অন্যান্য

বাংলা ১ম পত্র | অতিথির স্মৃতি | সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ১-৫

বাংলা ১ম পত্র | অতিথির স্মৃতি | সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ১-৫ঃ অষ্টম শ্রেণীর বাংলা ১ম পত্রের অতিথির স্মৃতি গল্পটি হতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর নিয়ে আজকের আলোচনা পর্ব ।

প্রশ্ন ১- দরিদ্র বর্গাচাষি গফুরের অতি আদরের একমাত্র ষাঁড় মহেশ । কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ওকে ঠিকমতো খড়-বিচুলি খেতে দিতে পারে না। জমিদারের কাছে সামান্য খড় ধার চেয়েও পায় না। নিজে না খেয়ে থাকলেও গফুরের দুঃখ নেই। কিন্তু মহেশকে খাবার দিতে না পেরে তার বুক ফেটে যায় । সে মহেশের গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে— মহেশ, তুই আমার ছেলে। তুই আমাদের আট সন প্রতিপালন করে বুড়ো হয়েছিস । তোকে আমি পেট পুরে খেতে দিতে পারি নে, কিন্তু তুই তো জানিস আমি তোকে কত ভালোবাসি । মহেশ প্রত্যুত্তরে গলা বাড়িয়ে আরামে চোখ বুজে থাকে।

ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেওঘরে যাওয়ার কারণ কী?

 খ. অতিথি কিছুতে ভিতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন? ব্যাখ্যা করো ।

গ. উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের যে দিকটি প্রকাশ পেয়েছে তা ব্যাখ্যা করো ।

ঘ. উদ্দীপকের গফুরের সাথে লেখকের চেতনাগত মিল থাকলেও প্রেক্ষাপট ভিন্ন’– ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো ।

১ নং প্রশ্নের উত্তরঃ

ক উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দেওঘরে যাওয়ার কারণ বায়ু পরিবর্তন । 

খ উত্তরঃ অচেনা পরিবেশে ভয় ও সংকোচ থেকে অতিথি ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না । ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে কিছুদিনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে পথ চলতে গিয়ে একটি কুকুরের সঙ্গে লেখকের সখ্য গড়ে ওঠে। লেখক তাকে অতিথি সম্বোধন করে বাড়ির ভেতরে ডাকলে কুকুরটি ভেতরে ঢুকতে সাহস পায় না। মূলত, অচেনা পরিবেশে ভয় ও সংকোচ থেকেই অতিথি ভেতরে ঢোকার সাহস পায় না । 

গ উত্তরঃ উদ্দীপকে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রকাশিত অবলা প্রাণীর প্রতি লেখকের অকৃত্রিম ভালোবাসার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে ।মানুষ কখনো কখনো ইতর প্রাণীর সঙ্গেও স্নেহ-প্রীতির সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে । নানা বাধার মুখেও সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায়। মানবমনের এই অনুভূতির প্রকাশ দেখা যায় ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কুকুরটির প্রতি লেখকের আচরণে ।

উদ্দীপকের বর্ণনায় প্রিয় ষাঁড় মহেশের প্রতি গফুরের অকৃত্রিম ভালোবাসার বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। উদ্দীপকের গফুর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মতোই তার পোষা প্রাণীটির প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ করেছে । আদরের ষাঁড় মহেশকে সে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসে। মহেশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কারণ, প্রিয় প্রাণীটিকে গফুর পেট পুরে খেতেও দিতে পারে না, যা তাকে সবসময় কষ্ট দেয়।

একইভাবে, আলোচ্য গল্পের কথকও একটি পথের কুকুরের সঙ্গে মমত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ হন । সে বিবেচনায় উদ্দীপকটিতে মহেশের প্রতি গফুরের আচরণে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে ফুটে ওঠা প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের দিকটিই প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ উত্তরঃ প্রাণীর প্রতি গভীর মমতা প্রকাশের দিক দিয়ে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের সঙ্গে গফুরের চেতনাগত সাদৃশ্য থাকলেও উভয়ের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন ।করে নেন অতিথির মর্যাদায় । অবলা প্রাণীর প্রতি লেখকের এই মমত্ববোধের দিকটি আলোচ্য গল্পের মূল বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে। উদ্দীপকের দরিদ্র বর্গাচাষি গফুর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মতো তার পোষা প্রাণীটির প্রতি গভীর মমতা অনুভব করে। আট বছর ধরে যে ষাঁড়টি তাকে প্রতিপালন করে বুড়ো হয়েছে। তাকে ঠিকমতো খেতে দিতে না পারার দুঃখে জল আসে তার চোখে ।

