কুকুরের এ নিয়তি শৈশবে লেখকের মনে ক্ষত সৃষ্টি করে ।

গ. উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পের কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে? তুলে ধরো।

উত্তরঃ উদ্দীপকে ‘নিয়তি’ গল্পে উঠে আসা পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুরের ভূমিকার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে ।

গৃহপালিত প্রাণীদের মধ্যে সাহস আর প্রভুভক্তিতে বিরল হচ্ছে কুকুর। মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে কুকুর সর্বদা প্রভুর উপকা নিয়োজিত থাকে । নিজের জীবন দিয়ে হলেও প্রভুর খেদমত করে। আলোচ্য উদ্দীপক এবং ‘নিয়তি’ গল্পে কুকুরের এমন উপকারীভূমিকার কথা বলা হয়েছে।

উদ্দীপকে গৃহপালিত প্রাণীর মধ্যে মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু কুকুরের প্রভুভক্তির কথা প্রকাশ পেয়েছে। হাজার বছর ধরে কুকুর মানুষের উপকার করেছে, পাহারাদারের কাজ করেছে। কুকুর সর্বদা প্রভুর উপকারে নিয়োজিত থাকে। নিজের জীবন দিয়ে হলেও মানুষের উপকার করে। ‘নিয়তি’ গল্পে কুকুরের আত্মত্যাগের দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে।

এক ভোরে লেখক তাঁর ভাইবোনদের সাথে বাড়ির মন্দিরের চাতালে বসেছিলেন। হঠাৎ মন্দিরের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে একটি বড় কেউটে সাপ ফনা তুলে তাঁদের দিকে আসতে থাকলে ভয়ে তাঁরা সরে যান। কিন্তু বসে থাকে ছোট্ট শাহীন। এসময় বাড়ির পোষা কুকুর বেঙ্গল টাইগার সাপটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে শাহীনকে বাঁচায়।

এসময় কুকুরটি সাপের কামড় খায়। বিষক্রিয়ায় বেঙ্গল টাইগারের দেহ পচে-গলে যেতে থাকে। লেখকের বাবা এ-দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে বেঙ্গল টাইগারকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে গুলি করে হত্যা করেন। আলোচ্য উদ্দীপকে কুকুরের এমন প্রভুভক্তির কথাই বলা হয়েছে।

ঘ. ‘কুকুরের মতো গৃহপালিত প্রাণীদের প্রতি আমাদের যত্নশীল হওয়া উচিত মূল্যায়ন করো।

উত্তরঃ উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি কুকুরের মতো গৃহপালিত প্রাণীদের প্রতি আমাদের যত্নশীল হওয়া উচিত—-উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটি যথার্থ । গৃহপালিত প্রাণীরা আমাদের জীবনের সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে যুক্ত। এমন একটি গৃহপালিত প্রাণী কুকুর। কুকুর মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধু। সুদূর অতীতে এরা বন ছেড়ে মানুষের সাথে চলে এসেছিল লোকালয়ে। এরা সর্বদা প্রভুর উপকারে নিয়োজিত থাকে। এমনকি নিজের জীবন দিয়ে প্রভুকে বাঁচাতেও কুণ্ঠিত হয় না।

উদ্দীপকে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে কুকুরের ইতিবাচক ভূমিকা বর্ণিত হয়েছে। কুকুর প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে সাহসী ও প্রভুভক্ত প্রাণী। নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও এরা প্রভুর উপকার করে থাকে। ‘নিয়তি’ গল্পে আমরা দেখতে পাই— কেউটে সাপের ভয়ে লেখকরা তিন ভাই বোন ছিটকে সরে গেলে শাহীন একা বসে থাকে। সাপ দেখে তার আনন্দের সীমা ছিল না। সে হামাগুড়ি দিয়ে চা এ সাপটির দিকে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।

লেখকরা ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন। ঠিক সেই সময়ে কেউটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বেঙ্গল টাইগার নামের কুকুরটি শাহীনের জীবন বাঁচায়। পরিণতিতে সাপের বিষক্রিয়ায় সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। গুলি করে হত্যার মাধ্যমে লেখকের বাবা কুকুরটিকে দীর্ঘদিন যন্ত্রণায় ভোগার হাত থেকে মুক্তি দেন ।

উদ্দীপক ও ‘নিয়তি’ গল্পের তুলনামূলক বিশ্লেষণে বলা যায় যে, প্রভুভক্ত হিসেবে কুকুর বিরল প্রাণী। তাদের প্রতি আদর ভালোবাসা দেখালে তারা তা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করে। আরো কিছু প্রাণী আছে যারা মানুষের ভালোবাসা একই রকমভাবে ফিরিয়ে দেয়। গৃহপালিত এসব প্রাণী মানুষের কাছ থেকে একটু আদর-ভালোবাসা পেলেই অনুগত হয়ে পড়ে। প্রভুর ঋণ এসব প্রাণী অনেক সময় জীবনের বিনিময়ে শোধ করে যায়। মানুষের কাছাকাছি থেকে গৃহপালিত এসব প্রাণী মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু ওঠে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ।

