অন্যান্য

বাংলা ১ম পত্র | সুভা গল্পটি হতে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | ১১-১২

সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ২০২৩

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত সুভা গল্পটি বাংলা ১ম পত্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় । এখান থেকে প্রায় প্রতি বছরই এসএসসি পরিক্ষায় প্রশ্ন আসে সুতরাং সুভা গল্পের এই প্রশ্ন উত্তর গুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন ।

এসএসসি – সুভা গল্পের সৃজনশীল প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন ১১ “নাহি বর্ণনার ছটা ঘটনার ঘনঘটা
নাহি তত্ত্ব নাহি উপদেশ
শেষ হয়েও হইল না শেষ।”

ক. ‘সুভা’ কী জাতীয় রচনা?
খ. ‘সুভা’ গল্পের পরিণতি ব্যাখ্যা করো।
গ. শেষ হয়েও হইল না শেষ’-উদ্দীপকের এ অনুভূতি ‘সুভা’ রচনার আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে-‘সুভা’ রচনার ক্ষেত্রে এ বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা মূল্যায়ন করো।

১১ নং প্রশ্নের উত্তর ক

‘সুভা’ একটি ছোটগল্প।

১১ নং প্রশ্নের উত্তর

প্রতিবন্ধিতার কারণে একান্ত আপনার জগৎ ছেড়ে যেতে বাধ্য হওয়ার পরিস্থিতিতেই ‘সুভা’ গল্পের সমাপ্তি ঘটেছে। বালতিবন্ধী সুভা প্রকৃতির মাঝে নিজের মতো করে একটি জগৎ তৈরি করে নিয়েছিল। কিন্তু অন্ধ-মূক সমাজের রক্তচক্ষুকে • করতে পারে না সুভা কিংবা সুভার মা-বাবা কেউই। সুভার নিকট নিজের জগৎ ছেড়ে দেওয়ার বাধ্যবাধকতা এসে পড়ে। তাই নিরূপায় অসহায় সুভার নিজের জগতে টিকে থাকার জন্য প্রকৃতির নিকট কাতর আবেদনের মাধ্যমেই

১১ নং প্রশ্নের উত্তর গ

প্রয়োজনের তাগিদেই মানুষকে অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। ইচ্ছা অনিচ্ছা সেখানে গৌণ হয়ে যায়। পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতার তাকে ছাড়তে হয় প্রিয় জিনিসগুলো যা উদ্দীপকের বর্ণনায় ও সুভার মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে।

‘সুভা’ গল্পের কিশোরী সুভা বাক্প্রতিবন্ধী বলে তার সাথে কেউ মিশতে চায় না। এ কারণে সে তার চারপাশের প্রকৃতির নিজের একটা জগৎ সৃষ্টি করে নিয়েছে। কিন্তু সামাজিক পীড়নে সুভার এ পরিচিত জগৎ থেকে বিচ্যুত হওয়ার বাধ্যবাধকতা এসে যায়। বাবা-মা কলকাতায় নিয়ে গিয়ে সুভার বিয়ে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়।

পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে যাওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রত্যাশাতেই অসহায় সুভা নিজের মিনতিপূর্ণ প্রার্থনা করেছে প্রকৃতির নিকট। ‘সুভা’ গল্পে সুভার শেষ পরিণতি গল্পকার নির্দিষ্ট করেন নি। সুভার কাতর প্রার্থনাতে প্রকৃতি সদয় হয়েছে কি না, পরিস্থিতির বাধ্যবাধকতায় সুভাকে কলকাতায় পাড়ি দিতে হয়েছে কি না; সুভা গল্পে তা অস্পষ্ট থেকে গেছে।

পরিণতি সুস্পষ্ট না হওয়ায় ‘সুভা’ গল্পটি যেন শেষ হয় নি, বাকি থেকে গেছে। ঠিক যেন উদ্দীপকের শেষ উক্তিটির মতো ‘শেষ হয়েও হলো না শেষ। তাই স্পষ্টভাবেই বলা যায়, উদ্দীপকের এ অনুভূতিটি ‘সুভা’ গল্পে প্রত্যক্ষভাবেই এসেছে।

১১ নং প্রশ্নের উত্তর ঘ

উদ্দীপকে ছোটগল্পের যে বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে ‘সুভা’ রচনাটির ক্ষেত্রে তা পুরোপুরিই প্রাসঙ্গিক।পরিবেশ পরিস্থিতি অনেক সময় মানুষকে বাধ্য করে চিরচেনা পরিবেশও আপনজনকে ছাড়তে। তখন মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কোনো মূল্য থাকে না। প্রয়োজনের তাগিদে তাকে সব পরিস্থিতি স্বীকার করে প্রয়োজনকে মানতে বাধ্য করা হয়। এমনিভাবে স্ফুরণ ঘটেছে ‘সুভা’ গল্পের সুভার কলকাতায় থাকার ঘটনায় ।