শুধু মানুষে মানুষে নয়, অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। পরিবেশ ও ঘটনা আলাদা হলেও এ সম্পর্কের মূলে রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসার টান। এদিক বিচারে গল্পের লেখক ও উদ্দীপকের কৃষকের চেতনাগত মিল স্পষ্ট। তবে তাদের এমন আচরণের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। এ ক্ষেত্রে অপরিচিত পরিবেশে একটি কুকুরের প্রতি লেখকের সাময়িক ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। অন্যদিকে, উদ্দীপকের চাষি গফুরের প্রিয় পোষা ষাঁড়টির প্রতি ভালোবাসা, মমতার শিকড় অনেক গভীর। সেদিক বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত উক্তিটি যথার্থ ।

 

প্রশ্ন ২- লালমনিরহাটের যুবায়ের প্রায় ১০ বছর ধরে তার পোষা হাতি কালাপাহাড়কে দিয়ে লাকড়ি টানা, চাষ করা, সার্কাস দেখানো ইত্যাদি কাজ করে আসছিল। কিন্তু বর্তমানে দারিদ্র্যের কারণে হাতির খোরাক জোগাড় করতে না পেরে একদিন সে কালাপাহাড়কে বিক্রি করে দিল। ক্রেতা কালাপাহাড়কে নিতে এসে ওর পায়ে বাঁধা রশি ধরে হাজারো টানাটানি করে একচুলও নড়াতে পারল না। কালাপাহাড়ের দুচোখ বেয়ে শুধু টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়ছে। পরদিন খদ্দের আরও বেশি লোকজন সাথে করে এসে কালাপাহাড়কে নিয়ে যাবে বলে চলে যায়। কিন্তু ভোরবেলা যুবায়ের দেখে— কালাপাহাড় মরে পড়ে আছে। হাউমাউ করে সে চিৎকার করে আর বলে— ‘ওরে আমার কালাপাহাড়, অভিমান করে তুই চলে গেলি!’

ক. শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন পদক লাভ করেন?

খ. লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে দিন দুই দেরি করলেন কেন? ব্যাখ্যা করো ।

গ. কালাপাহাড়ের আচরণ ও ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথির আচরণ কীভাবে ভিন্ন? বর্ণনা করো ।

ঘ. “উদ্দীপকের যুবায়ের এর অনুভূতি আর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই ধারায় উৎসারিত”— মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার করো ।

২ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক উত্তরঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী স্বর্ণপদক’ লাভ করেন।

খ উত্তরঃ  অতিথির প্রতি মমতার টান কাটাতে না পেরে লেখক দেওঘর থেকে বিদায় নিতে দিন-দুই দেরি করেন । চিকিৎসকের পরামর্শে বায়ু পরিবর্তনের জন্য দেওঘরে গিয়ে লেখক একটি কুকুরকে সঙ্গী হিসেবে পান। ধীরে ধীরে কুকুরটির সঙ্গে তাঁর মমত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। এ কারণে চলে আসার সময় হলেও লেখক কুকুরটিকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভেবে ব্যথিত হন। এজন্যই দেওঘর থেকে বিদায় নিতে নানা অজুহাতে লেখক দিন দুই দেরি করেন ।

গ উত্তরঃ  ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশে কালাপাহাড় ও গল্পের অতিথির মধ্যে সাদৃশ্য থাকলেও আচরণগত দিক দিয়ে তাদের মধ্যে পার্থক্য লক্ষ করা যায় । ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি পথের কুকুরের সঙ্গে লেখকের স্নেহ-মমত্বের ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখক দেওঘরে গিয়ে একটি কুকুরের সঙ্গ লাভ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কুকুরটির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে লেখক তাকে বরণ | করেন। তিনি কুকুরটিকে স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে নেন।

কুকুরটিও তাঁর ভালোবাসা পেয়ে বশ্যতা স্বীকার করে। বাড়িতে এসে তাঁর খোঁজ করা, পথের ধারে তাঁর জন্য অপেক্ষা করা কুকুরটির নিত্যদিনের কাজে পরিণত হয়। লেখকের বিদায় নেওয়ার সময়ও অতিথি স্টেশন পর্যন্ত চলে আসে।

