নাগরিক সেবা

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন | জন্ম নিবন্ধন হোক আরও সহজে

ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার যে বিষয় গুলো আমাদের জন্য তুলনামূলক সহজ করে দিয়েছে তার মধ্যে একটি হলো অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন । যার ফলে এই আবেদন প্রক্রিয়া নির্ভুল ভাবে করার সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে তা বলা যেতেই পারে!

জন্ম নিবন্ধন সনদ একটি দেশের নাগরিকদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে অতি প্রোয়জনীয় একটি নথি সেই সাতে, নাগরিকদের রাষ্ট্রীয় পরিচয়ের স্বীকৃতি । এই জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করা তুলনামূলক সহজ হয়েছে অনলাইনের মাধ্যমে।

আপনি এখন ঘরে বসে ইন্টারনেট এর মাধ্যমে, অনলাইনে জন্ম নিবন্ধের আবেদন করতে পারবেন হাতের মুঠোফোনটির ব্যবহার করে।

শুধুমাত্র আবেদন ছাড়াও- জন্ম নিবন্ধন যাচাই, সংশোধন, নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন, অনেক কিছুই সহজতর হয়েছে এই অনলাইনকরনের কল্যাণে। যা, নিঃসন্দেহে সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রযুক্তির অগ্রগতির দ্বারা।

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের প্রক্রিয়া :

জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন ২০০৪,আইনানুসারে বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু সঠিক নিয়ম না জানলে জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ সহ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করার ক্ষেত্রে, প্রথমে গুগল বা গুগল ক্রোমে গিয়ে, “http:/bdris.gov.bd” এই সাইটে জন্ম নিবন্ধন সংক্রান্ত বিষয় প্রবেশ করে নিন্মলিখিত ধাপ অনুসরণ করতে হবে।

ধাপ ১ : ঠিকানা নির্বাচন
প্রথমত, নিবন্ধনের জন্য নিন্মের তিনটি অপশন থেকে একটি বেছে নিয়ে ঠিকানা নির্বাচন করতে হবে।

  • জন্মস্থান
  • স্থায়ী ঠিকানা
  • যদি আপনি বাংলাদেশী দূতাবাসে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে চান, তাহলে এটি নির্বাচন করতে হবে

(এক্ষেত্রে সাধারণত স্থায়ী ঠিকানা নির্বাচন করা উত্তম।)

ধাপ ২ : আবেদন ফর্ম পূরণ
জন্ম নিবন্ধন আবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো এই আবেদন ফর্ম পূরণ। এই ফর্ম পূরণে কোন ভুল হলে পরবর্তীতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই খুবই সাবধানতা এবং সতর্কতার সাথে ফর্মের দেওয়া প্রত্যেকটি তথ্য পূরণ করতে হবে নির্ভুলভাবে।

দ্বিতীয় এই ধাপে ঠিকানা নির্বাচনের পর “পরবর্তী”বাটনে ক্লিক করলে আপনারা নিচের দেয়া ছবির মত একটি আবেদন ফর্ম দেখতে পারবেন।

এই আবেদন ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে যে কয়েকটি বিষয় বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে-

  • বাংলা এবং ইংরেজি উভয় নামের বানান সঠিকভাবে দিতে হবে।
  • জন্ম তারিখ নির্বাচন করার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে।
  • ১৮ বছরের কম বয়স হলে আপনি নিজে , নিজের জন্ম নিবন্ধন এর জন্য আবেদন করতে পারবেন না। কিন্তু আপনার মাতা বা পিতা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মাতা বা পিতার নির্ভুল তথ্য- NID কার্ড নাম্বার এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রয়োজন।
  • সংযুক্তি হিসেবে নিজের মেডিকেল সার্টিফিকেট অথবা জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট, মাতা-পিতার NID কার্ডের স্পষ্ট ছবি আপলোড করতে হবে।

সকল তথ্য সঠিকভাবে দেওয়ার পরে আপনি সাবমিট বাটনে ক্লিক করলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের আবেদন সম্পন্ন হবে। এরপর আবেদনপত্রের একটি নাম্বার দেওয়া হবে।

এই নাম্বারটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তাই আপনারা চাইলে এটি লিখে নিতে পারেন অথবা একটি স্ক্রিনশট নিয়ে নিতে পারেন।

