ভ্রমণ গাইড

মেহেরপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? (ইতিহাস,ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থান)

বাংলাদেশের ছোট জেলা হিসেবে পরিচিত মেহেরপুর জেলা। কেননা আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম জেলাটির নাম হলো মেহেরপুর। এই জেলাটি খুলনা বিভাগের দক্ষিণ পশ্চিমের কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার পাশাপাশি অবস্থিত।মেহেরপুর জেলা সদরের একপাশ দিয়ে বয়ে গেছে ভৈরব নদী।

মেহেরপুর জেলার অবস্থান:

অতীতে মেহেরপুর জেলাটি কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত ছিল। এটি কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর, দৌলতপুর উপজেলার ও ‍চুয়াডাঙ্গা জেলার দামড়ুহুদা, আলমডাঙ্গা ও জীবননগর উপজেলা পাশে অবস্থিত। তাছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ৩২টি জেলার মধ্যে মেহেরপুর জেলাটি অন্যতম। কেননা মেহেরপুর জেলা পশ্চিম ও দক্ষিণ দিক ভারতের পশ্চিম বঙ্গ রাজ্য অবস্থিত। ভৌগলিক দিক দিয়ে মমেহেরপুর জেলার অবস্থান হলো ২৩.৪৪/ থেকে ২৩.৫৯/ ডিগ্রী অক্ষাংশ এবং ৮৮.৩৪/ থেকে ৮৮.৫৩/ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ।

মেহেরপুর জেলার নামকরণ:

মেহেরপুর জেলার নাম করণ সম্পর্কে দুটি মতভেদ আছে। এর মধ্যে প্রথমটি হলো ইসলাম থর্ম প্রচারক দরবেশ মেহের আলী নামের ব্যক্তির নামের সাথে মিল রেখে ষোড়শ শতকের বা তার পরবর্তী কাল সময়ে মেহেরপুর নামকরণ করা হয়। দ্বিতীয়টি হলো পূর্ববঙ্গ রেলওয়ের বাংলায় ভ্রমণ গ্রন্থে বিখ্যাত বচনকার মিহির ও তাঁর নিজের পুত্রবধু খনা (খনার বচন বিখ্যাত) ভৈরব নদীর তীরস্থ এ অঞ্চলে বাস করতেন। তার নামানুসারে প্রথমে মিহিরপুর এবং পরবর্তীতে অপভ্রংশে মেহেরপুর নামকরণ হয়েছে বলে অনুমান করা হয়।(সংগৃহীত)

মেহেরপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? (ইতিহাস,ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থান)
মেহেরপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? (ইতিহাস,ঐতিহ্য ও দর্শনীয় স্থান)

মেহেরপুর জেলা হিসেবে স্বীকৃতিঃ

কুষ্টিয়ার জেলাকে পৃথক করে মেহেরপুর জেলাটিকে স্বাধীন জেলা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় ১৯৮৪ সালে ২৬শে ফেব্রুয়ারি। এই জেলাটির উপজেলা সংখ্যা হলো তিনটি:
১. মেহেরপুর সদর
২. মুজিবনগর
৩. গাংনী

আয়তন ও জনসংখ্যাঃ

মেহেরপুর জেলার আয়তন ৭১৬ বর্গ কিলোমিটার বা ২৯০ বর্গমাইল।এই জেলার জনসংখ্যার পরিমান ৬,৫৫,৩৯২ জন। মেহেরপুর জেলার জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৮৭০ জন।

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা:

মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলা সম্পর্কে বলতে গেলে এর সম্পর্কে বলতে গেলে শেষ করা যাবে না কারণ এখন স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনা হয়। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিবনগরের আম্রকাননে মুজিবনগর সরকার গঠন হয়। ১৭ই এপ্রিল ১৯৭১ মুজিবনগর সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার হিসেবে শফথ গ্রহণ করে। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মুজিবনগর রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়।

এসময় শেখ মুজিবুর রহমান জেলে থাকায় অস্থায়ী রাষ্ট্র পতি হিসেবে দায়িত্ব পান সৈয়দ নজরুল ইসলাম। অস্থায়ী সরকারের প্রধান মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্যাপ্টেন এম, মনসুর আলী. স্বরাষ্ট্র্রমন্ত্রী হিসেবে এইচএম কামরুজ্জামান প্রমূখ। এই এসময় যুদ্ধ পরিচালনা করার জন্য মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়। অতীত কালে এই মুজিবনগরের নাম ছিল বৈদনাথ তলা।