ঘ উত্তরঃ উদ্দীপকের যুবায়েরের সঙ্গে তার পোষা প্রাণী কালাপাহাড়ের সম্পর্ক প্রায় দশ বছরের। সংগত কারণেই তাদের মধ্যকার সম্পর্কে গভীরতা আরও বেশি। এরই প্রকাশ লক্ষ করা যায় কালাপাহাড়ের মধ্যে। এ কারণে কালাপাহাড়কে বিক্রি করে দিলে সে খুব কষ্ট পায় এবং তার বহিঃপ্রকাশও ভিন্নভাবে প্রকাশ পায়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথি কষ্ট পেলেও সে তেমন কিছুই করতে পারেনি। কিন্তু কালাপাহাড় ভীষণভাবে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

সে কোনোভাবেই বাড়ি ছাড়তে চায়নি। অবশেষে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে চূড়ান্ত ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছে, যা অতিথির আচরণের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। অর্থাৎ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের অতিথি ও উদ্দীপকের কালাপাহাড় তাদের মনিবের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। কিন্তু তাদের ভালোবাসা প্রকাশের ধরন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম ।

প্রশ্ন ৩ বাদল সাহেব ডায়াবেটিস রোগী। ডাক্তারের পরামর্শে প্রতিদিন বিকেলে হাঁটতে বের হন। হাঁটতে গিয়ে দেখেন তার মতো অনেকেই হাঁটতে বের হয়েছে। যারা হাঁটতে বের হয়েছে তাদের অনেকেই স্থূলকায় । একটু হাঁটলেই হাঁপিয়ে যায় । তারপরও তাদের হাঁটার প্রাণপণ চেষ্টা। হঠাৎ বাদল সাহেব দেখতে পান রাস্তার পাশে একটি বিড়ালছানা অসুস্থ অবস্থায় পড়ে আছে। তিনি বিড়ালছানাটিকে বাসায় নিয়ে যান এবং পরম যত্নে তাকে সুস্থ করে তোলেন। চি. বো. ২০১৯।

ক. কী দেখে লেখকের সত্যিকার ভাবনা ঘুচে গেল? 

খ. আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন বলতে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত লোকদের হাঁটার প্রাণপণ চেষ্টা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন দিককে নির্দেশ করে?- ব্যাখ্যা করো। ৩

ঘ. উদ্দীপকে বাদল সাহেবের প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মমত্ববোধের পূর্ণাঙ্গ রূপ ফুটে উঠেছে কি? যুক্তিসহ বিশ্লেষণ করো।

 

অষ্টম শ্রেণি | বাংলা ১ম পত্র | অতিথির স্মৃতি | সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর ১-৫
বাংলা ১ম পত্র অতিথির স্মৃতি সৃজনশীল প্রশ্ন উত্তর

 

৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক উত্তরঃ বেনে-বৌ পাখি দুটিকে ফিরে আসতে দেখে লেখকের সত্যিকারের লেখক দেওঘরে যে কুকুরটিকে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেন তার দায়িত্ব ভাবনা ঘুচে গেল ।

খ উত্তরঃ ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন’ বলতে বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অতিথির দীর্ঘ সময় অবস্থান করাকে বোঝানো হয়েছে । কুকুরটির সঙ্গে লেখকের সখ্য হওয়ার পরের দিন কুকুরটি লেখকের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসে সে অধিক সময় ওই বাড়িতে অবস্থান করে। বাড়িতে অতিথির এরূপ দীর্ঘ সময় অবস্থান মূলত আতিথ্যের লঙ্ঘন। সাধারণ বিচারে কুকুরটি এ মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে। তাই বলা যায়, ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন’ বলতে লেখকের বাড়িতে কুকুরটির এই দীর্ঘসময় অবস্থান করাকেই বোঝানো হয়েছে।

গ উত্তরঃ  উদ্দীপকে উল্লিখিত লোকদের হাঁটার প্রাণপণ চেষ্টা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের রোগমুক্তি ও বায়ু পরিবর্তনের দিকটিকে নির্দেশ করে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক চিকিৎসকের আদেশে বায়ু পরিবর্তনের

জন্য দেওঘরে যান। সেখানে তিনি বিকেলবেলা পথের ধারে বসে অনেক রকম মানুষ দেখেন, যারা সুস্থ থাকার জন্য হাঁটতে বের হন। এর মধ্যে ‘বেরিবেরি রোগে পা ফোলা রোগীও ছিল।