ধাপ ৩ : জন্ম নিবন্ধনের আবেদন পত্র প্রিন্ট

জন্ম নিবন্ধন আবেদন সম্পূর্ণ হলে “প্রিন্ট” অপশনে ক্লিক করলে আপনারা চাইলে ফোন থেকে প্রিন্ট করতে পারেন নিজেদের প্রিন্টার যদি থেকে থাকে৷

প্রিন্টার না থাকলে আপনারা যে কোন কম্পিউটার দোকানে গিয়ে প্রদত্ত আবেদনপত্রের নাম্বারটি দিয়ে জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্র টি প্রিন্ট করাতে পারবেন।

জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ

আবেদন পত্রটি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ – ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদনপত্রের প্রিন্টেড কপিটির সাথে,
সংযুক্তি হিসেবে নিজের পিতা-মাতার এনআইডি (NID) কার্ডের কপি, জন্ম নিবন্ধন সনদ, একাডেমিক সার্টিফিকেট ইত্যাদি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিবেন।

জমা দানের পরে, সকল তথ্য সঠিক থাকলে, যাচাই এর পর আপনাকে ফোন অথবা মেসেজের মাধ্যমে আপনার জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে বলা হবে।

নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদন

সাধারণত আমরা সবাই জানি যে, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন ২০০৪ অনুযায়ী শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা বাধ্যতামূলক।

শিশুর জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার ক্ষেত্রে অভিভাবকের সকল প্রয়োজনীয় তথ্য এবং হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন দরকারি কাগজপত্রের প্রয়োজন।

যদি জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যেই জন্ম নিবন্ধনের আবেদন না করা হয় তবে ৫ বছরের মধ্যে অবশ্যই করতে হবে অন্যথায় পরবর্তীতে বিভিন্ন ঝামেলা পোহাতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা

জন্ম নিবন্ধন আবেদনের পর আপনি চাইলেই এর বর্তমান অবস্থা, বা কোন ভুল যদি হয়ে থাকে তার যাচাই করতে পারবেন।

https://bdris.gov.bd এই সাইটে গিয়ে আপনি আপনার জন্ম নিবন্ধন নাম্বার অথবা অ্যাপ্লিকেশন আইডি এবং জন্ম তারিখ দিয়ে “দেখুন” অপশনে গেলে আপনার আবেদনের সকল তথ্য দেখতে পাওয়া যাবে।

যদি আপনি ইতিমধ্যে আবেদন সম্পন্ন করে থাকেন তাহলে আপনার আবেদনের বর্তমান অবস্থা “Registered” দেখাবে।

এভাবে খুব সহজেই আপনি আপনার আবেদন পত্রের বর্তমান অবস্থা দেখতে পারবেন। এবং যদি আপনার আবেদনে কোন ভুল থেকে থাকে তবে সংশোধন অপশনে গিয়ে তা ঠিক করাও সম্ভব।

সমাপ্তি

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন এর আবেদন অনেকের জন্য ভিন্ন হতে পারে অথবা হতে পারে একদম নতুন। যদিও আপনি খুব সহজে ইন্টারনেট কানেকশন থাকলেই জন্ম নিবন্ধনের আবেদন অনলাইনে করতে পারবেন।

যারা প্রতিনিয়ত মোবাইল ব্যবহার করে থাকেন এবং, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে অভ্যস্ত তাদের কাছে এই অনলাইন পদ্ধতি সবচেয়ে সহজ ও ভোগান্তিহীন।

বর্তমানে প্রেক্ষাপটে যেখানে রাজত্ব চলছে, তথ্য ও প্রযুক্তির, সেখানে এই অনলাইনকরন পদ্ধতির বিকল্প খুব কমই পাওয়া যায়।

তাই বলাই যায়, নির্ভুল ভাবে নিজের হাতেই জন্ম নিবন্ধনের৷ আবেদন করার একটি উত্তম মাধ্যম হলো অনলাইনের দ্বারা জন্ম নিবন্ধনের আবেদন।

 

আমরা চেষ্টা করেছি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধনের আবেদন সংক্রান্ত সকল বিষয়গুলো উপস্থাপন করার। এই আলোচনার ভিতরে যদি কোন ধরনের ভুলত্রুটি আপনাদের নজরে আসে তাহলে দয়া করে আমাদের ওয়েবসাইটের কমেন্ট বক্সে বা আমাদের ফেইজবুক পেজে ম্যাজেস এর মাধ্যমে জানিয়ে দিবেন, আমরা চেষ্টা করব ভুল-ত্রুটি গুলো সংশোধন করার। ইনশাল্লাহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button