বর্তমানে মেহেরপুরের মুজিবনগরঃ

বর্তমানে মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর উপজেলার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।যুদ্ধের সম্পর্কে জানার জন্য আপনি জানতে চাইলে সরাসরি মুজিবনগরের আসতে পারেন। ১৯৭১ সালের সময় কী ঘঠনা ঘটেছিল তার স্মৃতি বহন করছে আমাদের মুজিবনগর। আরো নিমার্ণ করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ, বাংলাদেশের মানচিত্র, নতুন ভাবে তৈরি হয়েছে পার্ক, চিড়িয়াখানা, উপজেলা কমপ্লেক্স ইত্যাদি।

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা:

মেহেরপুর জেলার অারেকটি উপজেলার নাম হলো গাংনী। গাংনীর পশ্চিম পাশ দিয়ে কাজলা নদী ও পূর্বে মাথাভাঙ্গা নদীর মধ্যাবর্তী দোয়ার অঞ্চলে এ ‍ উপজেলাটির অবস্থান।ঐ সময় কার মানুষের কাছে পরিচিত ছিল গাংগীনি নামে। গঙ্গা নদীটি প্রধান নদী হওয়ার কারণে এখানকার মানুষেরা মাথাভাঙ্গা নদীটিকে গঙ্গা নদীর কন্যা মনে করার কারণে গাংগীনি থেকে গাংগী শব্দটি এসেছে। এখানকার মানুূেষরা অনেকটাই প্রাকৃতির প্রতি আকৃষ্ট। এ উপজেলাটিতে দিন দিন শিক্ষার বেড়েই চলেছে।

সুস্বাদু আমের জন্য মেহেরপুর জেলা:

আমের জন্য রাজশাহী বিখ্যাত হলেও ‍সুস্বাদু আমের জন্য মেহেরপুর জেলার খ্যাতি রয়েছে। সারা বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশে এই জেলা থেকে আম রপ্তানি করা হয়।এই জেলার সুস্বাদু আম গুলোর মধ্যে আছে হিমসাগর, বুম্বাই, ন্যাঙড়া, হাইব্রিট জাতের আম। এসব জাতের আম বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সহযোগীতা করছে এখনকার আম চাষিরা।

বাল্য বিবাহ মুক্ত জেলা মেহেরপুর :

বাল্য বিবাহ মুক্ত জেলা হিসেবে মেহেরপুর পরিচিত লাভ করছে ২০১৬ সালে। কেননা বাল্য বিবাহ সামাজিক ব্যাধী বা সামাজিক সমস্য বলেও অনেকের অভিমত অনেক বিশেজ্ঞের। বাল্য বিবাহের ফলে অনেক নষ্ট হয়ে তরুণওতরুণীর জীবন।

একটি বাল্য বিবাহের ফলে বেশি ক্ষতি গ্রস্ত হয়ে নারীরা কারণ অল্প বয়সে বিয়ে করার ফলে সন্তান দিতে হয় এসময় তারে মৃত্য ঝুকি বেড়ে যায়। তাছাড়া অল্প বয়সে বিয়ের ফলে ছোট ছোট নারীরা স্বামীর সংসারের নিজেকে খাপ খায়াতে পারেনা ফলে সংসারে নানান সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখা যায়।

এজন্য মেহেরপুর জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে বাল্য বিবাহ মুক্ত জেলা গঠনের শফথ গ্রহণ করা হয়। দারিদ্র, অশিক্ষা ও কুসংস্কারের কারণে বাল্য বিবাহ শুধুমাত্র আন্তরিকতা দিয়ে বাল্য বিবাহমুক্ত জেলা ও দেশ গড়া যায় জানিয়েছিলেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব শফিউল আলম।২০১৬ সালের ২৭ ফেব্রয়ারি মেহেরপুর জেলাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।(সংগৃহীত)

মেহেরপুর জেলার দর্শনীয় স্থানঃ

মেহেরপুরের জেলার দর্শনীয় স্থানের ভিতরে রয়েছে-
১. মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ
২. পৌর ঈদগাহ
৩. মেহেরপুর শহীদ স্মৃতিসৌধ
৪. সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির
৫. আমঝুপি নীলকুঠি
৬. ভাটপাড়া নীলকুঠি
৭. ভবানন্দপুর মন্দির
৮. বল্লভপুর চার্চ
৯. ভবরপাড়া রোমান ক্যাথলিক চার্চ

মেহেরপুর জেলার সুমিষ্ট আম, সাবিত্রী ও রসকদম্ব মিষ্টির জন্য খ্যাতি রয়েছে । আপনি চান বাংলাদেশের এই ছোট জেলাটি ভ্রমন করতে পারেন ।

 

চাকিরর খবর ও নোটিশ পেতে আমাদের ফেইজবুক পেজটি ফলো করুন ও ইউটিউব চ্যানেলটি সাবক্রাইব করুন । অন্যান্য সব তথ্য পেতে আমাদের ওয়েব সাইটের সাথে থাকুন ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button