SSC | বাংলা ১ম পত্র | মমতাদি গল্পের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্র হতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত মমতাদি গল্পটি হতে এসএসসি(SSC) পরিক্ষায় কমন উপযোগী কিছু গুরুপূর্ণ সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর নিয়ে বিশেষভাবে আলোচনা করা হয়েছে। অতএব সম্পূর্ণ পোস্ট মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
মমতাদি -মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় [১৯০৮ – ১৯৫৬)
অনুশীলনী
প্রশ্ন -১ : স্নেহ-ভালোবাসা ধনী গরিবের সমান-এ বিষয়ে একটি অনুচ্ছেদ লেখো।
উত্তরঃ স্নেহ-ভালোবাসা ধনী-গরিবের সমান। অর্থ বিত্ত দিয়ে মানুষের মধ্যে ধনী গরিবের বিভেদ তৈরি করা যায়। কিন্তু স্নেহ,
ভালোবাসা দিয়ে তা করা সম্ভব নয়। কারণ মানুষের মনের গতি-প্রকৃতি, আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালোবাসা, স্নেহ-মমতা এসব স্রষ্টার অমূল্য দান। অর্থ-বিত্ত একে ছোট বড় করতে পারে না।
ম্লান বা অর্জন করতে পারে না। আপাত দৃষ্টিতে ধনী গরিব, অর্থ-বিত্তের পার্থক্য পরিলক্ষিত হতে পারে । কিন্তু আসলে তা সত্য নয়। কারণ তার পেছনে সময় ও পরিপ্রেক্ষিতে ক্রিয়াশীল থাকে বলেই আমাদের তা মনে হয়। মানুষের অন্তকরণ ধনী দরিদ্র সবারই সমান হয়। কেবল ক্ষমতার লোভ, অর্থবিত্তই তাকে কলুষিত করে।
যদি এসব রিপ থেকে মানুষের অন্তঃকরণকে মুক্ত রাখা যায় তবে সেটিই হবে তার আসল ও পবিত্র হৃদয়। তখন গরিব বলে কেউ কাউকে তুচ্ছ বা অবহেলা করে না। গরিব ও ধনীর হাতে হাত, বুকে বুক মেলাতে সংকোচবোধ করে না। এখানেই স্নেহ- ভালোবাসার অভিন্ন দিকটি অম্লান হয়ে ওঠে।
কিছু কিছু সামাজিক বিধি-নিষেধ আভিজাত্যবোধ হয়তো আছে, ধনী গরিবের মধ্যে সে ভালোবাসা বিভেদের, কিন্তু শিক্ষা ও মানবতাবোধের কাছে তা অতি তুচ্ছ ও নগণ্য। কাজেই শাশ্বত কল্যাণের বিবেচনায় স্নেহ ভালোবাসা ধনী গরিবের সমান।
মমতাদি গল্পের অনুশীলনীর সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন । ০১ | রাসেল ড্রাইভার হিসেবে যেমন দক্ষ তেমনি সৎ। প্রকৌশলী এমারত সাহেব তাকে ব্যক্তিগত ড্রাইভার হিসেবে নিয়োগ দেন। ইফতি, সনাম ও শিলাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসাই তার প্রধান কাজ। ঘরের সবাই ওকে ভীষণ ভালোবাসে। ইফতিরা ওকে ভাইয়া বলে ডাকে, একসাথে খায়, গল্প করে, বেড়াতে যায়। রাসেলের প্রতি সন্তানদের এই আচরণে এমারত সাহেব ভীষণ খুশি।
ক. মমতাদির বয়স কত ছিল?
খ. মমতাদির চোখ সজল হয়ে উঠেছিল কেন?
গ. উদ্দীপকে রাসেলের মাঝে বিদ্যমান মমতাদির বিশেষ গুণটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাসেল ও মমতাদির প্রতি দুই পরিবারের আচরণের ফুটে ওঠা দিকটি সামাজিক সংহতি সৃষ্টিতে কতটুকু প্রভাব ফেলে? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
০১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মমতাদির বয়স কত ছিল?
উত্তরঃ মমতাদির বয়স ছিল তেইশ বছর।
খ. মমতাদির চোখ সজল হয়ে উঠেছিল কেন?
উত্তরঃ কৃতজ্ঞতায় মমতাদির চোখ সজল হয়ে উঠেছিল । সামাজিকভাবে একজন মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী হয়েও অভাবের তাড়নায় চারমাস স্বামীর চাকরি না থাকায় মমতাদিকে পর্দা ঠেলে কাজের সন্ধানে বাইরে আসতে হয়েছে। সে রান্নার কাজ চায়। অনভিজ্ঞতার কারণে রান্নার কাজের মাসিক বেতন সম্পর্কে তার ধারণা নেই। গৃহকর্ত্রী তাই যখন মাসিক পনেরো টাকা মাইনে ধার্য করল তখন প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেতন পাওয়ার কৃতজ্ঞতায় তার দু’চোখ সজল হয়ে উঠল।
গ. উদ্দীপকে রাসেলের মাঝে বিদ্যমান মমতাদির বিশেষ গুণটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ উদ্দীপকের রাসেলের মাঝে মমতাদির কর্তব্যকর্মে সততা ও দক্ষতার গুণটি বিদ্যমান। অনেক কর্তা হলো করণীয়। বিধেয় বা করা উচিৎ এমন বিষয়। প্রত্যেক কাজের সঙ্গেই সর্বজনীন মঙ্গল থাকা শ্রেয়। সমাজজীবনে মানুষ একান্ত ব্যক্তিগত কাজকর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না। অনেক দায়িত্বপূর্ণ কাজের সঙ্গেও তাকে সংশ্লিষ্ট থাকতে হয়। কর্তব্যকর্ম তাকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে পালন করতে হয়।
উদ্দীপকের ড্রাইভার রাসেল তার মালিকের ছেলেমেয়েকে নিজের ভাইবোনের মতো আপন করে নেয়। তাদের সাথে গল্প করে, বেড়াতে যায়। তার কাজে ঘরের সবাই তাকে ভীষণ ভালোবাসে। ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি অল্পসময়ের মধ্যে বাড়ির স্কুলপড়ুয়া গিয়ে তাকে যথাসামর্থ্য আপ্যায়ন করার চেষ্টা করে। বিনিময়ে ছোট ছেলেটিও তাকে দিদির মতোই সম্মান করে ও ভালোবাসে।
ছোট ছেলেটির সঙ্গে ভাব জমিয়ে নেয়। তাকে ছোট ভাইয়ের মতোই স্নেহ, ভালোবাসা দিতে থাকে। এছাড়া নিজের বাসায় নিয়ে স্নেহ-ভালোবাসার গুণ মমতাদিকে ঐ পরিবারের একজন সদস্য করে তোলে। মমতাদির চরিত্রের এ গুণটি উদ্দীপকের রাসেলের মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যায় ।
ঘ. রাসেল ও মমতাদির প্রতি দুই পরিবারের আচরণের ফুটে ওঠা দিকটি সামাজিক সংহতি সৃষ্টিতে কতটুকু প্রভাব ফেলে? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।
উদ্দীপকে রাসেল ও মমতাদির প্রতি দুই পরিবারের যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ, তা সামাজিক সংহতি সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতে শ্রম ও শ্রমিকের উপযুক্ত মর্যাদা স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে শ্রম ও শ্রমিকের প্রকৃত মর্যাদা দেয়া হয় না।
ফলে আমাদের দেশ ও সমাজ সামাজিক ও জাতীয় জীবনে এত পিছিয়ে আছে। পরিশ্রম মানুষের আত্মসম্মানকে ক্ষণ করে না। বরং পরিশ্রমের ফলে অর্জিত লক্ষ্য যে কারোর আত্মসম্মানকে বাড়িয়ে দেয়। উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পে পরিশ্রম এ শ্রমিকের সম্মানদানকারী এমন দু’টি পরিবারের পরিচয় দৃশ্যমান ।
উদ্দীপকে ড্রাইভার রাসেলের সঙ্গে তার মালিক এমারত সাহেবের ছেলেমেয়ের খুব ভাব। তারা তাকে ভাইয়া বলে ডাকে। তার সাথে খায়, গল্প করে আবার ঘুরতেও যায়। একইভাবে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির সাথেও ভাব জমে ওঠে বাড়ির স্কুলপড়ুয়া ছোট ছেলেটির। ছোট ছেলেটিকে সে ছোট ভাইয়ের মর্যাদা দেয়। আর ছেলেটিও তাকে দিদি বলে মেনে নেয়। এর মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে এক সুন্দর সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
উদ্দীপক ও আলোচ্য গল্পটিতে লক্ষ করা যায়, দুইটি পরিবারই সমাজের উঁচু-নিচুর ভেদাভেদকে তুচ্ছজ্ঞান করে ড্রাইভার রাসেল ও গৃহকর্মী মমতাদিকে আপন করে নিয়েছে। স্থান দিয়েছে নিজ পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে। তাদের এ মনোভাব ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলিয়ে দিয়ে সমাজকে সাম্যের দিকে নিয়ে যায়। সৃষ্টি করে সামাজিক সংহতি ও একাত্মতা। তাই সঙ্গত কারণেই বলা যায়, রাসেল ও মমতাদির প্রতি দুই পরিবারের আচরণে ফুটে ওঠা দিকটি সামাজিক সংহতি সৃষ্টিতে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের প্রভাব ফেলে ।
মমতাদি গল্পের অতিরিক্ত সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর
প্রশ্ন ০২ স্নেহ ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশে মানুষই শ্রেষ্ঠ। সন্তানের প্রতি পিতামাতার, শিশুর প্রতি সকল মানুষের এবং মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা চিরন্তন । আপাত দৃষ্টিতে মানুষের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ থাকলেও সর্বোপরি মানুষ মানুষই, পশু নয় ।
ক. মমতাদির বাসা কোন গলিতে ছিল?