‘সুভা’ গল্পটি একটি বাক্প্রতিবন্ধী কিশোরীকে নিয়ে রচিত। স্বচ্ছ-সরল নিটোল বর্ণনায় এই অসহায় কিশোরীটির উচ্ছলতা, চঞ্চলতা, আবেগ, অনুভূতি প্রকশ পেয়েছে। গল্পকার শেষ পরিণতির ইঙ্গিত দিয়েছেন, সুভাকে তার আপনার পরিবেশ ছেড়ে কলকাতায় যেতে বাধ্য হওয়ায় পরিস্থিতি তৈরি করে।

এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সুভার প্রার্থনার মধ্য দিয়েই শেষ হয় গল্পটি। উদ্দীপকে ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্য কবিতার ভাষায় এসেছে। ছোটগল্পে বর্ণনার আধিক্য থাকবে না। ঘটনার ঘনঘটা থাকবে না, এবং পড়ার পরে মনে একটি অতৃপ্তি রয়ে যাবে- যেমন শেষ হয়েও শেষ হবে না।

‘সুভা’ গল্পে বর্ণনার কোনো আধিক্য নেই। লেখকের ব্যক্তিগত কোনো তত্ত্ব ও উপদেশ এখানে পাঠকের ওপর চাপিয়ে নেওয়া হয়, নি। সমাপ্তিতে আরও উজ্জ্বলভাবে উদ্দীপকের বৈশিষ্ট্য প্রতীয়মান হয়। গল্পকার প্রচ্ছন্ন একটা অস্পষ্টতা রেখেছেন সুভার পরিণতির ব্যাপারটিতে।

গল্পটি যেন পাঠকচিত্তে একটা ধাঁধার সৃষ্টি করে। তাই সার্বিক বিশ্লেষণে বলা যায়, ছোটগল্পের যে বৈশিষ্ট্য উদ্দীপকে এসেছে তার পুরোটাই ‘সুভা’ রচনাটিতে বিদ্যমান।

| বাংলা ১ম পত্র | সুভা গল্পটি হতে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | ১১-১২
বাংলা ১ম পত্র | সুভা গল্পটি হতে সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | ১১-১২

প্রশ্ন ১২ সুমী দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনি বৃদ্ধিতে ও প্রখর। বাবা-মা তাকে পাত্রস্থ করার জন্য বিবাহের দিন ধার্য করে। বিয়ের তিন দিন পূর্বে সড়ক দুর্ঘটনায় সুমী চিরতরে পঙ্গুত্ব বরণ করে। ভেঙ্গে যায় সুমীর বিয়ে। গ্রামের মানুষ অলক্ষ্মী, অপয়া বলে প্রকাশ্যে কুৎসা রটনা করতে থাকে। এ কাজে পর্দার অন্তরালে ইন্ধন জোগায় তারই গ্রামের হারুন মন্ডল। বৃদ্ধ হারুন মণ্ডল সুমীকে বিবাহ করতে চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়। শেষ পর্যন্ত সুমীর বাবা-মা সামাজিক কুৎসা সহ্য করতে না পেরে মেয়েকে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের এক পিসিমার বাড়ি। সুমী ক্ষোভে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে।

ক. ‘কপোল’ শব্দের অর্থ কী?
খ. নদীতটে পুষ্পশয্যায় লুটিয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে সুভার মনের কী ধরনের আকুতি প্রকাশ পেয়েছে?
গ. উদ্দীপকের সুমীর আত্মহত্যা সুভার পরিণতির সঙ্গে কীভাবে সম্পর্কযুক্ত? ব্যাখ্যা করো।
গ. সুভা ও সুমীর করুণ পরিণতির পেছনে নিষ্ঠুর সমাজব্যবস্থা কতটা দায়ী? মূল্যায়ন করো।

১২ নং প্রশ্নের উত্তর ক

‘কপোল’ শব্দের অর্থ- গাল।

১২ নং প্রশ্নের উত্তর খ

নদীতটে পুষ্পশয্যায় লুটিয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে নিজ বাসভূমি, চিরচেনা প্রকৃতি আর মানুষজনকে ছেড়ে অচেনাদের ভিড়ে থেকে না চাওয়ার আকৃতি প্রকাশ পেয়েছে। সুভার মনের পরম আত্মীয় ছিল নদীর কলধ্বনি, মাঝির গান, পাখির ডাক আর তার গোয়ালের দুটি গাভী।

কিন্তু নির্মম বাস্তবতার শিকার হয়ে তাকে যখন এ সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে হয়, তখন সে অসহায় হয়ে পড়ে। সে চির আপন প্রকৃতিকে, মাটিকে আঁকড়ে ধরতে চায়। একটু আশ্রয়ের আকুতি নিয়ে সুভা নদীতটে পুষ্পশয্যায় লুটিয়ে পড়ে। বস্তুত প্রশ্নোক্ত চরণটি দ্বারা সুভার চিরচেনা প্রকৃতির প্রতি গভীর মর্মবেদনা প্রকাশ পেয়েছে।