উদ্দীপকের বাদল সাহেব ডায়াবেটিস রোগের কারণে ডাক্তারের পরামর্শে বিকেলে হাঁটতে বের হন। তিনি দেখেন তার মতো অনেকেই হাঁটতে বের হয়েছে। মোটা মোটা মানুষ যারা আছে, তারা হাঁপিয়ে গেলেও হাঁটা থামায় না। বাদল সাহেব বুঝতে পারেন, ওরাও সুস্থ থাকার জন্যই হাঁটছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকও সুস্থ হওয়ার জন্য বায়ু পরিবর্তন করতে

কাজের লোকদের ওপর দিয়ে দেন। আবার ফিরে আসার সময় কুকুরটিকে পাওয়া বিড়ালছানাটিকে বাসায় নিয়ে এসে নিজ দায়িত্বে সুস্থ করে তোলেন। নিয়ে যেতে পারেননি সঙ্গে করে। কিন্তু উদ্দীপকের বাদল সাহেব কুড়িয়ে তার প্রতি যত্ন নেন । মমত্ববোধের দিকটিতে মিল থাকলেও মমতার প্রকাশ ও পরিণতিতে দুজনের পূর্ণাঙ্গ রূপ একইভাবে ফুটে ওঠেনি।

ঘ উত্তরঃ উদ্দীপকে বাদল সাহেবের প্রাণীর প্রতি যে মমত্ববোধ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মমত্ববোধে তেমন পূর্ণাঙ্গ রূপ ফুটে ওঠেনি। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক দেওঘরে বায়ু পরিবর্তন করতে আসেন। সেখানে তিনি একদিন হাঁটতে বেরোলে সঙ্গী হিসেবে একটি কুকুরকে পান । কুকুরটিকে তিনি তাঁর বাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসেন। বাড়ির চাকরকে তার খাবারের দায়িত্ব দেন ।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক ও উদ্দীপকের বাদল সাহেব দুজনের মধ্যেই পশু-পাখির প্রতি মমত্ববোধের দিকটি পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু আলোচ্য গল্পের দেওঘরে যান। তিনি সেখানকার মানুষদের হাঁটার মধ্যে সুস্থ থাকার প্রবণতা বুঝতে পারেন। আর এই রোগমুক্তির জন্য মানুষের প্রাণপণ হাঁটার দিকটিই উদ্দীপক ও আলোচ্য গল্পকে সাদৃশ্যপূর্ণ করেছে।

প্রশ্ন ৪ মহেশ দরিদ্র বর্গাচাষি গফুরের অতি আদরের একমাত্র ষাঁড়। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে ওকে ঠিকমতো খড়-বিচুলি খেতে দিতে পারে না। জমিদারের কাছে সামান্য খড় ধার চেয়েও পায় না। নিজে না খেয়ে থাকলেও গফুরের দুঃখ নেই। কিন্তু মহেশকে খাবার দিতে না কাঁদতে কাঁদতে বলে – মহেশ, তুই আমার ছেলে। তুই আমাদের আট পেরে তার বুক ফেটে যায়। তাই সে মহেশের গলা জড়িয়ে ধরে দিতে পারি নে, কিন্তু তুই তো জানিস আমি তোকে কত ভালোবাসি। সন প্রতিপালন করে বুড়ো হয়েছিস। তোকে আমি পেট ভরে খেতে মহেশ প্রত্যুত্তরে গলা বাড়িয়ে আরামে চোখ বুজে থাকে। বি. বো. ২০১৯ /

ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটু দেরি করে আসত কোন পাখি? 

খ. ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

গ. উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির সস্মৃতি’ গল্পের যে দিকটির মিল রয়েছে, তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. “উদ্দীপকের গফুরের মানসিকতা ‘অতিথির সস্মৃতি’ গল্পের লেখকের মানসিকতারই প্রতিরূপ”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ করো।

৪ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক উত্তর: ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটু দেরি করে আসত বেনে-বৌ পাখি । 

খ উত্তরঃ ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন’ বলতে বাড়িতে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অতিথির দীর্ঘ সময় অবস্থান করাকে বোঝানো হয়েছে ।

কুকুরটির সঙ্গে লেখকের সখ্য হওয়ার পরের দিন কুকুরটি লেখকের নিমন্ত্রণ রক্ষা করে। নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে এসে সে অধিক সময় ওই বাড়িতে অবস্থান করে। বাড়িতে অতিথির এরূপ দীর্ঘ সময় অবস্থান মূলত আতিথ্যের লঙ্ঘন। সাধারণ বিচারে কুকুরটি এ মর্যাদা লঙ্ঘন করেছে। তাই বলা যায়, ‘আতিথ্যের মর্যাদা লঙ্ঘন’ বলতে লেখকের বাড়িতে কুকুরটির এই দীর্ঘসময় অবস্থান করাকেই বোঝানো হয়েছে।