প্রশ্ন ০৮ এই অরণ্যে শিকারির জালে ধরা পড়ে হরিণছানা পিকু । শিকারি পিকুকে বাড়ি নিয়ে এসে বড়সড় হওয়ার জন্য প্রতিপালন করতে থাকে। একসময় পিকুর সাথী হয় বাড়ির বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেটি। বন্ধুত মতো খেলতে খেলতে বড় হয় দুজনে। একদিন বাড়ির লোকেরা সিদ্ধান্ত নেয়- জবাই করে পিকুর মাংস খাবে। কিন্তু তাদের ইচ্ছায় বাধা দেয় ছেলেটি। সে পিকুকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে অরণ্যে নিয়ে ছেড়ে দেয়। তার সহানুভূতি ও চেষ্টায় বনের প্রাণীটি বনে ফিরে যায়।

ক. মন্দিরের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে কী বের হয়ে এসেছিল?
খ. লেখকরা মহারাজার বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন কীভাবে?
গ. পিকু ও বেঙ্গল টাইগারের নিয়তির পার্থক্য আলোচনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের প্রতিবন্ধী ছেলেটি ও ‘নিয়তি’ গল্পের বাবার প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও সহানুভূতির স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

০৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. মন্দিরের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে কী বের হয়ে এসেছিল?

উত্তরঃ মন্দিরের বন্ধ দরজার ফাঁক দিয়ে প্রকাণ্ড একটা কেউটে সাপ বের হয়ে এসেছিল।

খ. লেখকরা মহারাজার বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন কীভাবে?

উত্তরঃ বাবার চাকরিসূত্রে লেখকরা জগদলে মহারাজার বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন।
মহারাজা বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে গেলে তাঁর বাড়ি পাকিস্তান সরকারের হাতে চলে আসে। তখন বাড়িটি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। লেখকের বাবা যেহেতু সরকারি চাকরি করতেন সে সুবাদে জগদলে মহারাজার বাড়িতে থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন।

গ. পিকু ও বেঙ্গল টাইগারের নিয়তির পার্থক্য আলোচনা করো ।

উত্তরঃ পরিণতির দিক থেকে উদ্দীপকের পিকুর সাথে ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগারের নিয়তির পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
বেঙ্গল টাইগারের পরিণতি হয়েছে মৃত্যু আর উদ্দীপকের পিকু লাভ করেছে মুক্তির স্বাদ। প্রাণী দু’টোর নিয়তি বাস্তবায়নে অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করেছে সহানুভূতিপ্রবণ মানুষ।

পিকুকে মুক্ত করেছিল বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেটি আর বেঙ্গল টাইগারকে গুলি করে মেরেছিলেন লেখকের বাবা । তাদের নিয়তিতে পার্থক্য থাকলেও প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ প্রকাশিত হয়েছে উভয়ক্ষেত্রেই । উদ্দীপকে বর্ণিত পিকু অরণ্যে শিকারির জালে ধরা পড়ে। শিকারি পিকুকে বাড়ি নিয়ে যায় এবং বড় করার জন্য পুষতে থাকে। এরই মধ্যে হরিণ ছানা পিকুর সাথে ভাব হয় বাড়ির বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেটির । খেলাধুলা করে একসাথে বড় হতে থাকে পিকু আর ছেলেটি। একসময় পিকু বড় হলে শিকারি সিদ্ধান্ত নেয় জবাই করে পিকুর মাংস তারা খাবে।

কিন্তু ছেলেটি তাদের সে ইচ্ছায় বাধা দেয়। পিকুকে সে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করে বনে ছেড়ে দেয়। অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে শাহীনকে কেউটে সাপটির ছোবল থেকে বাঁচানোর জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ে বেঙ্গল টাইগার। সাপটি তাকে কামড়ে দেয়। বিষক্রিয়ায় প্রথম দিন বেঙ্গল টাইগার নড়াচড়া বন্ধ করে চা দেয়।

দ্বিতীয় দিন তার চামড়া খসে পড়ে। আরো দুইদিন পর তার দেহ পচেগলে যেতে থাকে । যন্ত্রণায় প্রচণ্ডভাবে আর্তনাদ করতে থাকে কুকুরটি। বাবা বেঙ্গল টাইগারের যন্ত্রণা সহ্য না করতে পেরে তাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে গুলি করে মারেন। এভাবে পরিণতির বিচারে উদ্দীপকের পিকুর সঙ্গে ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগারের নিয়তির পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়