১২ নং প্রশ্নের উত্তর গ

পৃথিবীর প্রতিটি জিনিসই স্ব স্ব পরিবেশে দেখতে সুন্দর লাগে। আর এই সুন্দর পরিবেশে প্রতিটি জিনিসেরই নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। আস্তে আস্তে ঐ পরিবেশ তার হয়ে উঠে অতি আপনজন। কিন্তু প্রয়োজনের তাগিদে পরিস্থিতির শিকার হয়ে মানুষকে সেই পরিবেশ ছাড়তে হয় কখনও কখনও ।

‘সুভা’ গল্পের আপন পরিবেশে নিজের একটি আলাদা জগৎ তৈরি করে নিয়েছিল। নীরব প্রকৃতি, নদীর কলধ্বনি ছিল তার নির্জনতার সঙ্গী। গোয়ালের দুটো গাভী ছিল সুভাৱ সুখ-দুঃখের সাথী। সুভার মনের আনন্দ, বেদনা সবকিছুই তার এই মূক বন্ধু দুটো বুঝতে পারত। মাছ ধরতে আসা প্রতাপের সাথেও সুভার অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠেছিল।

কিন্তু বিয়ে ঠিক হওয়াতে নিজ বাসভূমি ছেড়ে যাওয়ার বেদনা সে সহ্য করতে পারে না। নদীতীরে গিয়ে তাই লুটিয়ে পড়ে বেদনাভরা আকুতি নিয়ে। উদ্দীপকের সুমীরও সুভার মতোই স্বজন, পরিবার ত্যাগ করে চলে যেতে হতো। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গু হয়ে যায় সে।

অসহায় সুমীর বিয়ে ভেঙে যায় এবং গ্রামের মানুষ তাকে নানাভাবে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। নানা রকম কুৎসা রটনার প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে সুমীর পরিবার। ফলে সুমীকে ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তার বাবা।

কিন্তু পরিবার পরিজন আর চিরচেনা পরিবেশ থেকে বিদায় নেওয়ার চেয়ে মৃত্যুকে সে শ্রেয় বলে বিবেচনা করে। সুভাও সুমীর মতো নিজের আবাসভূমি ছেড়ে যাওয়ার বেদনায় অসহায় হয়ে পড়ে। নদীতটে গিয়ে ধরণীর কাছে নিজেকে ধরে রাখার আকুতি জানায় সুভা।

১২ নং প্রশ্নের উত্তর ঘ

আমাদের সমাজে অসহায় প্রতিবন্ধীদের সমাজের বোঝা হিসেবেই দেখা হয়। আর সে প্রতিবন্ধী কোনো নারী হলে অনেক ক্ষেত্রেই সমাজে তাদের বসবাস করা দুরূহ হয়ে ওঠে। নানা ভাবে লাঞ্ছনার শিকার হতে হয় তাদের। সমাজের মানুষ সহানুভূতি না দেখিয়ে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় তাদের। যা উদ্দীপকের সুমী ও গল্পের সুভার জীবনে ফুটে উঠেছে।

উদ্দীপকে সুমী দুর্ঘটনার শিকার হয়ে পঙ্গু হয়ে যায়। বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় সমাজের মানুষ তার নামে নানা কুৎসা রটনা করে তার জীবনযাপনকে বিপর্যস্ত করে দেয়। গল্পের সুভা বাক্প্রতিবন্ধী বলে মানুষ তাকে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখত। বয়স বেড়ে যাওয়ায় বিয়ে হয় না বলে সুভার বাবা বাধ্য হয়ে কলকাতায় তার বিয়ে ঠিক করে।

গ্রামীণ পরিবেশে বেড়ে ওঠা সুভার প্রকৃতির সাথে একটি নিবিড় সম্পর্ক ছিল। প্রকৃতির সাথেই সে তার নির্জনতা, দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নিত। কিন্তু সহানুভূতিশীল সমাজের মানুষ তাকে এই প্রকৃতি থেকে আপন পরিবেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে। কলকাতায় বিয়ে ঠিক হওয়াতে নিজ বাসভূমি ছেড়ে চলে যেতে হবে শুনে বেদনায় ভেঙে পড়ে সুভা।

মনের আকুতি জানাতে সে নদীতটের পুষ্পশয্যায় গিয়ে লুটিয়ে পড়ে। অপর দিকে উদ্দীপকের সুমীও সামাজিক বৈরী পরিবেশের শিকার। বিকলাঙ্গ হওয়াতে তার বিয়ে ভেঙে যায়। আর সমাজের মানুষ তার নামে নানা কুৎসা রটনা ছড়ায়। ফলে দেশত্যাগী হওয়ার ভয়ে পরিস্থিতির কাছে হার মেনে আত্মহত্যা করতে হয় তাকে। সমাজের নির্মম বাস্তবতা আর সহানুভূতিহীনতাই সুভা এবং সুমীর করুণ পরিণতির জন্য দায়ী।

 

চাকিরর খবর ও নোটিশ পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো করুন ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । অন্যান্য সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button