ভ্রমণ গাইড

নিঝুম দ্বীপ | ভ্রমণ খরচ এবং ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

প্রবাহমান স্বচ্ছ পানির জলরাশি এবং অপরূপ সৌন্দর্যের নিলা-নিকেতন বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা প্রকৃতির অফুরন্ত সৌন্দর্যমন্ডিত পর্যটক স্থান নিঝুম দ্বীপ। যেটা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং সুপরিচিত টুরিস্ট স্পট হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে।

ভ্রমণ পিয়াসি মানুষের কাছে খুবই পছন্দের জায়গা হয়ে উঠেছে এই দ্বীপটি। যেখানের পরিবেশ অত্যন্ত সুন্দর। তাই সুন্দর মুহূর্ত কাটাতে প্রিয়জন সাথে নিয়ে আপনিও যেতে পারেন সেখানে। তবে হ্যাঁ, শুধুমাত্র কিছু সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর জন্যই যে এই দ্বীপটি উপযুক্ত স্থান এমনটাও নয়। সত্যি বলতে ফ্যানিল সাগরের মাঝে কোন দ্বীপ ভ্রমণ করা শরীর ও মন দুটোর জন্যই ভালো।

আর তাই এটি হয়ে উঠতে পারে একজন পর্যটকের অত্যন্ত উপভোগ্য স্থান। আর তাইতো এরই মধ্যে্কি এই স্থানটিকে তুলনা করা হয়েছে স্বর্গের সাথে। কেননা অনেকেই বলেন সাগরের মাঝে এক টুকরো স্বর্গ রাজ্য।

তো আসুন জেনে নেই– এখানে যদি আপনি ভ্রমণ করতে চান তাহলেে- এখানে ভ্রমণ খরচ কত পরবে এবং সেখানে গেলে কি কি উপভোগ করতে পারবেন পাশাপাশি দ্বীপটি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন ইত্যাদি বিষয়গুলি সম্পর্কে খুঁটিনাটি।

নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণ

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত বঙ্গোপসাগরের অত্যন্ত ছোট্ট স্নিগ্ধ ও মনোমুগ্ধপূর্ন একটি দ্বীপ “নিঝুম দ্বীপ”। যার আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর. যেখানে উপভোগের জন্য রয়েছে অনেক কিছু যা লিখে শেষ করা যাবেনা।

জানা গিয়েছে ঘনবসতি গড়ে ওঠার একদম শুরুর দিকে জনপ্রিয় এই টুরিস্ট স্পটটি পরিচিত ছিল বাউললার চর এবং চর ওসমান নামে। অতঃপর এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে নামকরণ করা হয় নিঝুম দ্বীপ। অতঃপর ধীরে ধীরে খুবই জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই দ্বীপটি।

নিঝুম দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ

জানা গিয়েছে– এই দ্বীপটি মূলত কমলারচর, চর মুরি, বল্লারচর এবং চর ওসমান এই চারটি দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত একটি দ্বীপ। যেটা সৌন্দর্যের দিক থেকে অনেক বেশি স্নিগ্ধতাপূর্ণ হলেও আয়তনের দিক থেকে অনেকটাই ছোট। এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ– চৌধুরী খাল ও কবিরাজের চর।

এছাড়াও এখানকার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে আরো রয়েছে—

১. ম্যানগ্রোভ বন
২. কুমারী সী বিচ
৩. কমলার দ্বীপ
৪. চোয়াখালী সি বিচ
নামা বাজার সি বিচ সহ প্রভৃতি।

পর্যটকদের বক্তব্য থেকে আরও জানা গিয়েছে– এটি শীতকালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনেক বেশি মনোমুগ্ধকর হয়ে ওঠে । কেননা শীতকালে এখানে হাজারো অতিথি পাখির আগমন ঘটে— সরালি, জিরিয়া, লেনজা, পিয়ং, রাঙ্গামুড়ি, চখাচখি, ভূতিহাঁস, রাজহাঁস, কাদাখোঁচা, পেলিক্যান পাখি, বাটান পাখি, জিরিয়া, গুলিন্দা, গাংচিল পাখি, কাস্তেচরা, ইত্যাদি ।

তার সাথে আরো চোখে পড়ে স্থানীয় পাখির মধ্যে সামুদ্রিক ঈগল, বক শঙ্খচিল। এছাড়া সেই দ্বীপে রয়েছে হরিণ, বন্য শূকর, শেয়াল, বানর এবং নানা রকম সাপ। যার সবকিছুই উপভোগ করতে পারবেন একজন পর্যটক হিসেবে।

এখন প্রশ্ন হলো – এই জায়গাটিতে কখন যাবেন অতএব ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন, যাওয়ার উপায় কি এবং ভ্রমণে গেলে কোথায় থাকবেন, কি খাবেন এবং কত টাকা খরচ পড়তে পারে!

নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

এই দ্বীপটিতে ভ্রমণের সেরা সময় হলো শীতকাল ও বসন্তকাল অর্থাৎ অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়। কেননা শীতকাল এবং বসন্তকালে আবহাওয়ার কারণে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হয়ে ওঠে আরও বেশি সুন্দর।

অপরদিকে অন্যান্য ঋতুতে এর সৌন্দর্যে কিছুটা কমতি থাকে। কেননা অন্য ঋতুগুলোতে সাধারণত বর্ষা এবং ঝড় দেখা দেয়, যে কারণে সাগর অনেক বেশি উত্তাল থাকে এবং বিপদেরও আশঙ্কা থেকে থাকে কিছুটা বেশি।

নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে যাওয়ার উপায় ও ভ্রমণ খরচ

এখান ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য আপনি তিনটি মাধ্যম বেছে নিতে পারেন। যথা– সড়ক পথ, রেলপথ এবং নৌপথ। ইতোমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি বাংলাদেশের দক্ষিণের বিভাগ চট্টগ্রামের নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত হাতিয়া উপজেলার ছোট্ট একটি দ্বীপ এটি।

আর এই দ্বীপটি সাগরের মাঝখানে জেগে উঠেছিল ১৯৪০ সালের দিকে। পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকার জাতীয় উদ্যান হিসেবে এটিকে ঘোষণা প্রদান করেন ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল। অতঃপর ২০১৩ সাল নাগাদ এই দ্বীপটি হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে স্বতন্ত্র একটি ইউনিয়নের মর্যাদা লাভ করে।

আর বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত জনপ্রিয় এই টুরিস্ট স্পটটি ভ্রমণ করতে সেখানে যেতে পারেন উপরে উল্লেখিত তিনটি মাধ্যমই। এক্ষেত্রে আপনি যদি নৌপথে যাতায়াত করেন তাহলে মোটামুটি খরচ পড়বে প্রতিজনে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা এবং প্রতি কেবিনের জন্য মোটামুটি ১২০০ টাকা। আর যদি আপনি ডাবল কেবিন ভাড়া করতে চান সেক্ষেত্রে খরচ পড়বে ২২০০ টাকা।

অন্যদিকে যদি সড়ক পথে যাতায়াতের কথা চিন্তা করেন সেক্ষেত্রে বাসে যেতে মোটামুটি ভাড়া পড়বে ৩৫০ থেকে শুরু করে ৪৫০ টাকা। সেই সাথে সিএনজি অথবা অটোতে করেও যেতে হবে কিছুটা রাস্তা, যার জন্য আরো খুচরা ভাড়া পড়বে প্রায় ১০০ টাকা। অন্যদিকে যদি ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান সেক্ষেত্রে খরচ পড়বে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

এখন আপনি মূলত বাংলাদেশের কোন জেলায় অবস্থান করছেন তার ওপর নির্ভর করে ভ্রমণ খরচের তারতম্য ঘটবে। তবে আমরা ইতিমধ্যে যে খরচের ধারণাটা প্রদান করেছি এটা মূলত ঢাকা থেকে এই দ্বীপটিতে পৌঁছানোর যাতায়াত খরচ।

তবে আপনি যদি পুরাপুরি ভ্রমণ খরচ জানতে চান তাহলে এটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। কেননা আপনি কেমন হোটেলে থাকছেন, কতদিন ভ্রমণ করছেন, কোথায় থাকছেন কোন ধরনের খাবার খাচ্ছেন এবং কি কিনছেন ইত্যাদি এই সকল বিষয়ের উপর নির্ভর করবে ভ্রমণ খরচ।

তবে আমরা বলব– আপনি যদি একলাে ভ্রমণে যান সে ক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে এনজয় করতে মোটামুটি পাঁচ হাজার টাকা খরচ পড়বে।

কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন

নিঝুম দ্বীপে থাকা খাওয়ার রয়েছে প্রচুর সুযোগ সুবিধা। তাছাড়াও সেখানে রয়েছে ক্যাম্পেইনের সুব্যবস্থা। আপনি মূলত থাকার জন্য বেশ ভালো কিছু রিসোর্ট, হোটেল বুক করতে পারবেন। কেননা সেখানে ডিসকাউন্টে রুম ভাড়া পাওয়া যায়। এর জন্য আপনি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন নিম্ন বর্ণিত ঠিকানায়।

নিঝুম দ্বীপের অফিস: : ০১৭২৪-১৪৫৮৬৪, ০১৮৪৫-৫৫৮৮৯৯,০১৭৩৮-২৩০৬৫৫(সবুজ)
ঢাকা অফিস: অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, আলহাজ সামসুদ্দিন ম্যানসন (নয় তলা), ১৭ নিউ ইস্কাটন রোড । ফোনঃ ৯৩৪২৩৫১, ৯৩৫৯২৩০, ৮৩৫৮৪৮৫, ০১৫৫২-৩৭২২৬৯

নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কিত বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর

১. নিঝুম দ্বীপ কোথায় অবস্থিত?
✓ নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত।

২. নিঝুম দ্বীপ কোন নদীর মোহনায় অবস্থিত?
✓ মেঘনা নদীর মোহনায় নোয়াখালীতে অবস্থিত।

৩. নিঝুম দ্বীপের আয়তন কত?
✓ আয়তন ১৪,০৫০ একর

৪. নিঝুম দ্বীপ এর পূর্ব নাম
✓ পূর্ব নাম ছিল চর ওসমান এবং বাউললার চর। তবে কেউ কেউ এটিকে ইছামতির চড় বলেও সম্বোধন করত।

৫. নিঝুম দ্বীপ কেন বিখ্যাত?
✓ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং শান্ত নিরব পরিবেশের কারণে বিখ্যাত। আবার একটু ভিন্নভাবে বললে বলা যায়- মৎস্য আহরণ এবং সমুদ্র সৈকত, উপকূলীয় সবুজ বেষ্টনী অঞ্চল এবং অতিথি পাখির আগমনের জন্য নিঝুম দ্বীপ বিখ্যাত।

তো পাঠক বন্ধুরা, নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কিত আলোচনার সমাপ্তি টানছি এখানেই। ভ্রমণ সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্ট সেকশনে জানিয়ে দেন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।

 

চাকরির খবর ও নোটিশ পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো করুন ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । অন্যান্য সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button