ঘ. উদ্দীপকের প্রতিবন্ধী ছেলেটি ও ‘নিয়তি’ গল্পের বাবার প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও সহানুভূতির স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ উদ্দীপকের ছেলেটি আর ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকের বাবার আচরণে বৈসাদৃশ্য থাকলেও তাদের অনুভূতিতে মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ ও সহানুভূতি প্রকাশ পেয়েছে।

পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রাণীর অস্তিত্ব জরুরি। কিন্তু মানুষের স্বার্থবাদী আচরণে প্রাণীবৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। তাই মানুষ আজ নিজের অস্তিত্বের জন্যই সারাবিশ্বে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সোচ্চার হচ্ছে। যার কৃৎকৌশল ‘নিয়তি’ গল্পটি। এ গল্পের অন্তরালে প্রাণীর প্রতি মানুষের মমত্ববোধ, প্রীতি আর সহানুভূতি প্রকাশিত হয়েছে।

উদ্দীপকে বর্ণিত হরিণছানা পিকুকে এক শিকারি ধরে বাড়িতে এনে পালন করতে থাকে। বড় হলে পিকুকে জবাই করে তার মাংস খাবার সিদ্ধান্ত নেয় সে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বাদ সাধে পিকুর খেলার সাথি বাড়ির বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেটি। নিজ প্রচেষ্টায় পিকুকে সে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে বনে ছেড়ে দিয়ে আসে।

অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে ছোট্ট শাহীনকে রক্ষা করতে গিয়ে কেউটে সাপের কামড় খায় বেঙ্গল টাইগার নামের কুকুরটি। সে কামড়ের বিষক্রিয়ায় ছেলের জীবন রক্ষাকারী কুকুরটি লেখকের বাবার চোখের সামনেই পচেগলে যাচ্ছিল। তীব্র যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছিল কুকুরটি। তিনি তা সহ্য করতে না পেরে কুকুরটিকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য গুলি করে মেরে ফেলেন।

উদ্দীপকের বাকপ্রতিবন্ধী ছেলেটির সাহায্যে বন্যপ্রাণী পিকু বনে ফিরে যায়। অন্যদিকে ‘নিয়তি’ গল্পে লেখকের বাবাও পোষা কুকুরটির প্রতি মমত্বের কারণেই তার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলেন না। যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করার জন্যই বেঙ্গল টাইগারকে গুলি করতে বাধ্য হন তিনি। বাহ্যিক দৃষ্টিতে ঘটনা দুটি আলাদা হলেও তাতে অন্তর্লীন হয়ে আছে প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধ আর সহানুভূতি।

প্রশ্ন । ০৯ বর্গীদের সঙ্গে ভীষণ যুদ্ধ চলছে মারাঠাদের। ছত্রপতি শিবাজী মারাঠা পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। যুদ্ধের একপর্যায়ে শত্রুরা শিবাজীকে ঘিরে ফেলে। তাদের প্রাণসংকট দেখা দেয়। বিষয়টি বুঝতে পারে তাঁর প্রিয় ঘোড়া তুফান। সে নিজের জীবন বিপন্ন করে শিবাজীকে নিয়ে ঝড়ের বেগে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসে। অতঃপর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। শিবাজী আমৃত্যু তাঁর অকৃত্রিম বন্ধু তুফানকে ভুলে নি । এরূপ ভূমিকার জন্য শিবাজীর সঙ্গে তুফানও ইতিহাসে অমর হয়ে আছে।

ক. তক্ষক কী?
খ. ‘কুকুরটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল’- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত? আলোচনা করো ।
ঘ. উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে— মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো।

০৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. তক্ষক কী?
উত্তরঃ তক্ষক এক প্রকার বিষধর সাপ ।

খ. ‘কুকুরটি আমার মনে গভীর ছাপ ফেলেছিল’— ব্যাখ্যা করো।

উত্তরঃ শৈশবের প্রিয় কুকুরটির বেদনাদায়ক মৃত্যু লেখকের মনে গভীরভাবে দাগ কাটে- প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা সে কথাই বোঝানো হয়েছে।

লেখকরা জগদলে থাকাকালীন একদিন লেখকের ছোট ভাই শাহীনকে সাপের ছোবল থেকে রক্ষা করতে গিয়ে তাঁদের প্রিয় পোষা কুকুরটি সাপের কামড় খায়। সাপের বিষক্রিয়ায় কুকুরটির দেহ পচেগলে যাচ্ছিল, দেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। কুকুরটি যন্ত্রণায় করুণ আর্তনাদ করছিল।