খ. ‘বেশি আস্কারা দিও না, জালিয়ে মারবে।’ মা কাকে, কেন একথা বলেছিলো?
গ. উদ্দীপকের কোন বিষয়টি ‘মমতাদি’ ‘গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘গভীর মানবিক চেতনাই উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পের প্রধান বিষয়বস্তু’-বিশ্লেষণ করো।
০২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মমতাদির বাসা কোন গলিতে ছিল?
উত্তরঃ মমতাদির বাসা জীবনময়ের গলিতে ছিল।’
খ. ‘বেশি আস্কারা দিও না, জালিয়ে মারবে।’ মা কাকে, কেন একথা বলেছিলো?
উত্তরঃ শৈশবে লেখক খুব দুষ্টু প্রকৃতির থাকায় লেখকের মা মমতাদিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোক্ত কথাটি বলেছিলো । মমতাদি অভাবের তাড়নায় লেখকের বাসাতে কাজ করতে এসেছিল। রান্নাঘরে কাজ করবার সময় লেখক মমতাদির সঙ্গে খোশ গল্প করত। মমতাদি স্নেহ কাঙ্গাল লেখককে পুত্র স্নেহে আদর করে কাছে টেনে নিল । মমতাদির স্নেহকুড়ানোর প্রবল ভাব লেখকের কিশোর মনে জেগে উঠল। মমতাদির ও লেখকের মায়া-মমতা আর স্নেহের এমনভাব দেখে লেখকের মা প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছিলেন ।
গ. উদ্দীপকের কোন বিষয়টি ‘মমতাদি’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো ।
উত্তরঃ উদ্দীপকের মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার বিষয়টি ‘মমতাদি’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে। মানুষ মানুষের জন্য। আপদ-বিপদে এক মানুষ আরেক মানুষের পাশে দাঁড়াবে এটাই স্বাভাবিক। স্নেহ-ভালোবাসা, মায়া-মমতা মানুষের সবচেয়ে বড় গুণ । আর এই গুণগুলো আছে বলেই মানুষ পৃথিবীর অন্যান্য সৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও আলাদা।
উদ্দীপকে মানুষের সবচেয়ে বড় প্রবৃত্তি স্নেহ-ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। আর এই স্নেহ-ভালোবাসা প্রতিফলিত হয় পিতা-মাতা ও সন্তানের মাঝে, শিশুর প্রতি সকল শ্রেণির মানুষের এমনকি মানুষে মানুষে। সাময়িক মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ থাকলে ও যারা প্রকৃত মানুষ তারা এগুলো ভুলে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যে অপর মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে কাছে টেনে নেয়।
এমনি স্নেহ-মমতা আর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি লক্ষ করা যায় ‘মমতাদি’ গল্পের গৃহকর্ত্রী, মমতাদি ও লেখকের মাঝে। মমতাদি লেখকের বাড়িতে গৃহের কাজ করতে এসে উক্ত গৃহকে সে আপন ভেবে সকল কাজ আনমনে করে যায়।
অল্পদিনের মধ্যেই গৃহকর্ত্রী মমতাদির কাজের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তাদের পরিবারেই একজন সদস্য ভাবতে শুরু করে। লেখকের সাথে ও মমতাদির একটা নিবিড় ভালোবাসার বন্ধন তৈরি হয়ে যায়। তাই এসব কারণে বলা যায়, উদ্দীপকের স্নেহ-ভালোবাসার বিষয়টি ‘মমতাদি’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে।
ঘ. ‘গভীর মানবিক চেতনাই উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পের প্রধান বিষয়বস্তু’- বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ‘গভীর মানবিক চেতনাই উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পের বিষয় বস্তু’- প্রশ্নোক্ত এ মন্তব্যটি যথার্থঃ মানবতা মানুষকে মহৎ করে তোলে। মানবতা থাকলেই মানুষ মানুষের আপদ-বিপদ, দুঃখে-কষ্টে পাশে দাঁড়ায় এবং সহযোগিতার হাত প্রসারিত করে দেয়।
অপরদিকে যারা মানবিক জ্ঞানশূন্য তারা নীতি-নৈতিকতা হারিয়ে আত্মভাবনায় সর্বদা ডুবে থাকে। এজন্য মানবিক মূল্যবোধই মানুষকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছে। এ ভাবনারই প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্দীপকের প্রেক্ষাপটে ও ‘মমতাদি’ গল্পের বিষয়বস্তুতে।
উদ্দীপকে মানুষের চিরন্তন স্নেহ ও ভালোবাসার দিকটি ফুটে উঠেছে। সেখানে দেখা যায় সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার, শিশুর প্রতি সকল মানুষের, মানুষের প্রতি মানুষের সর্বজনীন ভালোবাসা, এমনি স্নেহ-ভালোবাসার প্রতিফলন দেখা যায় ‘মমতাদি’ গল্পের আখ্যানভাগ্যেও।
পরিস্থিতির শিকার হয়ে অভাবের কারণে মমতাদি একন গৃহকর্ত্রীর বাসায় কাজ নেয়। মমতাদির আচার-আচরণ, কাজ-কর্ম ও ব্যবহারে বাসায় গৃহকর্ত্রীসহ সকল সদস্যরা খুশি হন। মমতাদির সঙ্গে উক্ত বাসার লোকজনের এক গভীর মানবিক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়, যা গল্পের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, উভয় স্থানেই মানুষের সবচেয়ে বড় সহজাত গুণ স্নেহ-ভালোবাসার দিক প্রকাশিত হয়েছে। উদ্দীপকে যেমন পিতা-মাতার সাথে সন্তানের, শিশুর সাথে সকল মানুষের, মানুষের সাথে মানুষের ঠিক তেমনি ‘মমতাদি’ গল্পেও বাসার লোকজনের সঙ্গে মমতাদির এক ধরনের আত্মিক নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই এসব দিক বিবেচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।
প্রশ্ন নং ৩ মৌমাছি, মৌমাছি/ কোথা যাও নাচি নাচি, দাঁড়াও না একবার ভাই/ ওই ফুল ফোটে বনে
যাই মধু আহরণে
দাঁড়াবার সময় তো নাই।
ক. মমতাদির মাইনে কত ঠিক হয়েছিল?
অথবা, মমতাদির বয়স কত ছিল?
খ. কাজগুলিকে সে আপন করে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকালো না’ কেন?
গ.উদ্দীপকের কোন বিষয়টি ‘মমতাদি’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘নির্দেশের অভাবে কোনো কাজ ফেলে রাখল না।’- ‘মমতাদি’ গল্পের এই উক্তিটি উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। [বাকাশিৰো-২০১৭, 2022]
০৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মমতাদির মাইনে কত ঠিক হয়েছিল?
উত্তরঃ মমতাদির মাইনে পনেরো টাকা ঠিক হয়েছিল।
অথবা, মমতাদির বয়স ২৩ ছিল।
খ. ‘কাজগুলিকে সে আপন করে নিল, মানুষগুলির দিকে ফিরেও তাকালো না কেন?