গ উত্তরঃ উদ্দীপকের সাথে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে প্রকাশিত অবলা প্রাণীর প্রতি অকৃত্রিম মমত্ববোধের দিকটির মিল রয়েছে।মানুষ কখনো কখনো ইতর প্রাণীর সঙ্গেও স্নেহ-প্রীতির সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। নানা বাধার মুখেও সে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে কুকুরটির প্রতি এমনই ঘটনার ছায়াপাত ঘটেছে লেখকের আচরণের মধ্য দিয়ে।

উদ্দীপকের গফুর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মতোই তার পোষা প্রাণীটির প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ করেছে। আদরের ষাঁড় মহেশকে সে নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসে। মহেশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সে কান্নায় ভেঙে পড়ে । কারণ, প্রিয় প্রাণীটিকে সে পেট ভরে খেতে দিতে পারে না, যা গফুরকে সব সময় কষ্ট দেয়। একইভাবে, আলোচ্য গল্পের গল্পকথকও একটি পথের কুকুরের সঙ্গে মমত্বের সম্পর্কে আবদ্ধ হন। গল্পের সর্বত্রই কুকুরটির প্রতি তার মমত্বের পরিচয় ফুটে উঠেছে। এদিক থেকে উদ্দীপকের সঙ্গে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের মিল রয়েছে।

ঘ উত্তরঃ অবলা প্রাণীর প্রতি গভীর মমত্ব প্রকাশ পাওয়ায় উদ্দীপকের গফুরের মানসিকতা যেন ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মানসিকতারই প্রতিরূপ হয়ে উঠেছে ।অতিথির স্মৃতি’ গল্পে একটি পথের কুকুরের সঙ্গে লেখকের স্নেহ-মমত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কুকুরটির প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে লেখক তাকে বরণ করে নেন অতিথির মর্যাদায় । অবলা প্রাণীর প্রতি লেখকের এই মমত্ববোধের দিকটি আলোচ্য গল্পের মূল বিষয় হিসেবে উঠে এসেছে।

উদ্দীপকের দরিদ্র বর্গাচাষি গফুর ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মতো তার পোষা প্রাণীটির প্রতি গভীর মমতা অনুভব করে। আট বছর ধরে যে ষাঁড়টি তাকে প্রতিপালন করে বুড়ো হয়েছে, তাকে ঠিকমতো খেতে দিতে না । পারার দুঃখে তার চোখে পানি আসে। উদ্দীপকে ফুটে ওঠা অবলা প্রাণীর প্রতি মমত্ববোধের এই দিকটি আলোচ্য গল্পেও পরিলক্ষিত হয়।

‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে পথের একটি কুকুরের প্রতি লেখকের মমত্ববোধের স্বরূপ ফুটে উঠেছে। শুধু মানুষে মানুষে নয়, অন্য জীবের সঙ্গেও মানুষের স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ ও ঘটনা আলাদা হলেও এ সম্পর্কের মূলে রয়েছে অকৃত্রিম ভালোবাসার টান। 

 

প্রশ্ন ৫ পাঁচ বছরের নীলের জন্য তার বাবা শহর থেকে খাঁচাসহ টিয়ে পাখি কিনে আনে। বাবার সাথে নীলও পাখিটার যত্ন নেয়। নীলের সাথে টিয়েটাও বাবাকে বাবা বলে ডাকে। পাখিটা পোষ মেনেছে ভেবে নীল একদিন চুপিচুপি খাঁচার দরজা খুলে দেয়। অমনি পাখিটা উড়ে চলে যায়। পাখিটার জন্য বাড়ির সবার মন খারাপ হয় । পরদিন সকালে পাখিটা ফিরে এসে বাবা, বাবা ডাকতে থাকলে সবাই অবাক হয়ে যায় । নীলের বাবা ভাবে তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে ফিরে (ঢা.বো. ২০১৮; কু. বো. ২০১৮/ এসেছে।

ক. ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে লেখকের কীসের ভাবনা ছিল? খ. অতিথি প্রথম দিন বাড়ির ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না কেন? ব্যাখ্যা করো।

গ. উদ্দীপকে পাখিটির ফিরে আসা ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের কোন বিষয়টিকে নির্দেশ করে, তা ব্যাখ্যা করো।

