তাহিরপুর উপজেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? (ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থান)
প্রকৃতির অপরুপ সাজে সজ্জিত তাহিরপুর উপজেলা। খাল বিল-নদীনালা অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বরপুর এই উপজেলা।
অবস্থান:
বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি প্রশাসনিক এলাকা হলো তাহিরপুর । তাহিরপুর উপজেলার উত্তরে ভারতের মেঘালয়, ত্রিপোরা, আসাম। দক্ষিণে: জামালগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে: বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা, পশ্চিমে: মধ্যনগর উপজেলা।
ভ্রমন হলো মনের খুরাক
পৃথিবীতে কেউ শান্ত নেই সবাই অস্থির। কেউ জীবিকার তাগিদে কেউ বা চারোরির পিছনে আবার কেউবা ডিপ্রেশনে ভোগেছে মনের চাপে। অবশেষে আমরা মুখাপেক্ষি হই মনকে আনন্দ ও আহ্লাদে রাখতে। কিন্তু মনকে ভলো রাখার সবচেয়ে বড় একটি পন্থা হলো ”আনন্দ-ভ্রমন”।
আল্লাহর মনোরম সৃষ্টি ও সুন্দর প্রকৃতি ভ্রমনেই আমাদেরকে বেচে থাকার এক নতুন উচ্ছাস তৈরি করে। যার ফরে আমরা আমাদের মনকে অনেকটাই প্রশান্ত করতে পারি। আপনার চোখ ও মন জুড়ানো গুরুত্বপূর্ণ স্থান হলো জনমহলে পরিচিত সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলাটি।
তাহিরপুরের পর্য়টন ক্রেন্দ্র/দর্শনীয় স্থান সমূহঃ
১। টাঙ্গুয়ার হাওরঃ
বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ জলাশয় হলো টাঙ্গুয়ার হাওর। টাঙ্গুয়ার হাওরে রয়েছে অসংখ্য মাছ ,বন, পাখি, নির্মল বায়ূ, উন্মুক্ত আকাশ। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় জলাভূমি। বর্ষাকালে হাওরটির আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২০ হাজার একর। আর তার যে সৌন্দর্য, তা স্ব-চোক্ষে না দেখলে ঠিক বুঝা যাবে না।
বিশেষ করে শীতকালে অতিথী পাখিরা যখন জলমগ্ন এই হাওরে অবস্থান করে তখন সত্যিই দেখতে এক কথায় অসাধারণ লাগে। ভারতের মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত এই টাঙ্গুয়ার হাওর। এই কঠিন শৈলভূমির মেঘালয় পর্বত থেকে প্রায় ৩০টিরও বেশি ঝর্ণা এসে সরাসরি সংযোগ হয়েছে টাঙ্গুয়ার হাওরের পানিতে।
পাখিদের কলকাকলি সদা মুখরিত টাংগুয়ার হাওর। এটি মাছ, পাখি এবং অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক বিশাল অভয়াশ্রম। টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রবেশ মুখেই দেখা যায় অনেকগুলো হিজলগাছ। দেখে মনে হবে এই গাছগুলো হাওরে আগত অতিথিদের স্বাগতম জানাতেই দাঁড়িয়ে আছে।
মূল হাওরে প্রবেশ করলে হাওরের পানিতে নিচের দিকে তাকালে দেখা মিলবে সবুজ প্রসারিত জলজ উদ্ভিদের মহা সমাবেশ যা দেখে মনে হবে পানির নিচে আরেক সবুজের স্বর্গরাজ্য।
২। চক চকে নীল পানির যাদুকাটা নদী ও বারেক টিলাঃ
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিয়ে বরপুর আরেক লীলা ভূমি হলো বারেক টিলা। এই বারেক টিলার উপরে রয়েছে অস্যখ্য ছোট বড় পাহাড়। বারেক টিলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে কখন যে, লোকজন ভারতের সীমানায় গিয়ে পৌছে যায় তা বুঝেই উঠতে পারে না। বারেক টিলার উপর থেকে নিচের দিকে থাকালেই চোখে পরে চক চকে নীল পানির যাদুকাটা নদী।
এই নদী থেকে বালু উৎত্তেলন করে এলাকর লোকজন জীবিকা নির্াহ করে। এলাকাবাসী এই টিলাকে বারিক্কার টিলা, বারিক টিলা বলেও ডাকে। টিলার ওপর দাঁড়িয়ে দেখা যায় দূর পাহাড়ের মেঘের হাতছানি। সবুজে মোড়া উঁচু টিলার একপাশে পাহাড়, অন্যপাশে স্বচ্ছ জলের নদী। হাওর-নদী-পাহাড়ের এই অপরূপ সৌন্দর্যের এ লীলাভূমি একটি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।