উত্তরঃ কাজের শৃঙ্খলা ও ক্ষিপ্রতার জন্য মমতাদি কাজগুলিকে আপন করে নিল, মানুষগুলোর দিকে ফিরেও তাকালো না। ‘মমতাদি’ গল্পে মমতাদি ভালো ঘরের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও লেখকের বাড়িতে গৃহ পরিচারিকার কাজ নেন। কারণ তার স্বামীর কোনো চাকরি ছিলো না।
চাকরি না থাকার কারণে তার সংসার চলত না। তাই বাধ্য হয়ে লেখকের বাড়ি কাজ করতে এসেছিল। কাজে যাতে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে তাই সে কোনো দিকে না তাকিয়ে নিঃশব্দে একমনে যত্নসহকারে নিজের বলে কাজগুলিকে আপন করে নেয় ।
গ. উদ্দীপকের কোন বিষয়টি ‘মমতাদি’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ উদ্দীপকের মৌমাছির কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধের বিষয়টি ‘মমতাদি’ গল্পে প্রতিফলিত হয়েছে। আমাদের বাড়ির গৃহকর্মীরা সমাজের চোখে ছোট হলেও তারা তাদের কাজকে ছোট হিসেবে দেখে না। তারা অত্যন্ত নিষ্ঠাবান দায়িত্ববোধসম্পন্ন ও কর্তব্যনিষ্ঠভাবে তাদের কর্ম সম্পাদন করে। তারা প্রতিটি কাজকে সুচারুভাবে সম্পন্ন করে থাকে। এ বিষয়টি উদ্দীপকের মৌমাছি ও ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির মধ্যে লক্ষ করা যায়।
উদ্দীপকের ক্ষুদ্র প্রাণী মৌমাছির কর্তব্যনিষ্ঠা ও দায়িত্বপরায়ণতার পরিচয় পাওয়া যায়। সে তার আহার সংগ্রহে নানা দিকে
ছোটাছুটি করে বেড়ায়। সামান্যতম অবসর তার নেই। বিভিন্ন ফুল থেকে রেণু নিয়ে তারা মৌচাক তৈরি করে। ‘মমতাদি’ গল্পেও মমতাদির মধ্যে আমরা এমনই দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠার পরিচয় পাই। সেও গৃহকর্ত্রীর প্রতিটি কাজ অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে করে।
তাই বলা যায়, মৌমাছির দায়িত্ববোধ মমতাদির কর্মনিষ্ঠা ও দায়িত্ববোধকে প্রতীকায়িত করে । যে সব কাজ করার জন্য আদেশ পায় তাও করে আর যেগুলো করা উচিত বলে মনে করে তাও নির্দ্বিধায় সে করে ফেলে।
ঘ. ‘নির্দেশের অভাবে কোনো কাজ ফেলে রাখল না।’- ‘মমতাদি’ গল্পের এই উক্তিটি উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ”নির্দেশের অভাবে কোনো কাজ ফেলে রাখল না’- ‘মমতাদি গল্পের আলোকে উক্তিটি যথার্থ। যারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে তাদেরকে গৃহকর্মী বলা হয়। এসব গৃহকর্মীরা অধিকাংশই গৃহকর্মে কোনো কাজে ফাঁকি দেন না। সব কাজকে তারা আপন ভেবে যত্নসহকারে করে থাকে। ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি এমনি একজন পরিশ্রমী, বিশ্বস্ত, দায়িত্বপরায়ণ- গৃহকর্মী।
উদ্দীপকে মৌমাছির পরিশ্রম ও দায়িত্বপরায়ণতার দিকটি ফুটে উঠেছে। সে সারাদিন কারো পানে না চেয়ে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকে। তার এ কাজের জন্য যেন দাঁড়াবার সময়টুকুও নেই। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজ নিজ কাজ তারা আপন মনে করে যায়।
‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদিও লেখকের বাড়িতে কাজে এসে নীরবে নতমুখে সব কাজ করে যায়। যে বিষয়ে উপদেশ পেল পালন করল, যে বিষয়ে উপদেশ পেল না নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে অনর্থক প্রশ্ন করে না, নির্দেশের অভাবে কোনো কাজ ফেলে রাখে না।
‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি প্রথম দিন থেকেই লেখকের বাড়িতে কাজে গিয়ে সব কাজকে নিজের মতো করে আপনমনে করে যায়। কোনো কাজকে সে দূরে ফেলে রাখে না। যেগুলো করা উচিত বলে সে মনে করে তা আপন ভেবে করে ফেলে। গৃহকর্ত্রীর আদেশের অপেক্ষায় সে কখনো থাকে না।
অল্পদিনের মধ্যে সে লেখকের মায়ের মন জয় করে ফেলে এবং পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে পরিগণিত হয়। উদ্দীপকে মৌমাছি ও তার নিজ প্রয়োজনে মধুচক্র তৈরির কাজ করে যায় আনমনে। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ বলেই বিবেচিত হয়।
প্রশ্ন ৪ বারো বছরের মাতৃহীন মিনা বাবাকে সহযোগিতা করার জন্য একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। গৃহকর্ত্রী তার ছোট মেয়েটিকে শেখালেন মিনাকে মিনা ফুফু বলে ডাকতে। গৃহকর্ত্রীর স্নেহে মিনা যেন তার মা’কেই ফিরে পেল। মিনার বাবা একদিন তাকে নিতে এলে মিনা কান্না জুড়ে দিল এবং বলল, এই বাড়ি ছাইড়া আমি কোনোখানে যামু না।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল নাম কী?
খ. বেশি আস্কারা দিওনা, জ্বালিয়ে মারবে।’- মা কাকে, কেন একথা বললেন?
গ. উদ্দীপকের মিনা ‘মমতাদি’ গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রী কি ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে? তোমার যৌক্তিক মতামত দাও ।
০৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল নাম কী?
উত্তর: মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসল নাম প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
খ. বেশি আস্কারা দিওনা, জ্বালিয়ে মারবে।’- মা কাকে, কেন একথা বললেন?
উত্তর: ছোটবেলায় লেখক খুব দুষ্টু থাকায় লেখকের মা মমতাদিকে লক্ষ্য করে আলোচ্য কথাটি বলেছে। মমতাদি লেখকের বাসায় কাজ করতে এসেছিল। রান্নাঘরে কাজ করার সময় মমতাদির সঙ্গে লেখক গল্প করতো।
মমতাদি লেখককে আদর করে কাছে টেনে নিল। মমতাদির, স্নেহ কুড়ানোর প্রবল ভাব লেখকের বালক মনে জেগে উঠল। মমতাদির ও লেখকের মায়া-মমতা আর স্নেহের এমন ভাব দেখে লেখকের মা আলোচ্য কথাটি বললেন।
গ. উদ্দীপকের মিনা ‘মমতাদি গল্পের কোন চরিত্রের প্রতিচ্ছবি? ব্যাখ্যা করো ।
উত্তর: উদ্দীপকের মিনা ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। মানুষ মাত্রই ভালোবাসার কাঙাল। ভালোবাসার অকৃত্রিম বন্ধনই মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অলংকার। ভালোবাসায় সিক্ত হয়েই নারীরা বাঁচতে চায়। কোনো কোনো সময় এ ভালোবাসা আত্মার সম্পর্ক হয়ে যায়। তখন রক্ত সম্পর্কের চেয়ে তা বড় হয়ে উঠে। যা উদ্দীপকের মিনার মধ্যে দেখা যায়।
উদ্দীপকের মাতৃহীন কিশোরী মিনা তার বাবাকে সহযোগিতা করার জন্য একটি বাসায় গৃহকর্মীর কাজ নেয়। সেখানে গৃহকর্ত্রীর আন্তরিকতায় সে মুগ্ধ হয়। তার স্নেহে কিশোরী মিনা যেন তার মাকেই ফিরে পায়। কাজ করতে গিয়ে এ পরিবারের সাথে মিনা এতটাই জড়িয়ে পড়ে যে, তার বাবা তাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে সে কান্না জুড়ে দেয়।
আলোচ্য ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদিও দারিদ্র্যের কারণে গল্পকথকের বাড়িতে কাজ করতে এসে একসময় সে পরিবারের সঙ্গে আত্মিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এজন্য তার স্বামীর চাকরি জুটলেও কাজ ছাড়তে রাজি হয় নি সে। এ গল্পে মমতাদি নিজে যেমন আদর ও সম্মান প্রত্যাশী তেমনি অন্যকে স্নেহ-ভালোবাসা দেবার ক্ষেত্রেও তার কোনো দ্বিধা ছিল না যেমনটি উদ্দীপকের মিনার আচরণেও প্রতিভাত হয়। সেদিক বিবেচনায় উদ্দীপকের মিনা ‘মমতাদি’ গল্পের মমতা চরিত্রের প্রতিচ্ছবি।
ঘ. উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রী কি ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে? তোমার যৌক্তিক মতামত দাও ।
উত্তরঃ গৃহকর্ত্রীর প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করার সূত্রে উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রী ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধিত্ব গৃহকর্মীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা প্রতিটি মানুষের জন্য জরুরি। কেননা গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষেরা ভালোবাসা পেলে, সম্মান পেলে, গৃহস্থের পরিবারকেও তারা নিজ পরিবার হিসেবে গণ্য করে- যার প্রমাণ উদ্দীপকের মিনা আর আলোচ্য গল্পের মমতাদি চরিত্রটি কাজ নেয়।
উদ্দীপকের মিনা এক মাতৃহীন কিশোরী। অভাবের সংসারে বাবাকে সহায়তা করতে একটি বাসায় সে গৃহকর্মীর সেখানে বাড়ির গৃহকর্ত্রী তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে, মিনাকে ফুফু বলে ডাকতে তার ছোট মেয়েটিকে নির্দেশ দেয়। তর স্নেহাদরে মিনা যেন তার মাকেই ফিরে পায়। মিনার প্রতি গৃহকর্ত্রীর এমন আন্তরিক মনোভাব ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের মধ্যেও লক্ষিত হয়। সেখানেও লেখক এবং মমতাদির মধ্যে স্নেহ মায়া-মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ করার বিষয়টিই ‘মমতাদি’ গল্পের মূলভাব। সেখানে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন নারী মমতাদির দারিদ্র্যের কারণে কথকদের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবেই সে বাড়ির লোকজনের সহমর্মিতা লাভ করে।
বিশেষ করে লেখকের মা তাকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেন। তার আন্তরিক ভালোবাসার কারণে স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও মমতাদি কাজ ছাড়তে চায় নি। একইভাবে মিনাকে তার বাবা নিয়ে যেতে চাইলে সে-ও যেতে রাজি হয় নি। আলোচ্য গল্পের লেখকের মা এবং উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রীর গৃহকর্মীর প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন বলেই এমনটি ঘটেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রীকে ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধি বলা যায়।
প্রশ্ন ০৫ দশ বছরের মেয়ে রাহেলা ইসলাম সাহেবের বাসায় রান্না, কাপড় ধোয়া, ঐশীকে স্কুলে নেয়া, কেনাকাটা থেকে শুরু করে সব কাজ নিপুণভাবে করে। স্বামী-স্ত্রীর অবর্তমানে দুই যমজ সন্তানের দেখাশুনাও করে। তবুও তাকে কারণে অকারণে তার স্ত্রী সাকিলা বকাঝকা করে। একদিন চায়ের কাপ ভাঙার কারণে তাকে অমানবিক নির্যাতন করে। এতে রাহেলার কঙ্কালসার শরীরে কমপক্ষে ত্রিশটি আঘাতের চিহ্ন ও দগদগে ঘা রয়েছে।
ক. ‘মমতাদি’ গল্পটি কোন গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?
