পাসপোর্ট

পাসপোর্ট রিনিউ বা রি-ইস্যু করার নিয়ম ২০২৪

বর্তমান সময়ে পাসপোর্ট রিনিউ করা খুবই সহজ সাদ্য বিষয়। আপনি ঘরে বসেই মোবাইল বা কম্পিউটারের মাধ্যমে পুরনো এমআরপি পাসপোর্টটি রিনিউ করতে পারেন। অতীতে পাসপোর্ট রিনিউ করতে হলে একজন সাধারণ নাগরিককে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো।

এর ভিতরে বড় সমস্যা ছিল দালাল চক্র ও অন্যান্য চক্রের ঝামেলা। তাই আজকে আমি আলোচনা করবো আপনার এমআরপি পাসপোর্ট, মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে এমন পাসপোর্ট ও হারানো পাসপোর্টটি কিভাবে রিনিউ করবেন এসব বিষয় নিয়ে। প্রতিটি পাসপোর্ট রিনিউ এর ধরণ প্রায় একই রকম।

পাসপোর্ট রিনিউ বা রি-ইস্যুঃ

আপনার পুরনো পাসপোর্টটির মেয়াদ বাড়াতে বা বর্তমানে যে পাসপোর্টটি রয়েছে তার কোন তথ্যের পরিবর্তন করার মাধ্যমে নতুন পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার পদ্ধতিকে পাসপোর্ট রিনিউ বা রি-ইস্যু বলে। পাসপোর্ট রিনিউ করার পর আপনার আগের পাসপোর্টে বাতিল বলে গণ্য করা হয়। পুরাতন পাসপোর্ট এর কিছু তথ্য নতুন পাসপোর্ট এর যোগ করা হয়।

পাসপোর্ট রিনিউ বা রি-ইস্যু করার নিয়ম ২০২৪

একটি নতুন পাসপোর্টে আবেদন করার জন্য যে নিয়মটি অনুসরণ করতে হয় সেই একই নিয়মই পুরাতন পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে কাজে লাগে। নতুন পাসপোর্টে আবেদন করার নিয়মের থেকে পুরাতন পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য কয়েকটা আলাদা আলাদা নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। সেই নিয়ম গুলো নিচে আলোচনা করা হলো।

১. প্রয়োজনীয় সকল কাগজ পত্রাদি পাসপোর্ট রিস্যু করার জন্য কালেকশন করে রাখা
২. অনলাইনের মাধ্যমে বা সরাসরি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে আবেদন ফরম পূরণ করা
৩. অনলাইন বা ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট রি ইসু ফি জমা দেওয়া
৪. পাসপোর্ট রি ইসুর সকল ডকুমেন্টস ও ব্যাংকের চালান পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া
৫. ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও চোখের আইরিশের জন্য একটি নির্দিষ্ট দিনে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে
৬. পুলিশ ভেরিফিকেশন ( পাসপোর্ট এর তথ্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে পারে)
৭. নতুন পাসপোর্ট এর জন্য অপেক্ষা করা

পাসপোর্ট রিনিউ করার ক্ষেত্রে কী কী লাগতে পারে?

একটি নতুন পাসপোর্ট তৈরি করতে যে সকল তথ্যের প্রয়োজন হয় ঠিক তেমনি একটি পুরাতন পাসপোর্ট রিনিউ করতেও সেই সকল তথ্যগুলোই প্রয়োজন হয়। নিচে একটি পাসপোর্ট রিনিউ করার সকল তথ্যগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলামঃ

১. জাতীয় পরিচয় পত্র বা ভোটার আইডি কার্ডের একটি ফটোকপি। যদি জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকে সেক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন পত্রের ফটোকপি।
২. পেশাগত তথ্যাদি
৩. আবেদনপত্র বা রেজিস্ট্রেশন ফরমের কপি (প্রিন্ট কপি হতে হবে)
৪. আবেদন পত্রটির সারাংশ কপি (প্রিন্ট কপি হতে হবে)
৫. পাসপোর্ট রিনিউ ফি পরিশোধ করার ব্যাংকের এ চালান/ড্রাফট কপি
৬. পুরাতন পাসপোর্ট
৭. পুরাতন পাসপোর্ট এর যে তথ্যটি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন তার কাগজপত্র
৮. নাগরিক সনদপত্র
৯. আপনি যদি বিবাহিত হন সে ক্ষেত্রে কাবিননামার ফটোকপি
১০. ঢাকার পাসপোর্ট অফিস গুলোতে বর্তমান ঠিকানা প্রমাণ করার জন্য আরও বেশ কয়েকটি তথ্য দিতে হয়। যেমন ইউটিলিটি বিল এর কাগজ, ভাড়াটিয়া হিসাবে বাড়ির মালিকের সাথে চুক্তিপত্রের তথ্য।

সাধারণত একটি পাসপোর্ট রিনিউ করতে এসব তথ্যগুলোর বেশি প্রয়োজন হয়। এছাড়াও পেশাগত দিক থেকে আরোও কিছু তথ্য আপনার লাগতে পারে। আপনি যদি সরকারি চাকরিজীবী হন তাহলে অবশ্যই GO/NOC থাকা ভাল, আবার আপনি যদি ব্যবসায়ী হন সেক্ষেত্রে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্টানের ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি লাগতে পারে। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ার,ডাক্তার, উকিল, ড্রাইভার ইত্যাদি কাজের সাথে জড়িত মানুষকে তাদের পেশাগত তথ্যের সনদ পত্র দাখিল করতে হবে।