ঘ. নীলের বাবাকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের প্রতিনিধি বলা যায় কি? উত্তরের সপক্ষে তোমার মতামত দাও ।

৫ নম্বর প্রশ্নের উত্তর

ক উত্তরঃ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পে উল্লিখিত বেনে-বৌ পাখি দুটি ফিরে আসবে কি না— এই নিয়ে লেখকের ভাবনা ছিল ।

খ উত্তরঃ অচেনা পরিবেশে ভয় ও সংকোচ থেকে অতিথি ভেতরে ঢোকার ভরসা পেল না । ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক চিকিৎসকের পরামর্শে কিছুদিনের জন্য দেওঘরে গিয়েছিলেন। সেখানে পথ চলতে গিয়ে একটি কুকুরের সঙ্গে লেখকের সখ্য গড়ে ওঠে। লেখক তাকে অতিথি সম্বোধন করে বাড়ির ভেতরে ডাকলে কুকুরটি ভেতরে ঢুকতে সাহস পায় না। মূলত, অচেনা পরিবেশে ভয় ও সংকোচ থেকেই অতিথি ভেতরে ঢোকার সাহস পায় না । 

গ উত্তরঃ ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখক দেওঘরে এসেছিলেন বায়ু পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে। এসময় এক পথের কুকুরের সঙ্গে তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। তিনি কুকুরটিকে অতিথির মর্যাদা দিয়ে আদর-যত্ন করেন। ফলে কুকুরটিও তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। 

লেখক চলে যাওয়ার সময় সে বিদায় জানাতে স্টেশনে যায়। লেখককে নানা সময়ে সঙ্গও দেয়। উদ্দীপকে পোষা টিয়া পাখিটির প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে । আচমকা একদিন খাঁচার দরজা খুলতেই পাখিটি উড়ে যায়। পাখিটির জন্য সকলের মন খারাপ হয়ে গেলেও পুনরায় পাখিটির ফিরে আসা সবাইকে স্বস্তি দেয়।

 এতে মানুষের মতো পশু-পাখিরও মানুষের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকও একটি পথের কুকুরের ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছিলেন। মূলত, ইতর প্রাণীও মানুষকে ভালোবাসতে পারে। উদ্দীপকের নীলের পরিবার এবং গল্পের লেখক একই অনুভূতি লাভ করেছিলেন। এ বিবেচনায় উদ্দীপকের পাখিটির ফিরে আসা আলোচ্য গল্পের কুকুরটির বশ্যতার প্রসঙ্গকে নির্দেশ করে ।

ঘ উত্তরঃ প্রাণীর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের দিক থেকে উদ্দীপকের নীলের বাবাকে ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের প্রতিনিধি বলা যায়। ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের মাঝে পশু-পাখির প্রতি সহানুভূতিশীল মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে। এ গল্পে একটি পথের কুকুরকে তিনি অতিথির মর্যাদা দান করেন। ধীরে ধীরে কুকুরটির প্রতি তিনি মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়েন। কুকুরটির সঙ্গে লেখকের কয়েক দিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে নিবিড় সম্পর্ক।

উদ্দীপকে প্রাণীর প্রতি নীলের বাবার সহানুভূতি প্রকাশিত হয়েছে। শহর থেকে একটি টিয়ে পাখি কিনে এনে তিনি তার যত্ন শুরু করেন । একদিন নীল খাঁচার দরজা খুলে দিলে পাখিটি উড়ে যায়। ইতোমধ্যে পাখিটি নীলের বাবার কাছে সন্তানের মতো হয়ে উঠেছে। তাই পাখিটির অনুপস্থিতি তাকে কষ্ট দেয়। পরদিন পাখিটির ফিরে আসা নীলের বাবাকে সন্তান ফিরে পাওয়ার মতোই আনন্দ দেয়।

পরিবেশ এবং ঘটনা আলাদা হলেও প্রাণীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশে প্রদত্ত উদ্দীপকের নীলের বাবা এবং ‘অতিথির স্মৃতি’ গল্পের লেখকের অনুভূতি একই। কেননা, উভয়ক্ষেত্রেই প্রাণীর সঙ্গে একজন মানুষের কয়েকদিনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা মমত্বের সম্পর্কের দিকটি ফুটে উঠেছে। 

 

 

চাকিরর খবর ও নোটিশ পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো করুন ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । লেখাপড়া বিষয়ক অন্যান্য সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button