খ. স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও কেন মমতাদি রাঁধুনির কাজ করতে চাইল?
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘মমতাদি’ গল্পের বৈসাদৃশ্য দেখাও।
ঘ. “উদ্দীপক ও মমতাদি গল্পের ভাববস্তু ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত”— মূল্যায়ন করো।
০৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘মমতাদি’ গল্পটি কোন গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?
উত্তরঃ ‘মমতাদি’ গল্পটি ‘সরীসৃপ’ গ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।
খ. স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও কেন মমতাদি রাঁধুনির কাজ করতে চাইল?
উত্তরঃ আত্মনির্ভরশীল হয়ে আত্মসম্মান রক্ষা করতে চেয়েছে বলেই স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও মমতাদি রাঁধুনির কাজ করতে চাইল। চার মাস স্বামীর চাকরি ছিল না বলে পর্দা ঠেলে মমতাদিকে উপার্জনের জন্য বাইরে আসতে হয়েছে।
তবে নিজের সংসারে সে যে অবহেলার শিকার তা গল্পকথকের সঙ্গে কথোপকথনের মধ্য দিয়েই প্রকাশ পেয়েছে। সে অবহেলা থেকে পরিত্রাণ পেতেই মমতাদি। আত্মনির্ভরশীলতার পথ বেছে নেয়। তাই স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও মমতাদি রাঁধুনির কাজ করতে চাইল ।
গ. উদ্দীপকের সাথে ‘মমতাদি’ গল্পের বৈসাদৃশ্য দেখাও ৷
উত্তরঃ গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের সঙ্গে আচরণ করার দিক থেকে উদ্দীপক ও মমতাদি গল্পের মধ্যে বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
যারা অন্যের বাড়িতে কাজ করে আমাদের সমাজে তাদেরকে বলা হয় গৃহকর্মী। নিতান্ত অভাবে পড়েই তাদেরকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়। গৃহকর্মী হলেও তারা আত্মমর্যাদাহীন নয়। একটু ভালোবাসা ও ভালো আচরণ তারাও প্রত্যাশা করে। ‘মমতাদিগল্পে এবং উদ্দীপকে এ বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে।
‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ঘরের মেয়ে। অভাবের কারণে তাকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হচ্ছে। কিন্তু সক পড়ুয়া ছেলেটির পরিবারের মানুষেরা কখনো তাকে ছোট্ট করে দেখে নি এবং তাদের পরিবারেরই একজন মনে করেছে। অন্যাদির উদ্দীপকের রাহেলা অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে অমানবিক আচরণ সহ্য করে। রাহেলাকে ইসলাম সাহেবের বাসায় রাম কাপড় ধোয়াসহ তাদের অবর্তমানে দুই যমজ সন্তানের দেখাশোনাও তার করতে হয়।
কিন্তু বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে শুধুইপেয়েছে অমানবিক নির্যাতন। ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি যাদের বাড়িতে কাজ করত তাদের কাছ থেকে সে পেয়েছে সম্মান ও ভালোবাসা। উদ্দীপকের রাহেলা পেয়েছে অমানবিক নির্যাতন। এখানেই মমতাদি গল্প ও উদ্দীপকের মধ্যে বৈসাদৃশ্য।
ঘ. উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রী কি ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধিত্ব করে? তোমার যৌক্তিক মতামত দাও ।
উত্তরঃ গৃহকর্ত্রীর প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করার সূত্রে উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রী ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধিত্ব গৃহকর্মীদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা প্রতিটি মানুষের জন্য জরুরি। কেননা গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষেরা ভালোবাসা পেলে, সম্মান পেলে, গৃহস্থের পরিবারকেও তারা নিজ পরিবার হিসেবে গণ্য করে- যার প্রমাণ উদ্দীপকের মিনা আর আলোচ্যগল্পের মমতাদি চরিত্রটি কাজ নেয়।
উদ্দীপকের মিনা এক মাতৃহীন কিশোরী। অভাবের সংসারে বাবাকে সহায়তা করতে একটি বাসায় সে গৃহকর্মীর সেখানে বাড়ির গৃহকর্ত্রী তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে, মিনাকে ফুফু বলে ডাকতে তার ছোট মেয়েটিকে নির্দেশ দেয়। তর স্নেহাদরে মিনা যেন তার মাকেই ফিরে পায়।
মিনার প্রতি গৃহকর্ত্রীর এমন আন্তরিক মনোভাব ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের মধ্যেও লক্ষিত হয়। সেখানেও লেখক এবং মমতাদির মধ্যে স্নেহ মায়া-মমতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। গৃহকর্মে নিয়োজিত মানুষের প্রতি মানবিক আচরণ করার বিষয়টিই ‘মমতাদি’ গল্পের মূলভাব। সেখানে আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন নারী মমতাদির দারিদ্র্যের কারণে কথকদের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ নিতে বাধ্য হয়।
কিন্তু সেখানে অপ্রত্যাশিতভাবেই সে বাড়ির লোকজনের সহমর্মিতা লাভ করে। বিশেষ করে লেখকের মা তাকে স্নেহের দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেন। তার আন্তরিক ভালোবাসার কারণে স্বামীর চাকরি হওয়ার পরও মমতাদি কাজ ছাড়তে চায় নি। একইভাবে মিনাকে তার বাবা নিয়ে যেতে চাইলে সে-ও যেতে রাজি হয় নি।
আলোচ্য গল্পের লেখকের মা এবং উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রীর গৃহকর্মীর প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছেন বলেই এমনটি ঘটেছে। সে বিবেচনায় উদ্দীপকের গৃহকর্ত্রীকে ‘মমতাদি’ গল্পের লেখকের মায়ের প্রতিনিধি বলা যায়।
প্রশ্ন ০৬ রিকশাচালক বাবার চার সন্তানের মধ্যে নিলু সবার বড়। সারাদিন হাড়-ভাঙ্গা খাটুনি খেটে সংসার চালানো তাদের বাবার পক্ষে খুবই কষ্টকর। তাই বড় মেয়ে নিলু প্রতিবেশী সালেহার বাসায় কাজ করে। তার ছেলে-মেয়েকে দেখা-শোনা করে, আদর-যত্ন করে। নিলু নিজ সংসারের মতো সমস্ত কাজ-কর্ম সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার আপ্রাণ চেষ্টা করে। কিন্তু সামান্য ভুল-ত্রুটি হলেই নির্মম অত্যাচার নেমে আসে তার ওপর। অভাবের কারণে সবকিছু সহ্য করে সে। কিছুতেই যেন সে গৃহকর্ত্রীর মন জয় করতে পারে না।
ক. মমতাদির ছেলের বয়স কত?
খ. লেখক মমতাদিকে ‘ছায়া মানবী’ বলেছেন কেন?
গ. উদ্দীপকের নিলুর সাথে ‘মমতাদি’ গল্পের যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা বিশ্লেষণ করো ।
ঘ. ‘উদ্দীপকের সালেহা যদি গল্পকথকের মায়ের মতো উদার হতেন তাহলে নিলু অত্যাচারিত হতো না।’- মন্তব্যটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো ।
০৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মমতাদির ছেলের বয়স কত?
উত্তরঃ মমতাদির ছেলের বয়স পাঁচ বছর।
খ. লেখক মমতাদিকে ‘ছায়া মানবী বলেছেন কেন?
