কুয়াকাটা কোন জেলায় অবস্থিত? (ভ্রমণের সকল তথ্য)
সাগর কন্যা খ্যাত কুয়াকাটা পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপরি ইউনিয়নের দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। পর্যটকদের কাছে এই কুয়াকাটা অন্যতম একটি স্থান হিসেবে বিবেচিত। নৈসর্গিক খ্যাত কুয়াকাটার সৈকতটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮ কিলোমিটারের মতো। এখান থেকে আপনি সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় দুটি উপভোগ করতে পারবেন। কুয়াকাটার পশ্চিম দিক থেকে সূর্যাস্ত ভালোভাবে দেখা যায়। সারি সারি নারিকেল গাছগুলো এই সৈকতটির সৌন্দর্যের অনন্য একটি মাত্রা সৃষ্টি করেছে।
কুয়াকাটা সৈকতের পাশে বসতি গুলো গড়ে উঠেছে মুঘল আমল থেকে ।এই সৈকতটির সাথে জড়িয়ে আছে অনেক ইতিহাস। ১৮ শতক থেকে এই অঞ্চলে মুঘোল দের হাত ধরেই আরাকানরা বসবাস শুরু করেছিল। এই আরাকানরা মিঠা পানির অভাব পূরণ করার জন্য এ অঞ্চলের বিভিন্ন জায়গায় কুপ খনন করতো সেই সময় থেকেই এই অঞ্চলের নামটি কুয়াকাটা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানসমুহঃ
কুয়াকাটার কুয়া:
বৌদ্ধ বিহারের পাশে এই ঐতিহাসিক কুয়াটি অবস্থিত। ধারণা করা হয় ১৮০০ শতকের দিকে সামুদ্রিক এলাকায় লবনাক্ত পানি হওয়ার কারণে মিঠা পানির অভাব পূরণ করার জন্য কোয়াটি খনন করা হয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ঠিক অনুদানের মাধ্যমে কুয়াটিকে সংরক্ষণ করছে।
শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার:
কুয়াকাটাই বেড়াতে আসার পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হল রাখাইনদের নির্মাণ করে যাওয়া শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারি। এই মন্দিরের পাশেই রয়েছে একটি কুয়ো। যার নাম অনুসারে কুয়াকাটা নামটি রাখা হয়। এই বুদ্ধ মন্দিরটি সকলের কাছে শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার হিসেবে পরিচিত। মন্দিরটির জমির পরিমাণ ছিল ৯৯% । এটি 180 বছরে পুরনো।
শুটকি পল্লিঃ
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম পাশে অবস্থিত এই শুটকি পল্লী। এখান হাজারো মাছের শুটকি তৈরি করা হয়। তারপর এই শুটকি গুলো বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পল্লীতে নভেম্বর হতে মার্চ মাস পর্যন্ত শুটকি তৈরির কাজ চলমান থাকে। শুটকি পল্লিটির মূলত গড়ে উঠেছে পর্যটক কেন্দ্রিক।
নৌকা জাদুঘর:
পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হল কুয়াকাটায় অবস্থিত নৌকা জাদুঘরটি । এই জাদুঘরটির শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার ও রাখাইন মার্কেটের সাথে বেড়িবাধের ঢালে অবস্থান । এই জাদুঘরটিতে ২০০ বছরের পুরনো একটি নৌকা রয়েছে। নৌকাটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ৭২ ও ২৪ ফুট এবং .উচ্চতা ১১ ফুট। নৌকাটির ওজন হবে প্রায় ৯০ টনের কাছাকাছি। এই নৌকাটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছে । প্রত্নতাত্ত্বিকবিদদের ধারণা মতে, অতীত কালে রাখাইনরা এই নৌকায় করে কুয়াকাটা এসে বসতি স্থাপন করেছিল।
কুয়াকাটা ইকোপার্কঃ
২০০৫ সালে ৭০০ এর পর জায়গার উপর কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত, বঙ্গোপসাগর, রামনাবাদ নদী, আন্ধারমানিক নদী, পায়রা ও বিষখালী নদীর মোহনার কাছে এই ইকোপার্ক টি নির্মাণ করা হয়।এই পার্টিতে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট বড় গাছ রয়েছে। যা দেখে আপনার প্রাণ জুড়িয়ে যাবে। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন ধরনের ফলজ ও ঔষধি অনেক গাছ রয়েছে। কুয়াকাটা জিরোপার্ক থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে এই ইকোপার্কটি অবস্থিত।
কুয়াকাটাই যাবেন কিভাবে?
সড়ক ও নৌপথে দুই ভাবেই কুয়াকাটা যাওয়া যায়। পদ্মা সেতু চালু ফলে বর্তমানে ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যেতে সময় অনেকটা কম লাগে এবং খরচ ও অনেকটা কমে গিয়েছে।
ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটাঃ
প্রতিদিনই ঢাকার গাবতলী, সায়েদাবাদ ও আব্দুল্লাহপুর সহ অন্যান্য বাস টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন ধরণের পরিবহন (টি আর ট্রাভেলস, গ্রীনলাইন, সাকুরা, শ্যামলী, হাণিফ) পদ্মা সেতু হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত বাস ছেড়ে যাচ্ছে। পরিবহন খরচ পড়বে এসি ও নন এসি মিলে ৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা ভিতরে।
কুয়াকাটাই হোটেল ও রিসোর্টঃ
অন্যান্য পর্যটক এলাকার মত কুয়াকাটাতেও টাকার জন্য আপনি মোটামুটি মানের হোটেল এবং রিসোর্ট পাবেন। খাওয়া-দাওয়া করার জন্য এখানে স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা বিভিন্ন ধরনের হোটেল পাবেন।
সাবধানতাঃ কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে নামার পূর্ব মুহূর্তে ওই জায়গাটির সম্পূর্ণ নিরাপদ কিনা যাচাই করে নিবেন। কোন কিছু কেনাকাটা করার আগে দামদর করে নিবেন। কুয়াকাটা ভ্রমণে যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে নিকটস্থ টুরিস্ট পুলিশের শরণাপন্ন হবেন।
চাকরির নিয়োগ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো দিয়ে ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । ভ্রমণ সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।