পূর্বে যাদুকাটা নদী, সে নদীর চিক চিক জলরাশি আপনাকে আকর্শন করতে বাধ্য। উত্তরে ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে বয়ে চলা হিমশীতল জলে গাঁ ভাসানোতে রয়েছে এক অন্যরকম অনুভুতি। প্রতিনিয়ত অসংখ্য লোকজন বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসে এই অপরূপ সৌন্দর্ উপভোগ করার জন্য।
৩। শিমুল বাগানঃ
বারেক টিলার অদূরেই অবস্থিত আরেক নান্দনিক পর্যটন এলাকা যার নাম হলো শিমুল বাগান।বাদাঘাট ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাজী মোঃ জয়নাল আবেদিন সাহেব শখের বসে বিশাল এলাকা জুড়ে রোপন করেছিলেন শিমুল বৃক্ষ, যা আজ অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়েছে এই বিশাল বাগান।বিশেষ করে মার্চ এপ্রিলের দিকে শিমুল বাগান ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
কারন এ সময় বাগানে নতুন ফুল ফুটে আর ফুলে ফুলে সুরভিত এবং সুভাসিত হয় চারপাশের এলাকা। লালে লাল হয়ে আগুন রাঙ্গা এক বাগান হয়ে উঠে এই শিমুল তখন তা সত্যিই প্ররিদর্শন করার ইচ্ছা জাগে।বর্তমানে প্রতি বছর দেশ বিদেশের হাজার হাজার পর্যটক তা পরিদর্শন করতে যায়।
নিঝুম দ্বীপ | ভ্রমণ খরচ এবং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
৪। নীলাদ্রী শহীদ সিরাজ লেকঃ
টাঙ্গুয়ার হাওরের পাশেই একদম পাহারের কুল ঘেষে রয়েছে এই লেকটি। লেকের আশেপাশে অনেক সুন্দর সুন্দর উচু নিচু টিলা পাহাড় বিদ্ধমান। একসময় এই লেক থেকে চুনাপাথর উত্তোলন করা হতো। খতিত আছে যে এই এলাকা চুনাপাথরের খনি ছিল। আর এখান থেকে চুনাপাথর উত্তোলন করে করা হয়েছে এক বিশাল গর্ত যা থেকে সৃষ্টি হয়েছে এই লেক।
এলাকার লোকজনের কাছে এটা কোয়ারী নামেই পরিচিত । এর পানির রঙ এতটা নীল আর প্রকৃতির এক মায়াবী রুপ। যা দেখে ভ্রমনে আসা লোকজন গা না ভিজিয়ে থাকতেই পারে না। এই লেক এর মধ্যে রয়েছে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা যা বৈটা দিয়ে বেয়ে বেয়ে এপাড় থেকে উপাড়ে যেতে শখের বশে লোকজন চড়ে। আসলেই এটি একটি মনোমোগ্ধকর দৃশ্য।
৫। লালঘাট ঝর্ণাধারাঃ
প্রকৃতিপ্রেমী ভ্রমণ পিপাসু ও পর্যটকের দল যখন টাঙ্গুয়া, নীলাদ্রি, বারেক টিলা, শিমুল বাগন পরিদর্শনে আসে তখন তারা এই লালঘাট ঝর্ণাধারায় না গিয়ে থাকতে পারে না। মনে হয় তারা কি যেন একটা স্থান মিস করেছে। পর্যটদের নিকট এখন নতুন ঠিকানা হয়ে ওঠছে এই লালঘাট ঝর্ণাধারা।
৬। পাহাড়ের পাদদেশে লাকমা ছড়াঃ
নীলাদ্রি শহীদ সিরাজ লেকের অদূরেই অবস্থিত, ট্যাকরঘাট বাজার, বাজারের অপর পার্শেই রয়েছে ট্যাকেরঘাট চুনাপাথর খনি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এন্ড কলেজ। যার কুল ঘেশেই প্রতিনিয়ত বহমান লাকমা ছড়া। পাহাড় থেকে নেমে আসা জল এই ছড়া দিয়েই বয়ে চলে। যা দেখতে প্রচুর লোকজন প্রতিনিয়ত এখানে আসে।
সুনামগঞ্জ থেকে তাহিরপুরের দূরত্বঃ সুনামগঞ্জ জেলা থেকে তাহিরপুর উপজেলার দূরত্ব হলো প্রায় ৩৪.৫ কিলোমিটার।
তাহিরপুর থেকে উপরোক্ত স্থান সমূহে যাথায়াতের ব্যবস্থাঃ
তাহিরপুর থেকে বর্ষাকালে নৌকা দিয়ে উরোক্ত পর্য়টন ক্রেন্দ্রসমূহে যাওয়া আসা করা যায় এমনকি মটর সাইকেলেও যাওয়া যায়। অসংখ্য ছোট বড় নৌকা রয়েছে উপজেলার ঘাটে। একেকটি নৌকায় ১৫-২০ জন করেও যাওয়া আসা করা যায়। নৌকাগুলোতে রয়েছে থাকা খাওয়া গোসলসহ সব কিছুর ব্যবস্থা। কিন্তু হেমন্তকালে এ সমস্থ এলাকা সমূহে যাথায়াত করার জন্য কোনো নৌকা পাওয়া যায় না।
চাকরির নিয়োগ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো দিয়ে ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।