উত্তরঃ মমতাদির নিস্তব্ধতা ও অন্তর্মুখী আচরণ দেখে লেখক তার সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন। সংসারের প্রয়োজনে পর্দা ঠেলে বাইরে কাজ করতে এলেও মমতার ব্যক্তিসত্তা একটুও লঘু হয় নি। গল্পে যে বাড়িতে সে কাজ করতে আসে সেখানে কারো সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো হৃদ্যতা গড়ে ওঠে নি।
কিন্তু সমস্ত কাজগুলোকে সে আপন করে নিয়েছিল। তার এ সম্পর্ক লেখকের কাছে ভীষণ অদ্ভুত আর রহস্যময় বলে মনে হয়েছিল; কারণ বাড়িতে কাজ করা অবস্থায় তার অবস্থা কেউ জানতেই পারে নি। এ কারণে লেখক মমতাদিকে ছায়াময়ী মানবী বলেছেন।
গ. উদ্দীপকের নিলুর সাথে ‘মমতাদি’ গল্পের যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে তা বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ ‘মমতাদি’ গল্পে মমতাদি অন্যের বাড়িতে কাজ করতে গিয়ে যে পরিবেশ পেয়েছে, উদ্দীপকের নীলু তা পায় নি। এদিক থেকে উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য সৃষ্টি করেছে।
উদ্দীপকে বাবার উপার্জনে সংসার চলে না বলে নিলু তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সে বাবাকে সাহায্য করে ঠিকই, কিন্তু নিজে স্বস্তি পায় না। কারণ আপ্রাণ চেষ্টা করেও সে গৃহকর্ত্রীর মন জয় করতে পারে না। পান থেকে চুন খসলেই তার ওপর নির্মম অত্যাচার নেমে আসে।
কিন্তু গল্পের মমতাদির ক্ষেত্রে এমনটি হয় নি। বরং সবাই তার সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে চায়। এসব দিক থেকে উদ্দীপকের নিলুর সঙ্গে ‘মমতাদি’ গল্পের বৈসাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।
ঘ. ‘উদ্দীপকের সালেহা যদি গল্পকথকের মায়ের মতো উদার হতেন তাহলে নিলু অত্যাচারিত হতো না।’- মন্তব্যটির যথার্থতা মূল্যায়ন করো।
‘উত্তরঃ উদ্দীপকের সালেহা ‘মমতাদি’ গল্পকথকের মায়ের মতো উদার হলে নিলু অত্যাচারিত হতো না’- মন্তব্যটি যথার্থ অভাবতাড়িত হয়ে গরীব শ্রেণিরা ধনী সম্প্রদায়ের গৃহে গৃহপরিচারিকার কাজ নেয়। এ কাজ করতে গিয়ে গৃহকর্ত্রীর কেউ পায় সম্মান ও ভালোবাসা আবার কেউ বা পায় অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণ। গৃহকর্মী হিসেবে মমতাদি পেয়েছে প্রধা ভালোবাসা। পক্ষান্তরে নিলু পেয়েছে অমানবিক আচরণ ।
‘মমতাদি’ গল্পে মমতাদি সংসারের প্রয়োজনে গৃহকর্মীর কাজ নিতে বাধ্য হয়। সে বাড়ির পরিবেশ তার জন্যে মোটেও বিরূপ বিে না। এমনকি বাড়ির কর্ত্রী নিজের ছেলের অধিকারও মমতাদিকে দিয়েছিল। বাড়ির একজন সদস্য হিসেবেই মমতাদ ে গুরুত্ব পেত। সে কারণে সেও নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে বাড়ির কাজকর্ম করার তাগিদ অনুভব করত।
কিন্তু উদ্দীপকের নিলু মমতাদির মতো কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ পায় নি। সে তার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে কাজ করার গৌর করলেও গৃহকর্ত্রী সালেহার মন পেত না। আর সামান্য ভুলত্রুটি হলেই তার ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসত। অভাবের কারণেই এ আচরণ তাকে সহ্য করতে হতো।
‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি ওই বাড়িতে একজন সদস্য হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিল শুধু গল্পকথকের মায়ের উ কারণে। কিন্তু নিলু তার গৃহকর্ত্রীর অমানবিক আচরণে কাজ করেও মানসিক শান্তি পায় নি। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বাঙ্গাল যদি গল্পকথকের মায়ের মতো উদার হতো তাহলে নিলু অত্যাচারিত হতো না ।
প্রশ্ন ০৭ অকালে স্বামীকে হারিয়ে দুটি সন্তান নিয়ে দিশেহারা কল্পনা। জীবন-জীবিকার তাগিদে সহায়-সম্বলহীন কল্পনা পাশের বাড়িতে ঝি-এর কাজ করে। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করলেও গৃহকর্তার সন্তুষ্টি নেই। কোনো কাজে একটু ত্রুটিবিচ্যুতি হলেই তাকে সহ্য করতে হয় নানা ধরনের কটূক্তি ও তিরস্কার। সন্তান দুটির মুখে দুমুঠো ভাত ও নিজের কোনোরকম বেঁচে থাকার তাগিদে জলভরা চোখে সবকিছু নীরবে মেনে নেয় কল্পনা।
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম গল্পের নাম কী?
খ. মমতাদি লেখককে বাইরের রোয়াতে বসাল কেন?
গ. উদ্দীপকের কল্পনার সাথে মমতাদির সাদৃশ্য বর্ণনা করো।
ঘ. “উদ্দীপকের কল্পনাদের সমস্যার সমাধানই ‘মমতাদি’ গল্পের মূলসুর।”— যুক্তি দাও ।
০৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম গল্পের নাম কী?
উত্তরঃ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম গল্পের নাম ‘অতসীমামী’।
খ. মমতাদি লেখককে বাইরের রোয়াতে বসাল কেন?
উত্তরঃ নিজ বাড়ির মলিনতা, আসবাবপত্র ও আলো-বাতাসের অপ্রতুলতার জন্য মমতাদি লেখককে বাইরের রোয়াতে বসালো। লেখক স্কুল থেকে ফেরার পথে মমতাদির সাথে দেখা হলে জোর করে তার বাড়িতে যায়। অনিচ্ছাসত্ত্বেও মমতাদি তাকে বাড় নিয়ে যায়। সংকোচে ও লজ্জায় প্রথমে মমতাদি সংকুচিত হয়ে পড়ে। পরে সে লেখককে বাইরের রোয়াতে বসতে দেয়।
গ. উদ্দীপকের কল্পনার সাথে মমতাদির সাদৃশ্য বর্ণনা করো।
উত্তরঃ উদ্দীপকের কল্পনার সাথে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির অভাবতাড়িত হয়ে ঝি-এর কাজ করার দিক হতে সাদৃশ্য বিদ্যমান সমাজসংস্কারে প্রয়োজনের তাগিদে মানুষকে অনেক কিছু করতে হয়। একসময়ে যে কাজটার কথা সে ভাবতেও পারে না, কোনো একসময়ে সেটিই তাকে করতে হয়।
আর এ কাজ করতে গিয়ে কেউ পায় ভালো পরিবেশ, আবার কেউ বা পায় অমানবিক ও নিষ্ঠুর পরিবেশ। উদ্দীপকের কল্পনা ও ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদিকে দারিদ্র্যের কারণে যা করতে হয়েছে।
উদ্দীপকের কল্পনা অকালে স্বামীকে হারিয়ে দুটি সন্তান নিয়ে যেন অকূল পাথারে পড়ে। উপায়ান্তর না দেখে সে পাশের বাড়িতে ঝি-এর কাজ নেয়। ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদিও দারিদ্র্যের কষাঘাতে পিষ্ট হয়ে গৃহপরিচারিকার কাজ নিতে বাধ্য হয়। মমতাদি সেবাড়িতে অত্যন্ত দায়িত্বের সাথে সব কাজ সুষ্ঠুভাবে করে। উদ্দীপকের কল্পনাও সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি কাজ করে। এ দিক দিয়ে কল্পনার সাথে মমতাদির সাদৃশ্য রয়েছে।
ঘ. “উদ্দীপকের কল্পনাদের সমস্যার সমাধানই ‘মমতাদি’ গল্পের মূলসুর।”- যুক্তি দাও।
উত্তরঃ উদ্দীপকের কল্পনাদের সমস্যার সমাধানই ‘মমতাদি’ গল্পের মূলসুর”- মন্তব্যটি যৌক্তিক। মানুষ মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই মানুষই যদি অন্যের ক্ষতির কিংবা বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে মানবতার চরম পরাজয় ঘটে। ‘মমতাদি’ গল্পে মমতাদি সম্পূর্ণ ইতিবাচক পরিবেশ পেলেও উদ্দীপকের কল্পনার ক্ষেত্রে ঘটেছে তার সম্পূর্ণ বিপরীত পরিবেশ।
উদ্দীপকের কল্পনা অকালে স্বামীকে হারিয়ে দু’টি সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। নিজেদের জীবিকার তাগিদে সে পাশের বাসায় ঝি-এর কাজ নিতে বাধ্য হয়। কিন্তু সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করেও গৃহকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে নি।
কাজে সামান্য ত্রুটি হলেই তাকে সহ্য করতে হয় নানা ধরনের কটূক্তি ও তিরস্কার। তারপরও সন্তান দু’টির মুখে আহার জোগানো এবং নিজের জীবিকা নির্বাহের জন্য সকল তিরস্কার সহ্য করে কাজ করতে থাকে। অপরদিকে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির প্রতি তার গৃহকর্ত্রী অত্যন্ত মানবিক আচরণ এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করে।
কিন্তু উদ্দীপকে আমরা এর বিপরীত চিত্র দেখি । সেখানে গৃহকর্তা কাজে সামান্য ত্রুটি পেলেই কল্পনাকে তিরস্কার করেন। যা তাঁর মনে আঘাত দেয় । ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি ঝি-এর কাজ করলেও গৃহকর্ত্রীর বাসা থেকে পেয়েছে যথেষ্ট সম্মান ও ভালোবাসা।
গৃহকর্ত্রী মমতাদিকে তাদের পরিবারেরই একজন মনে করতো, কিন্তু উদ্দীপকের কল্পনা শত পরিশ্রম করেও মমতাদির মতো পরিবেশ পায় নি। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের গৃহকর্তা যদি ‘মমতাদি’ গল্পের গৃহকর্ত্রীর মতো সহানুভূতিশীল হতো তাহলে কল্পনার দুর্দশার হয়ত যৌক্তিক। অবসান ঘটত। সুতরাং আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকের কল্পনাদের সমস্যার সমাধানই ‘মমতাদি’ গল্পের মূলসুর- মন্তব্যটি
প্রশ্ন ০৮ নাফিস ইসলাম তাদের বাসার জন্য একটি কাজের মেয়ে রাখল। মেয়েটির নাম জরিনা। সে নিজের বুদ্ধি দিয়ে বাড়ির সব কাজ ঠিকমতো করে । নাফিস ইসলাম ও তার স্ত্রী বেড়াতে গেলে সে সততার সাথে বাসা পাহারা দেয়। পক্ষান্তরে, নাফিস ইসলামের স্ত্রী মেয়েটিকে সারাক্ষণ বকাঝকা করেন । একবার মেয়েটি একটি বালতি ভেঙে ফেলে । তার স্ত্রী মেয়েটিকে অনেক মারধর করে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয় ।
ক. মমতার বাসা কোন গলিতে ছিল?