অনলাইনের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়মঃ

ই পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য বেশ কিছু নিয়ম অনুসরণ করতে হয়। নিচে নিয়ম গুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

১. সর্বপ্রথম একটি পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য আপনাকে সরকারি ওয়েবসাইট পাসপোর্ট.ডট কম এ প্রবেশ করতে হবে।
২. তারপর Apply Online for e‑Passport/ Re-Issue অপশনটিতে ক্লিক করুন।
৩. আপনি কোন জেলায় থেকে পাসপোর্টটি Re-Issue করতে চাচ্ছেন সেটা আপনি উল্লেখ করুন।
৪. একটি ফোন নাম্বার ও জিমেইল দিয়ে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে ফেলুন।
৫. অ্যাকাউন্টটি তে লগইন করুন তারপর এপ্লাই ফর এ নিউ পাসপোট এ ক্লিক করুন।
৬. জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্যগুলো দিন।
৭. এরপর পাসপোর্ট রিনিউ করার অপশনটি দেখতে পাবেন। পাসপোর্ট রি-ইস্যু অপশনটিতে ক্লিক করুন।

পরবর্তী ধাপ গুলো অনুসরণ করুন এবং সঠিক তথ্য গুলো দিতে থাকুন। সব তথ্য দেয়া শেষ হলে সাবমিট নাও অপশনটিতে ক্লিক করুন। তারপর এপ্লিকেশন সারাংশ এবং অ্যাপ্লিকেশন রেজিস্ট্রেশন ফরমটির পিডিএফ ডাউনলোড বা A4 সাইজ কাগজে প্রিন্ট করে নিন।

পাসপোর্ট রি-ইস্যু ফি বা পেমেন্ট প্রক্রিয়াঃ

আপনি পাসপোর্ট রিনিউ খরচ অনলাইন বা অফলাইন দুই মাধ্যমেই দিতে পারবেন। বিকাশ,রকেট, নগদ, উপায়, মাস্টার কার্ড এসব মাধ্যম দিয়ে অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারবেন। এছাড়াও সোনালী ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক এ সকল ব্যাংকের মাধ্যমে এ চালান বা ব্যাংক ড্রাফট করে দিতে পারবেন।

পাসপোর্ট রি-ইস্যু সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রশ্ন উত্তরঃ

১. পাসপোর্ট রিনিউ করতে কতদিন সময় লাগতে পারে?
উত্তরঃ সচারাচর ১৫-২০ দিন লাগতে পারে। এছাড়াও আপনার আবেদনের তথ্যের উপর নির্ভর করে সময় বেশি বা কম হতে পারে।

২. একটি পুরনো পাসপোর্ট কতদিন আগে রি-ইস্যু করতে হয়?
উত্তরঃ সাধারণত ৬ থেকে ৮ মাস আগেই একটি পুরনো পাসপোর্ট রিনিউ করা ভালো।

৩. পাসপোর্ট রি-ইস্যু করতে কেমন খরচ হতে পারে?
উত্তরঃ পাসপোর্ট রিনিউ করার সময় পুরনো পাসপোর্ট বাদ দিয়ে একটি নতুন ই-পাসপোর্ট দেওয়া হয়ে।এক্ষেত্রে পাসপোর্ট রিনিউ করতে কোন খরচ হয় না । নতুন পাসপোর্ট এর জন্য ৪০২৫ ঢাকা থেকে শুরু করে ১৪০৮০০ টাকা (আবেদনের উপর ভিত্তি করে) পর্যন্ত লাগতে পারে।

৪. পাসপোর্ট রিনিউ করার কারণে কি পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে পারে?
উত্তরঃ কিছু কিছু ক্ষেত্র বিশেষ পুলিশ ভেরিফিকেশন হতে পারে। যেমন আপনি আপনার বর্তমান ঠিকানা পরিবর্তন করলে ও অন্যান্য পরিবর্তন করলে । সাধারণত পাসপোর্ট রিনিউ করার কারণে পুলিশ ভেরিফিকেশন হয় না।

৫. জন্ম নিবন্ধন দিয়ে তৈরি করা পাসপোর্ট এখন কী রি-ইস্যু করা যাবে?
উত্তরঃ ১-২০ বছরের ভিতরে যে সকল পাসপোর্ট তৈরি হয় সেগুলোর জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে করা হয়। আপনার বয়স ২০ বছরের বেশি হলে, জন্ম নিবন্ধন দিয়ে তৈরি করা পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবেন।

আমরা চেষ্টা করেছি পাসপোর্ট রি-ইস্যু সংক্রান্ত সকল তথ্যগুলো তুলে ধরার। এর ভিতর যদি কোন ধরনের ভুলত্রুটি আপনাদের চোখে পড়ে তাহলে দয়া করে আমাদের ওয়েবসাইটের কমেন্ট বক্সে বা আমাদের ফেইজবুক পেজে ম্যাজেস এর মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন আমরা চেষ্টা করব ভুল-ত্রুটি গুলো সংশোধন করার। ইনশাল্লাহ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button