লেখকের বাবা কুকুরটির দুর্দশা সহ্য করতে না পেরে তাকে যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে গুলি করে হত্যা করেন। বেঙ্গল টাইগার নামের কুকুরটির এ নিয়তি শৈশবে লেখকের মনে গভীর বেদনার সঞ্চার করে, যা লেখক ভুলতে পারেন নি।

গ. উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সাথে কীভাবে সম্পর্কিত? আলোচনা করো ।

উত্তরঃ ঘটনার ধরন ও পরিণতির দিক থেকে উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সাথে সম্পর্কিত ।পোষা প্রাণীরা কখনো কখনো মানুষের পরম বন্ধু হয়ে যায়। মনিবের আপদ বিপদে নিজের প্রাণকে রিসর্জন দিয়েও তারা মনিবকে রক্ষা করে । এমনি প্রভুর উপকার করেছেন উদ্দীপকের খোড়া তুফান আর ‘নিয়তি’ গল্পের বেঙ্গল টাইগার ।

উদ্দীপকে বর্ণিত বর্গী ও মারাঠাদের মধ্যকার যুদ্ধে মারাঠা পক্ষে শিবাজী নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। একপর্যায়ে শিবাজীকে শত্রুরা ঘিরে ফেলে। তার প্রাণসংকট দেখা দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে তাঁর প্রিয় ঘোড়া তুফান নিজের জীবন বিপন্ন করে শিবাজীকে ঝড়ের বেগে নিরাপদ দূরত্বে নিয়ে আসে। জীবনরক্ষা হয় শিবাজীর। কিন্তু নিয়তি গল্পে মনিবের প্রাণরক্ষা করতে গিয়ে লেখকের প্রিয় কুকুর বেঙ্গল টাইগার কেউটে সাপের কামড় খায়।

সাপের বিষক্রিয়ায় বেঙ্গল টাইগারের শরীর পচেগলে যাচ্ছিল। প্রচণ্ড যন্ত্রণায় আর্তনাদ করছিল কুকুরটি। লেখকের বাবা কুকুরটির যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছিলেন না। তাই যন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি দিতে টাইগারকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। এভাবে ঘটনার ধরন ও পরিণতির সূত্রে উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের সাথে সম্পর্কিত।

ঘ. উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে- মন্তব্যটির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করো । “উদ্দীপকটি ‘নিয়তি’ গল্পের আংশিক ভাবের প্রতিনিধিত্ব করে” মন্তব্যটি যথার্থ।

উত্তরঃ ‘নিয়তি’ গল্পের লেখকরা জগদলের এক রাজবাড়িতে অবস্থানকালীন সে বাড়ির কুকুরটির সঙ্গে তাদের সখ্যতা তৈরি হয়। লেখকে মা কুকুরটিকে প্রতিদিন খাবার দিতেন। প্রতিদানে কুকুরটি নিজের জীবন বিপন্ন করে লেখকের ভাইয়ের প্রাণ বাঁচায়। আলোচ্য উদ্দীপকেও প্রভুর প্রতি পোষা প্রাণীর আত্মত্যাগের এমন দৃষ্টান্ত উপস্থাপিত হয়েছে।

উদ্দীপকে শিবাজীর প্রতি তাঁর প্রিয় ঘোড়া তুফানের প্রভুভক্তির দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। বর্গীদের সঙ্গে মারাঠাদের যুদ্ধচলাকালীন একপর্যায়ে মারাঠা প্রধান ছত্রপতি শিবাজীকে শত্রুরা ঘিরে ফেলে। তাঁর প্রাণসংকট দেখা দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে তুফান তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। নিজের জীবন বিপন্ন করে শিবাজীকে নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসে সে। ‘নিয়তি’ গল্পে এমন ঘটনার ছায়াপাত থাকলেও সেখানে আরও নানা বিষয় ফুটে উঠেছে।

‘নিয়তি’ গল্পে পোষা প্রাণীর প্রতি লেখকের পরিবারের সহানুভূতি এবং মমত্ববোধের দিকটি প্রাধান্য পেয়েছে। তাদের পোষা কুকুর বেঙ্গল টাইগার প্রাণ বিপন্ন করে তাদের ভালোবাসার প্রতিদান দিয়েছে। পাশাপাশি এ গল্পে জগদলের রাজবাড়ি ও সে অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশের মনোজ্ঞ বর্ণনা রয়েছে।

সেকালের চিকিৎসা ব্যবস্থা, লেখকের পারিবারিক ঘটনা এবং মহারাজার রুচি ও কীর্তি এ রচনার অন্যতম দিক। উদ্দীপকের স্বল্প পরিসরে এসব দিক আলোচিত হয় নি। সেখানে গল্পের একটি দিক-মানবেতর প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের বিষয়টিই কেবল উঠে এসেছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

 

চাকরির খবর ও নোটিশ পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো করুন  ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । অন্যান্য সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button