খ. ‘চমকে তার মুখ লাল হলো”-ব্যাখ্যা করো ।
গ. উদ্দীপকে জরিনা ও ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি চরিত্রের তুলনামূলক আলোচনা করো ।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পের আলোকে আমাদের গৃহকর্মে নিয়োজিত লোকদের প্রতি কেমন আচরণ হওয়া উচিত বলে তুমি মনে করো, তা উল্লেখ করো।
০৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মমতার বাসা কোন গলিতে ছিল/
উত্তরঃ মমতাদির বাসা ছিল জীবনময়ের গলিতে ।
খ. চমকে তার মুখ লাল হলো-ব্যাখ্যা করো ।
উত্তরঃ স্কুল পড়ুয়া ছেলেটির মার মুখে ‘রাঁধুনী’ শব্দটি শুনে চমকে মমতাদির মুখ লাল হয়ে উঠল। মমতাদি ভদ্র ঘরের মেয়ে। কিন্তু পরিস্থিতির শিকার হয়ে অভাবে পড়ে তাকে গৃহকর্মীর কাজ খুঁজতে বের হতে হয়েছে। স্কুলপড়ুয়া ছেলেটির মায়ের কাছে সে জানতে চেয়েছে তারা তাকে রান্নার লোক হিসেবে রাখবে কি না। তখন স্কুলপড়ুয়া ছেলেটির মা তাকে জিজ্ঞাসা করে যে, রাধুনী কিনা? আর এ কথা শুনে চমকে মমতাদির মুখ লাল হয়ে উঠে
গ. উদ্দীপকে জরিনা ও ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি চরিত্রের তুলনামূলক আলোচনা করো ৷
উত্তরঃ উদ্দীপকের জরিনা চরিত্রের সাথে ‘মমতাদি গল্পের মমতাদি চরিত্রটি তুলনীয় । এভাবে পড়ে অনেক মানুষকে অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয়। আবার পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে কাউকে কাউকে গৃহকর্মে নিযুক্ত হতে হয় । মমতাদি গল্পে এ বিষয়টি চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে যা উদ্দীপকেও লক্ষণীয়।
উদ্দীপকের জরিনা নাফিস ইসলামের বাসায় গৃহস্থালির কাজকর্ম করে। সে একজন সৎ ও দায়িত্ববান গৃহকর্মী। কেননা নাফিস ইসলাম তার স্ত্রীকে নিয়ে বাইরে গেলেও জরিনা সততার সাথে বাসা পাহারা দেয়। এ দায়িত্ববোধের পরিচয় আমরা ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির মাঝেও খুঁজে পাই। মমতাদি যে বাড়িতে কাজ করে সেই বাড়ির সকল কাজ সে নিজের বাড়ির মতোই যত্নসহকারে করে । এদিক দিয়ে উদ্দীপকের জরিনার সাথে মমতাদির তুলনা করা যায় ।
ঘ. উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পের আলোকে আমাদের গৃহকর্মে নিয়োজিত লোকদের প্রতি কেমন আচরণ হওয়া উচিত বলে তুমি মনে করো তা উল্লেখ করো ।
উত্তরঃ উদ্দীপক ও ‘মমদাদি’ গল্পের আলোকে আমাদের গৃহকর্মে নিয়োজিত লোকদের প্রতি সৌহার্দপূর্ণ ও মানবিক আচরণ করা উচিত বলে আমি মনে করি । জগতে ধনী-দরিদ্রের পাশাপাশি বসবাস। তাই বলে দরিদ্রদেরকে অবজ্ঞা বা ঘৃণা করা উচিত নয়। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া প্রয়োজন । আর এ বিষয়টিই উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্পে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
উদ্দীপকের জরিনা নাফিস ইসলামের বাসায় গৃহস্থালির কাজ করে। সে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করলেও তার গৃহকর্ত্রী সারাক্ষণ বকাঝকা করে। কোনো কাজে ত্রুটিবিচ্যুতি ঘটলেই অনেক মারধর করে। এটা মানবতার জন্য চরম অপমানজনক কেননা গৃহকর্মীরাও মানুষ।
আর মানুষ হিসেবে একটু সহানুভূতি পাওয়ার অধিকার তাদেরও রয়েছে। ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি যে বাড়িতে কাজ করে সে বাড়ির লোকেরা তার সাথে অত্যন্ত মানবিক আচরণ করে। তারা মমতাদিকে খুব ভালোবেসে কাছে টেনে নিয়েছিল। তারা সর্বদা পরিবারের সদস্যের মতোই মমতাদির সাথে আচরণ করত ।
উদ্দীপকের জরিনার গৃহকর্ত্রী জরিনার উপর অত্যাচার করতো। তিনি জরিনাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। গৃহকর্মীদের প্রতি এ ধরনের আচরণ কখনোই কাম্য নয়। তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে। মনে করতে হবে তারাও আমাদের মতো মানুষ। তাদেরও আত্মসম্মানবোধ আছে।
তাদেরও ভালোভাবে সম্মানের সাথে বেচে থাকার অধিকার আছে। তাই যৌক্তিক কারণেই বলা যায়, আমাদের গৃহকর্মে নিয়োজিত লোকদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল ও মানবিক আচরণ করতে হবে।এ বিষয়টি আমরা উদ্দীপক ও ‘মমতাদি’ গল্প পাঠের মাধ্যমে উপলব্ধি করতে পারি।
প্রশ্ন ০৯ দৈন যদি আসে আসুক, লজ্জা কিবা তাহে?
মাথা উচু রাখিস।
সুখের সাথী মুখের পানে যদি না চাহে,
ধৈর্য ধরে থাকিস।
রুদ্ররূপে তীব্র দুঃখ যদি আসে নেমে,
বুক ফুলিয়ে দাঁড়াস ।
আকাশ যদি বজ্র নিয়ে মাথা পড়ে ভেঙে
ঊর্ধ্বে দু’হাত বাড়াস ।
ক. মমতাদি গল্পে কীসের সকালের কথা বলা হয়েছে?
খ. ‘প্রাণপণ চেষ্টায় অতিরিক্ত জয় করে ফেলেছে?’ কার সম্পর্কে, কেন বলা হয়েছে?
গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে আমরা মমতাদির যে বিশেষ গুণটি দেখতে পাই সেটি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘মমতাদি’ গল্পের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকুর যৌক্তিকতা নিরূপণ করো ।
০৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মমতাদি গল্পে কীসের সকালের কথা বলা হয়েছে?
উত্তরঃ ‘মমতাদি’ গল্পে শীতের সকালের কথা বলা হয়েছে ।
খ.‘প্রাণপণ চেষ্টায় অতিরিক্ত জয় করে ফেলেছে?’ কার সম্পর্কে, কেন বলা হয়েছে?
উত্তরঃ মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী হয়েও পেটের অভাবের কারণেই মমতাদিকে অন্যের বাড়িতে কাজের খোঁজে আসতে হয়। এ বিষয়টিই প্রশ্নোক্ত উক্তিটিতে অবতারণা করা হয়েছে।
অনেক সংকোচ মনের মধ্যে থাকলেও প্রতিনিয়ত নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে তা সে মন থেকে মুছে ফেলে। কারণ মর্যাদাবোধের চেয়ে প্রয়োজনটাই তখন তার কাছে বড় ছিল। আর তাই স্কুলপড়ুয়া ছেলেটির বাড়িতে যখন কাজ করতে আসে তখন তার কথায় ছিল না জড়তা, ছিল না কোনো সংকোচ । কিন্তু তার কথা শুনে বোঝা গেছে যে, সংকোচটা সে প্রবল চেষ্টায় রোধ করেছে।
গ. উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে আমরা মমতাদির যে বিশেষ গুণটি দেখতে পাই সেটি ব্যাখ্যা করো ।
উত্তরঃ উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে আমরা মমতাদির দরিদ্রতা সত্ত্বেও ধৈর্য ও আত্মসম্মানবোধ টিকিয়ে রাখার বিশেষ গুণটি দেখতে পাই। অভাবের তাড়নায় অনিচ্ছাসত্ত্বেও মানুষকে অনেক সময় অনেক কাজ করতে হয় এবং প্রয়োজনের কাছে তখন আত্মসম্মানবোধ হয়ে পড়ে গৌণ। মানুষ তখন বেঁচে থাকার তাগিদে মর্যাদাবোধ ভুলুণ্ঠিত করে উপার্জনের পথে নেমে পড়ে। যা মমতাদির মধ্যে লক্ষকরা যায়।
‘মমতাদি’ গল্পে স্বামীর চাকরি ছিল না বলে মমতাদি মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী হয়েও অভাব ঘোচাতে গল্পকথকদের বাড়িতে কাজ নেয়। আর্থিকভাবে মমতাদি এতটাই দুরবস্থায় ছিল যে, তার ঘরে আলো বাতাসেরও দীনতা ছিল । বিশ্রী, নোংরা ও ঘিঞ্জি এলাকায় সে থাকত যে ঘরে, সেখানে বাতাস আসাও প্রায় অসম্ভব ছিল।
এত দুরবস্থা সত্ত্বেও মমতাদি ধৈর্য ধরে সুদিনের অপেক্ষা করতো আর দরিদ্রতার কাছে সে কখনো নিজের আত্মসম্মানকেও বিকিয়ে দিত না। উদ্দীপকের কবিতাংশের বিষয়বস্তুতে আমরা দেখতে পাই, দৈন্য আঘাত হানলেও মাথা উঁচু রাখার ও ধৈর্য ধরার নির্দেশনাটি।
রুদ্ররূপে তীব্র দুঃখ আসলেও তা প্রতিহত করতে বুক ফুলিয়ে দাড়াতে আহবান জানানো হয়েছে উদ্দীপকে। উদ্দীপকের বিষয়বস্তুতে মমতাদির ধৈর্য ও আত্মসম্মানকে দারিদ্র্যের মাঝেও সমজ্জল রাখার গুণটি ফুটে উঠেছে।
ঘ. ‘মমতাদি’ গল্পের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকুর যৌক্তিকতা নিরূপণ করো।
উত্তরঃ উদ্দীপকে দারিদ্র্যের কাছে মাথা নত না করে ধৈর্য ও আত্মসম্মানকে টিকিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে। ‘মমতাদি’ গল্পে এ বিষয়টির পূর্ণ প্রতিফলন লক্ষ করা যায়, যা উদ্দীপকটিকে যৌক্তিক করে তুলেছে।
‘মমতাদি’ গল্পে গৃহকর্মে নিয়োজিতদের প্রতি মানবিক আচরণ প্রদর্শনের প্রতি প্রাধান্য দেয়া হলেও এখানে দেখানো হয়েছে শত দারিদ্র্যের মাঝেও মমতাদি কীভাবে ধৈর্য ধারণ করে এবং একইসাথে নিজের আত্মসম্মানকে টিকিয়ে রাখে। আর এ বিষয়বস্তুটির ওপরই উদ্দীপকে আলোকপাত করা হয়েছে, যা সামাজিক উন্নয়ন ও শৃঙ্খলার জন্য একান্ত প্রয়োজন ।
উদ্দীপকে দারিদ্র্যের কাছে মাথা নত না করে ধৈর্য ধারণ করার কথা বলা হয়েছে। দৈন্যকে লজ্জা না করে বরং তাকে জয় করতে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, যা গল্পের মমতাদির মতো দারিদ্র্যের নিষ্পেষণে নিষ্পেষিত মানুষদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আবার ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির শ্রীহীন বাড়ির বিশৃঙ্খলা দেখেই বোঝা যায় তার দারিদ্র্য কতটা নিদারুণ ছিল। সীমাহীন দারিদ্র্য ছিল বলেই মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী হয়েও সে গৃহকর্মে নিয়োজিত হয়েছিল। গৃহকর্মে নিয়োজিত হয়েও সে কখনো তার আত্মসম্মানকে বিসর্জন দেয় নি। করুণা ও দয়া গ্রহণ না করে বরং নিজ চেষ্টায় দারিদ্র্যকে জয় করতে চেয়েছে।
আত্মসম্মানবোধকেও কী করে শত দুঃখেও টিকিয়ে রাখা যায় তা গল্পের মমতাদির মাঝে প্রতিফলিত হয়েছে, যা উদ্দীপকেরই বিষয়বস্তু। অর্থাৎ‘মমতাদি’ গল্পের প্রেক্ষিতে উদ্দীপকের অংশটুকু যৌক্তিকতা লাভ করেছে ।
প্রশ্ন ১০ উলাপুর গ্রামের পিতৃ-মাতৃহীন অনাথ বালিকা রতন। গ্রামের পোস্টমাস্টারের ঘরের সব কাজ করে দিত সে, বিনিময়ে খেতে পেত। আশ্রয়হীন, সহায়সম্বলহীন এই বালিকার আশ্রয়ও ছিল পোস্টমাস্টার। তার স্নেহ পরশেই লালিত হচ্ছিল রতন। পল্লিপ্রকৃতির মতোই সহজ, সরল ও নিবিড় তাদের সম্পর্ক।
একবার পোস্টমাস্টার অসুস্থ হয়ে পড়লে বালিকা রতন আর বালিকা থাকে না। জননীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সারিয়ে তোলে পোস্টমাস্টারকে। গ্রামের এই পরিবেশে স্বাচ্ছন্দ্য না পেয়ে পোস্টমাস্টার শহরে বদলি হয়ে যান । সেই থেকে পোস্ট অফিসের চারপাশে অশ্রুসজল হয়ে ঘুরে বেড়াত রতন। সহজ, স্বাভাবিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক মানুষকে বেঁধে রাখে এক নিবিড় বন্ধনে ।
ক. মমতাদির স্বামীর কয় মাস চাকরি ছিল না?
খ. মমতাদি গৃহ পরিচারিকার কাজ করতে গেল কেন?
গ. উদ্দীপকের রতনের সাথে গল্পের মমতাদির সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো দিক রয়েছে কি? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ‘সহজ, স্বাভাবিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক মানুষকে বেঁধে রাখে এক নিবিড় বন্ধনে’- ‘মমতাদি’ গল্পের আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যমদাদির স্বামীর কয় মাস চাকরি ছিল না?
উত্তরঃ মমতাদির স্বামীর চার মাস চাকরি ছিল না।
খ. মমতাদি গৃহ পরিচারিকার কাজ করতে গেল কেন?
উত্তরঃ স্বামীর চাকরি না থাকায় সংসার চালানোর তাগিদে মমতাদি আত্মসম্মানবোধকে পরোয়া না করে সে নিজেই কাজ করতে গেলো । মমতাদির স্বামী চাকুরিজীবী ছিল। চারমাস ধরে স্বামীর চাকরি নেই। ঘরে তার একটি ছেলেও রয়েছে। অভাবে সংসার চলে না, তাই সে পর্দা ঠেলে উপার্জনের জন্য বাইরে চলে আসে।
গ. উদ্দীপকের রতনের সাথে গল্পের মমতাদির সাদৃশ্যপূর্ণ কোনো দিক রয়েছে কি? ব্যাখ্যা করো ।
উত্তরঃ উদ্দীপকের রতন গৃহকর্মে নিযুক্ত মানুষদের মমত্ব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ চারিত্রিক ধর্ম উপস্থাপন করার সূত্রে ‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদির সাথে সাদৃশ্য স্থাপন করেছে। কোনো কোনো সময় মানুষের প্রেম-ভালোবাসা-স্নেহ-মায়া-মমতার কারণে রক্ত সম্পর্কের চেয়েও আত্মিক সম্পর্ক বড় হয়ে উঠে। তখন মানুষের মধ্যে আপন-পর ভেদাভেদ থাকে না। মানুষ তখন মানবিক মূল্যবোধে উজ্জীবিত হয়। এ ধরনের সম্পর্ক দেখা যায়, উদ্দীপক ও ‘মমদাদি’ গল্পে।
‘মমতাদি’ গল্পের লেখকদের বাড়িতে মর্যাদাসম্পন্ন ঘরের নারী হয়েও গৃহকর্মী হিসেবে আসে মমতাদি। বাড়ির সব কাজ শৃঙ্খলার সাথে করার পাশাপাশি বাড়ির ছোটকর্তা অর্থাৎ লেখককে মমতাদি স্নেহ ও ভালোবাসায় আপ্লুত করে তোলে। সম্পর্কের ভেদাভেদ ভুলে মমতাদি লেখককে ছোট ভাইয়ের মর্যাদা দেয় এবং আদর প্রত্যাশী এ বালক মায়ার কারণে আবৃত করে রাখে, যা আমরা উদ্দীপকের পোস্টমাস্টারের জন্য রতনের মধ্যে দেখতে পাই।
উদ্দীপকের রতন পোস্টমাস্টারের স্নেহ পরশে লালিত হয়ে তার গৃহকর্মে নিযুক্ত হয়েছিল । পোস্টমাস্টার অসুস্থ হলে রতন মাতৃস্নেহে সারিয়ে তোলে এবং পোস্টমাস্টার গ্রাম ছেড়ে চলে গেলে তার মায়ায় রতন অশ্রুসজল হয়ে দিন কাটাত। উদ্দীপকের রতন পোস্টমাস্টারের প্রতি ও গল্পের মমতাদি লেখকের প্রতি মমতা ও • সৌহার্দ্য প্রদর্শনে একে অপরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে আছে।
ঘ. ‘সহজ, স্বাভাবিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক মানুষকে বেঁধে রাখে এক নিবিড় বন্ধনে’- ‘মমতাদি’ গল্পের আলোকে উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তরঃ সহজ, স্বাভাবিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক মানুষকে বেঁধে রাখে এক নিবিড় বন্ধনে, যা উদ্দীপক ও গল্পের আলোকে যথার্থ। গল্পের মমতাদি সহজ অথচ স্বাভাবিক এক সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল বাড়ির ছোটকর্তার সাথে, যেভাবে উদ্দীপকের রতন ও পোস্টমাস্টারের সাথে সম্পর্কিত ছিল। উভয় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, পারস্পরিক সৌহার্দ্য দিয়ে মানুষ একে অপরকে কিভাবে বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখে।
‘মমতাদি’ গল্পের মমতাদি গল্পকথকদের বাড়িতে কর্মে নিযুক্ত হওয়ার দিন থেকেই গল্পকথক তার আদরের প্রত্যাশী ছিল। এক সময় তারা দু’জন সত্যিকার অর্থেই অপূর্ব এক নিবিড় বন্ধনে জড়িয়ে পড়ে। মমতাদি গল্পকথককে ছোট ভাইয়ের মতো আদর করতো, আর তাকে ভালোবাসতে গল্পকথকেরও ছিল না কোনো দ্বিধা।
পোস্টমাস্টার গল্পের রতন ও পোস্টমাস্টারের মধ্যে পল্লিপ্রকৃতির মতো সহজ, সরল ও নিবিড় সে সম্পর্ক। পোস্টমাস্টারের প্রতি রতনের ছিল প্রচণ্ড মমত্ববোধ আর রতনের প্রতি তার ছিল অগাধ স্নেহ। তাই চলে গেলেও রতন পোস্টমাস্টারকে ভুলতে পারে না।
উদ্দীপক ও আলোচ্য গল্পের বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পেশাগত পরিচয়কে ছাপিয়ে দু’ক্ষেত্রেই মুখ্য হয়ে উঠেছে মানুষের প্রতি মানুষের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। সৌহার্দ্য, সহজ ও স্বাভাবিক উপায়েই মানুষকে বেঁধে রাখে নিবিড় এক বন্ধনে, যা চিরন্তন। উদ্দীপক ও গল্পে আমরা তারই প্রতিফলন দেখতে পাই। এ দিক থেকে প্রশ্নোক্ত যথার্থ হয়েছে।
- বাংলা ১ম পত্র | উপেক্ষিত শক্তির উদ্বোধন | সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১১ জনৈক গবেষক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে বলেছেন— সমাজের নিচের দিকের মানুষকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সাহিত্যে চিরায়ত করে তুলেছেন। তাদের চরিত্রকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন সাবলীল। তাঁর হাতে সৃষ্ট বিখ্যাত চরিত্রের অনেকগুলোই সমাজের নীচু শ্রেণির মানুষ ।
ক. ‘মমতাদি’ গল্পটি কে রচনা করেছেন?
খ. ‘মমতাদি’ গল্পে মমতাদির মধ্যে কীভাবে মানবিকতার প্রকাশ ঘটেছে?
গ.উদ্দীপকের বক্তব্য অনুসারে মমতাদির চরিত্রের স্বতঃস্ফূর্ততা ব্যাখ্যা করো ।
ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য অনুসারে গল্পের মমতাদির চরিত্রকে চিরায়ত বলা যায় কি? এ সম্পর্কে তোমার মতামত তুলে ধরো।
১১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ‘মমতাদি’ গল্পটি কে রচনা করেছেন?
উত্তরঃ ‘মমতাদি’ গল্পটি রচনা করেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
খ. ‘মমতাদি গল্পে মমতাদির মধ্যে কীভাবে মানবিকতার প্রকাশ ঘটেছে?
উত্তরঃ ‘মমতাদি’ গল্পে ছোট ছেলেটি ও তার পরিবারকে আপন করে নেয়ার মধ্যদিয়ে মমতাদির মানবিকতা প্রকাশ পেয়েছে। রাঁধুনি হিসেবে কাজে যোগ দিলেও শুধু কাজের মধ্যে মমতাদি সীমাবদ্ধ -থাকে নি। তার স্নেহ পেয়েছে বাড়ির ছোট ছেলেটি। এছাড়া বাড়ির অন্যদের কাছ থেকে ভালোবাসা পেয়ে সেও তাদের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে ওঠে। ফলে স্বামী চাকরি পেলেও সে কাজ ছাড়তে রাজি হয় নি। আর এভাবেই মমতাদির ভেতর মানবিকতাবোধের প্রকাশ ঘটেছে।
গ. উদ্দীপকের বক্তব্য অনুসারে মমতাদির চরিত্রের স্বতঃস্ফূর্ততা ব্যাখ্যা করো।
উত্তরঃ উদ্দীপকে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের চরিত্র সৃষ্টির যে দক্ষতার কথা বলা হয়েছে তা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ‘মমতাদি’ গল্পেও মমতাদির মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। সমাজে জাত-পাতের ভেদ অতীব প্রাচীনকাল থেকেই। কিন্তু বর্তমানে তা যে একেবারে নাই তা নয়। তবুও মানুষ পূর্বের তুলনায় এখন অনেক উদার ও মানবিক। সমাজে প্রকৃত মনুষ্য লোকের স্বাদ-আস্বাদন করতে হলে ছোট-বড় সব পেশাকেই সমান মূল্য দিতে হবে।
‘মমদাদি’ গল্পে দেখা যায়, মমতাদি রাঁধুনি হিসেবে কাজ নিলেও তার আত্মসম্মানবোধ ছিল প্রখর। তাই রাঁধুনি পরিচয়টিকে সে সহজে মেনে নিতে পারে নি। প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেতন পেলেও তাকে লোভী হতে দেখা যায় না। বরং রান্না করলেও সে । সেখান থেকে কোনো খাবার গ্রহণ করে নি। ছোট ছেলেটিকে সে ভাই বলে সম্বোধন করে তাকে স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ করেছে। বাড়ির কর্ত্রীকে মন জয় করেছে কাজের শৃঙ্খলা ও ক্ষিপ্রতা দিয়ে।
এমনকি স্বামীর অত্যাচারের কথাও সে কৌশলে ব্যক্ত করেছে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সাহিত্যে সমাজের নিচের দিকের মানুষ পেয়েছে আলাদা মর্যাদা। ‘মমতাদি’ গল্পে এর ব্যত্যয় ঘটেনি। এখানে যে কয়টি চরিত্র সৃষ্টি করেছেন গল্পকার তার মধ্যে মমতাদি চরিত্রটি সবচেয়ে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। চরিত্রের স্বতঃস্ফূর্ততা আমাদের প্রবলভাবে আলোড়িত করে।
ঘ. উদ্দীপকের বক্তব্য অনুসারে গল্পের মমতাদির চরিত্রকে চিরায়ত বলা যায় কি? এ সম্পর্কে তোমার মতামত তুলে ধরো।
উত্তরঃ উদ্দীপকের বক্তব্য অনুসারে মমতাদির চরিত্রকে চিরায়ত বলা যায়; কারণ মমতাদির চরিত্রে কর্তব্যনিষ্ঠা ও মানবিকতার এক অপূর্ব সমাবেশ ঘটেছে।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে যে কয়টি নারী চরিত্র সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে শাশ্বত, চিরন্তন, সাবলীল, মমতাময়ী নারী চরিত্র হলো মমতাদি। লেখক তাঁর শৈল্পিক দক্ষাতায় অত্যন্ত দরদ দিয়ে এই নারী চরিত্রটি সৃষ্টি করেছেন। গল্পে মমতাদি নিতান্ত পরিচিত বেশে কাজের জন্য এলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সে বাড়ির আপনজন হয়ে ওঠে। বাড়ির ছোট ছেলেটি তার স্নেহ পেয়ে তাকে দিদি বলে সম্বোধন করে।
এছাড়া বাড়ির অন্যান্য মানুষ ও তার কাজের প্রশংসা করতে কুণ্ঠিত হয় না। উদ্দীপকে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের চরিত্র সৃজন নিয়ে যে বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে তার সার্থক প্রতিফলন ঘটেছে মমতাদির চরিত্রে। মমতাদি সমাজের নীচু শ্রেণির মানুষের প্রতিনিধি। তবে বক্তব্য প্রকাশ ও আচরণে সে সাবলীল। তার মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত একটি মনোভাব লক্ষ করা যায়।
মমতাদি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো সাধারণ চরিত্র নয়। এ চরিত্রে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি বিষয়ের অপূর্ব সমাবেশ ঘটিয়েছেন। ফলে মমতাদি সাধারণের মধ্যেও পেয়েছে অসাধারণ এক মহিমা। তার চরিত্রে কর্তব্যপরায়ণ মনোভাব ও মানবিকতাবোধের অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে। এ সমস্ত কারণেই তার চরিত্রকে চিরায়ত চরিত্র বললে অত্যুক্তি হয় না।
চাকরির খবর ও নোটিশ পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো করুন ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । অন্যান্য সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।